১৯৮৫ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পায় খানজাহান আলীর অমর কীর্তি ‘বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ’। তুর্কি বংশোদ্ভুত উলুক খানজাহান আলী ইসলাম প্রচারে এসে বাগেরহাট শহরে আবাস গড়েন। এবং এই মসজিদটি হয়ে পড়ে তার শহরের কেন্দ্র। আদতে ৭৭টি মূল গম্বুজ এবং মিনারে থাকা ৪টি মিলিয়ে মোৎ ৮১ গম্বুজের মসজিদ এটি। এর অনন্য স্থাপত্যশৈলী ইসলামী স্থাপত্যকলার এক বিষ্ময়। খানজাহান আলীর মৃত্যুর পর বাগেরহাট তার জৌলুস হারালেও ষাট গম্বুজ মসজিদ এখনও টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।
১৯৮৫ সালেই ইউনেস্কোর তালিকায় স্থান করে নেয় আরেকটি ধর্মীয় নিদর্শন। বলা হয়ে থাকে, এদেশের আদি স্থাপনার মাঝে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার সবচেয়ে ইতিহাস সমৃদ্ধ। খ্রিস্টিয় ৭৭০ থেকে ৮১০ সালের মাঝে এই বিহারের নির্মাণ করেন পালবংশের ২য় রাজা ধর্মপাল। ১৮৭৯ সালে স্যার ক্যানিংহাম এই বিহার আবিষ্কার করেন। পাহাড়পুরকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার বলা হয়। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এটি বৌদ্ধদের ধর্মচর্চা কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হত। এমনকি চীন, তিব্বত, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে অনেক বৌদ্ধ এখানে এসে ধর্মচর্চা করেছেন।
আসল নাম সোমপুর বিহার হলেও স্থানীয় মানুষের কাছে এর পরিচিতি গোপাল চিতার পাহাড় হিসেবে। ভূমি থেকে ৩০ মিটার উঁচু এই স্থাপনার আন্তর্জাতিক নামটিও তাই রয়ে গিয়েছে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বলা হয় সুন্দরবনকে। বিপন্নপ্রায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং ইন্ডিয়ান পাইথনের আবসভূমি হিসেবে খ্যাত সুন্দরবন ইউনেস্কোর প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৯৭ সালে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের এই বনাঞ্চল এর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে এক বিষ্ময় হিসেবে রয়ে গিয়েছে জীববিজ্ঞানীদের কাছে। প্রায় ২৬০ প্রজাতির প্রাণিবৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবনের রয়েছে নিজস্ব এক পরিচিতি।
প্রতিবছর বাংলাদেশের পর্যটন খাতের একটি বড় অংশের যোগান দিয়ে থাকে এই সুন্দরবন। এমনকি স্থানীয় জনসাধারণের জীবিকার উৎস এই বন। অনেকের কাছেই তাই সুন্দরবনের আলাদা একটি ধর্মীয় মাহাত্ম্যও রয়েছে। যদিও নগরায়নের প্রভাবে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরের এই বনাঞ্চল একটু একটু করে ধ্বংস হচ্ছে প্রতিটি দিন।