২০২২ সালে জার্মানি ৪১৫৮ জন অভিবাসীকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের পর নিবন্ধন করা প্রথম দেশে ফেরত পাঠিয়েছে৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় ট্যাবলয়েড পত্রিকা বিল্ড সাইটুং এই তথ্য জানিয়েছে৷ জার্মানির ফেডারেল অভিবাসন কার্যালয় বিএএমএফ এর হালনাগাদ পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে তারা এই খবর প্রকাশ করে৷
বিল্ডকে বিএএমএফ জানিয়েছে, মোট ৬৮ হাজার ৭০৯ জনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোর কাছে আবেদন করা হয়৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই আবেদন প্রত্যাহার করেছে দেশগুলো৷ ডাবলিন চুক্তির অধীনে এর আগে এত অনুরোধ প্রত্যাহার বা এত কম সংখ্যক অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটেনি৷
ডাবলিন চুক্তি
ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করা অভিবাসী ও শরণার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন দেশে আশ্রয় আবেদন করা থেকে বিরত রাখতে ২০১৩ সালে ডাবলিন চুক্তি করে দেশগুলো৷ চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থীরা প্রথম যে দেশে পৌঁছান সেখানে আবেদন করবেন৷
সাধারণত অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসীরা ইটালি, স্পেন, গ্রিস, মাল্টা ও সাইপ্রাসের মতো ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে প্রথম পৌঁছান৷ কিন্তু অনেকক্ষেত্রে সেসব দেশে তারা আশ্রয় আবেদন করতে চান না৷ জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন বা যুক্তরাজ্যের মতো অপেক্ষাকৃত ধনী দেশে পৌঁছানো অনেক অভিবাসীরই লক্ষ্য থাকে৷
নিয়ম অনুয়ায়ী কোন আশ্রয়প্রার্থীর তথ্য জানার তিন মাসের মধ্যেই তাকে ফেরত নিতে সংশ্লিষ্ট দেশের কাছে আবেদন করতে পারে সদস্য দেশগুলো৷ এই সময়ের মধ্যে আবেদন করা না হলে অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থী অবস্থান করা দেশে নতুন আবেদন করার সুযোগ পাবেন৷ যদি ইইউ সদস্যভুক্ত কোন দেশে আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যাত হয় এবং বসবাসের অনুমতি ছাড়া তিনি অন্য দেশে অবস্থান করেন তাহলে সেই দেশের কর্তৃপক্ষ প্রথম দেশকে ফেরত নেয়া ও বহিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করবে৷
এর জবাব দিতে অনুরোধপ্রাপ্ত দেশ দুই মাস সময় পাবে৷ এরপর ছয় মাসের মধ্যে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে৷ নয়ত অনুরোধ জানানো দেশের উপরই তার দায় দায়িত্ব বর্তাবে৷ তবে আইনগত জটিলতার ক্ষেত্রে এই সময়সীমা এক বছর থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত বাড়ানো যাবে৷
অন্য দেশে আবেদন করা আশ্রয়প্রার্থী ৫০ হাজার
এদিকে জার্মানিতে গত বছর আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে৷ ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজিসের (বিএএমএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে দুই লাখ ১৭ হাজার ৭৭৪ জন৷ এই সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় ৪৭ শতাংশ বেশি৷
আবেদনকারীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন সিরিয়ার মানুষ৷ গত বছর দেশটির ৭২ হাজার ৬৪৬ জন জার্মানিতে আশ্রয় আবেদন করেছেন৷ এরপর আছেন আফগানিস্তান (৪১,৪৭১), তুরস্ক (২৫,০৫৪), ও ইরাকের (১৬,৩২৮) মানুষ৷
বিএএমএফ জানিয়েছে, বছরজুড়ে দুই লাখ ২৮ হাজার ৬৭৩ টি আবেদনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তারা৷ এরমধ্যে ৪৯ হাজার ৩৩০ জনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং ৫০ হাজার ৮৮০ জন অন্য সদস্য দেশে এরইমধ্যে আবেদন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে৷
এখনও সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় আছেন এক লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৮ জন আবেদনকারী৷