ডেনমার্কে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে এই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ডেনমার্কের ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দলটি এই বিল প্রস্তাব করে। এই বিলে ডেনমার্কে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার পরিবর্তে তৃতীয় কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখা হয়।
বিলের পক্ষে যুক্তি হিসেবে ক্ষমতাসীন দল বলেছে, তৃতীয় কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য একটি শরণার্থী ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্রবিহীন শরণার্থীদের আবেদনপ্রক্রিয়া বিবেচনা করা হবে। দলটি আরো দাবি করেছে, এই প্রক্রিয়া চালু হলে শরণার্থীদের ইউরোপে যাওয়ার জন্য নৌকায় চড়ে বিপজ্জনকভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে হবে না, সেই সঙ্গে শরণার্থীদের শোষণ করার জন্য মানবপাচারকারীদের অনৈতিক ব্যবসাও রোধ করা যাবে। বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপিত হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস হয়।
ডেনমার্কের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর)। কমিশন ডেনমার্কের পার্লামেন্টকে এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট না দিতে অনুরোধ করেছিল। জাতিসংঘের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, রেডক্রস এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো সংস্থাও এ বিলের সমালোচনা করেছে। সমালোচনায় তাঁরা বলেছেন, ডেনমার্কের পার্লামেন্টে উত্থাপিত বিলটিতে মানবাধিকার কিভাবে সুরক্ষিত হবে, সে বিষয়ে কোনো বিবরণ বা ব্যাখ্যা দেওয়া নেই।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের ডেনমার্ক পর্যন্ত আসতে হবে। ডেনমার্ক আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন বিচার বিবেচনা করে আফ্রিকার তৃতীয় কোনো দেশে পাঠাবে। অর্থাৎ শরণার্থীদের আফ্রিকার নির্ধারিত দেশে যেতে হলে নৌকায় চড়ে ইউরোপে যাওয়ার জন্য বিপজ্জনক ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েই ডেনমার্ক যেতে হবে। তা ছাড়া কোনো শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হলে তাকে সরাসরি ডেনমার্কে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
শরণার্থীকে সেই আফ্রিকান দেশ অথবা জাতিসংঘের কোনো শরণার্থী ক্যাম্পেই থাকতে হবে। আর আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হয়ে গেলে আফ্রিকান ওই দেশকেই শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ডেনমার্ক ওই শরণার্থীদের দায়িত্ব নেবে না। এ বিষয়গুলো যদি বাস্তবে রূপ পায়, তাহলে ভবিষ্যতে ডেনমার্কে কোনো শরণার্থীই আশ্রয় পাবে না। তবে জাতিসংঘের নির্দিষ্ট কোটা অনুযায়ী শরণার্থীদের গ্রহণ করবে ডেনমার্ক।