বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় বিষয়। এই ব্যাপারে প্রচুর আলোচনা শোনা যায়। কেউ যদি কোনো কাজে দক্ষ হয়, সেক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করতে চেয়েও করতে পারেন না।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করবো, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো, ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যায়, ফ্রিল্যান্সিং কি ফুলটাইম জব হতে পারে – এসব প্রশ্নের উত্তর জানবো এই পোস্টে। আপনি যদি এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পুরোটা পরেন, তাহলে আশা করা যায় আপনি ফ্রিল্যান্সিং শেখার ব্যাপারে অনেকটাই এগিয়ে যাবেন।
মূলত অন্য কোনো ক্লায়েন্ট বা কোম্পানির কাজ কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে করাকেই বলা হয় ফ্রিল্যান্সিং। যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন, তাদের ফ্রিল্যান্সার বলা হয়। ফ্রিল্যান্সারদের স্বাধীন কন্ট্রাক্টর বা সেল্ফ-এমপ্লয়েড ওয়ার্কার নামেও ডাকা হয়।
অনেকেই মনে করেন ফ্রিল্যান্সিং করে হাজার হাজার ডলার আয় করা খুব সহজ। কিন্তু এজন্য আপনার প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকতে হবে। মার্কেটে যেসব স্কিল এর চাহিদা রয়েছে সেগুলো ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পারলে আপনি সত্যি সত্যি ফ্রিল্যান্সিং করে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং শেখার বা শুরু করার আগে অবশ্যই এর ভালো ও মন্দ, দুই দিক সম্পর্কেই ধারণা অর্জন করা একান্ত জরুরি। ফ্রিল্যান্সিং এর প্রধান সুবিধাসমুহ হলোঃ
ফ্রিল্যান্সিং এর উল্লেখযোগ্য কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমনঃ
ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে করার মত হাজার ধরনের কাজ থাকলেও সবকিছুই আপনি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আপনার উচিত এক বা একাধিক নির্দিষ্ট দক্ষতা বাছাই করে সেগুলোকে প্রাধান্য দিয়েই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা।
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে গেলে প্রথমত জানা দরকার কি কি ধরনের কাজ ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে করা যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক, ফ্রিল্যান্সিং কাজ এর ধরন ও বিভিন্ন প্রকার কাজের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এর সুযোগসমুহ সম্পর্কে বিস্তারিত।
ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে এমনকি অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদেরও এডমিনিস্ট্রেটিভ কাজে লোকবলের প্রয়োজন হয়, যার জন্য এসব ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে থাকে। এডমিনিস্ট্রেটিভ ফিল্ডে কিছু উল্লেখযোগ্য ফ্রিল্যান্সিং কাজ হলোঃ
মোবাইল অ্যাপ এর জনপ্রিয়তা বর্তমানে ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তার কাছকাছি বলা চলে। অ্যাপ এর বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে একাধিক ফ্রিল্যান্স অ্যাপ ডেভলপমেন্ট কাজ এর সুযোগ তৈরী হচ্ছে। কিছু উল্লেখযোগ্য অ্যাপ ডেভলপমেন্ট ফ্রিল্যান্স কাজ হলোঃ
স্ট্র্যাটেজি ও প্ল্যানিং এর ক্ষেত্রে অনেক ব্যবসারই সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। কনসাল্টিং এর কাজ এজন্য ফ্রিল্যান্সিং হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। জনপ্রিয় কিছু কনসাল্টিং ফ্রিল্যান্স কাজ হলোঃ
ব্যবসা ও জনপ্রিয়তা, উভয় দিক দিয়েই অনলাইন লার্নিং বা ই-লার্নিং অনেক জনপ্রিয়। যেসব প্রতিষ্ঠান ডেডিকেটেড ই-লার্নিং টিম ছাড়াই ই-লার্নিং সেক্টরে প্রবেশে আগ্রহী, তারা ফ্রিল্যান্সারদের সাহায্য নিয়ে থাকে। যেসব ই-লার্নিং বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যাবেঃ
গ্রাফিক্স ডিজাইন যেকোনো ব্র্যান্ডের পরিচিতির অন্যতম প্রধান বাহক। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের নিজেদের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে করিয়ে নেয়। গ্রাফিক্স ডিজাইন এর ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এর সুযোগসমুহ হলোঃ
ফটোগ্রাফি এর ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ফ্রিল্যাসিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে। ব্যবসা, পত্রিকা থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই ফটোগ্রাফার এর প্রয়োজন পড়ে। বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে ফটোগ্রাফি ফিল্ডে ফ্রিল্যান্সিং এর সুযোগ রয়েছে। যেমনঃ
ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে ভিডিও কিন্তু ফটোর চেয়ে কোনোদিকে কম জনপ্রিয় নয়। অডিয়েন্সকে হাই ভিজ্যুয়াল এক্সপেরিয়েন্স প্রদানের লক্ষ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানই ফ্রিল্যান্সার ভিডিওগ্রাফার হায়ার করে থাকে। কিছু ফ্রিল্যান্সিং ভিডিওগ্রাফি কাজ হলোঃ
ইন্টারনেট এর প্রসারের সাথে সাথে ওয়েব ডেভলপারের প্রয়োজনও বেড়ে চলেছে। তাই ওয়েব ডিজাইন থেকে শুরু করে কোডিং পর্যন্ত, সকল ক্ষেত্রেই ফ্রিল্যান্সার এর প্রয়োজন রয়েছে। একজন ফ্রিল্যান্সার যেসব ওয়েব ডেভলপমেন্ট সেবা দিতে পারেনঃ
রাইটিং বা লেখালেখি বিষয়ক অসংখ্য ফ্রিল্যান্সিং কাজ রয়েছে ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মসমুহে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট তাদের কনটেন্ট লেখার জন্য ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ফেসবুক পেজের পোস্ট ক্যাপশন থেকে শুরু করে কভার লেটার লেখা জন্যও ফ্রিল্যান্সার ভাড়া করে থাকে। কিছু লেখালেখি বিষয়ক ফ্রিল্যান্সিং কাজ হলোঃ
ফ্রিল্যান্সিং শেখা বলতে মুলত উপরে উল্লিখিত ফ্রিল্যান্সিং এর যেকোনো এক বা একাধিক ধরনের উপর দক্ষ হয়ে উঠা। অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনকেই ফ্রিল্যান্সিং শেখা বলা হচ্ছে।
ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে অবশ্যই দরকার পড়বে এক বা একাধিক দক্ষতার। সেইক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত যেকোনো এক বা একাধিক ফ্রিল্যান্সিং কাজের ধরন নির্বাচন করুন ও সেই বিষয়ে যথাসম্ভব সম্পূর্ণ দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন।
এখন কথা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য স্কিল অর্জন করতে কি করতে হবে? এই ব্যাপারটি অনেকটাই সহজ। বর্তমানে ইন্টারনেট এতোটাই তথ্য রয়েছে যে উপরে উল্লিখিত যেকোনো বিষয়ে সার্চ করলে খুব সহজেই অসংখ্য ফ্রি কোর্স ও গাইড পেয়ে যাবেন। এছাড়াও ইউটিউব থেকে খুব সহজেই বিনামূল্যে শিখে অর্জন করা যাবে যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য দক্ষতা।
বিনামূল্যে অনলাইন থেকে ফ্রিল্যান্সিং এর স্কিল অর্জন করার উপায় তো জানলাম। তবে আপনি যদি কম সময়ের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে চান ও পাশাপাশি কিছু অর্থ ব্যয় করতে দ্বিধাবোধ না করেন, সেক্ষেত্রে অনলাইন কোর্স এর ওয়েবসাইট বেশ কাজে আসবে। এসব ওয়েবসাইট খুব অল্প সাবস্ক্রিপশন ফি কিংবা বিনামূল্যে মানসম্মত সব বিষয়ভিত্তিক কোর্স অফার করে থাকে।