রেমাক্রি থেকে নৌকায় গ্রুপিংপাড়ায় এলাম। গ্রুপিংপাড়া থেকে শুরু হলো আমাদের লিক্ষিয়াং ঝর্ণায় যাওয়ার আসল ট্রেকিং। পাড়া থেকে ভেতরে ঢুকে যেতেই জঙ্গল শুরু হলো। শুরুর পথটা ছিল মনোমুগ্ধকর। গ্রুপিংপাড়া থেকে সবাই লাইন ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম একজন লোকাল গাইডের নির্দেশনা মেনে। কিছুক্ষণ পরে সুউচ্চ গাছের শুকনো বন পেরিয়ে গেলাম। ১৫ মিনিট চলতে থাকলাম। কিছুটা সমতল পথে চলার পর ধীরে ধীরে আমরা উঁচুতে উঠতে শুরু করলাম।
২০ মিনিটের কাদাজলের পথ। ধপাস করে পড়ে গেলাম পিচ্ছিল পথে। এরপর সোজা ঝিরিপথের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলাম। ঝিরিপথ শুরু হলো। শুরুতে ঝিরিপথ ছিল নিরাপদ। ১৫ মিনিটের মধ্যেই সেই পথ ভয়ংকর এক পথে রূপ নিয়েছিল।
আমরা রোমাঞ্চকর পথে চলতে শুরু করেছিলাম। আমাদের সঙ্গে মোটামুটি তিনজন গাইড ছিল সেদিন। একজন আমাদের থানচির মূল গাইড, একজন গ্রুপিংপাড়ার লোকাল গাইড আর একজন ছিল ইন্টার্ন গাইড। প্রায় ৩০ মিনিট ঝিরিপথে চলার পর বিশাল একটা পাহাড়ের গোড়ায় গিয়ে সবাই একত্র হলাম। আমরা বুঝতে পারলাম, আসলে পাহাড়ে চড়া শুরু হবে। এরপর আরো খাড়া, সরু পাহাড়ি ট্রেইল ধরে বাঁশের সহায়তা নিয়ে, গাছের ডাল ও শিকড়ের সাহায্যে অনেকটা কষ্ট করে পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে সবাই বিশ্রাম নিতে বসে পড়লাম। আমরা সবাই হালকা খাবার, পানি, চা, খেজুর আর চকলেট দিয়ে নিজেদের সতেজ করে নিলাম। এরপর আবার উঠে পড়লাম।
এবার নামার পালা। তবে সেই পাহাড় বেয়ে নামাটা ছিল ওঠার চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর। প্রায় ২০ মিনিটের পথ। তারপর আবার ঝিরিপথ। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর একটা কাজুবাগান, দারুণ একটা জুমঘর, জুমের পাহাড় পেরিয়ে আবার শুরু হলো ঝিরিপথ। এরপর লিক্ষিয়াং পর্যন্ত সবটুকুই ঝিরিপথ। প্রায় পুরো ঝিরিপথই ছিল নানা রকম ছোট-বড়-মাঝারি পাথর, ঘন অরণ্য, ঘাস-লতাপাতায় অন্ধকারাচ্ছন্ন।
দুই ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গেছে আমাদের ঝিরিপথেই। সবাই যখন বেশ ক্লান্ত, প্রায় তিন ঘণ্টার কাছাকাছি সময় ট্রেক করা হয়ে গেছে। তখন কয়েকজনকে দেখা গেল, যারা লিক্ষিয়াং দেখে ফিরে আসছে। তাদের কাছে জানতে পারলাম, আর মাত্র ১৫-২০ মিনিট পথ চললেই পৌঁছে যাব আমাদের গন্তব্যে। দেশের সবচেয়ে উঁচু ঝর্ণাধারা লিক্ষিয়াংয়ের কাছে। কিন্তু সামনের পথটুকু আগের চেয়ে বিশাল বিশাল পিচ্ছিল পাথর পেরিয়ে, স্যাঁতসেঁতে অরণ্য দিয়ে যেতে হবে লিক্ষিয়াংয়ের পথে। অবশেষে বিশাল পাথর আর পুরোনো লতাপাতার ভেতর দিয়ে দূরে দেখা দিল দেশের উচ্চতম লিক্ষিয়াং ঝর্ণা।
সে অন্যরকম অনুভূতি, অদ্ভুত শিহরণ।
সজল জাহিদ