পৃথিবীর ইতিহাসে সমৃদ্ধতম, বিখ্যাত ও অদ্ভুত সব রীতিনীতির ধারক হিসেবে পরিচয় দেয় (Inca Civilization)। আর এই ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া একটি আধুনিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন শহর হচ্ছে মাচু পিচু (Machu Picchu)। যা বর্তমান বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি। কেউ কেউ এটিকে সূর্যনগরীও বলেন। স্প্যানিশ ভাষায় এই শব্দটির উচ্চারণ করা হয় মাত্সু পিৎসু। যার অর্থ প্রাচীন চূড়া। তবে মাচু পিচু উচ্চারণই অধিক প্রচলিত। ইতিহাসবিদদের গবেষণায় এ শহর সম্পর্কে অজানা সব তথ্য উঠে এলেও অনেক রহস্য এখনো পর্যন্ত অধরাই রয়ে গেছে।
মাচু পিচু শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৪০০ মিটার (৭,৮৭৫ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। অর্থাৎ আমাদের দেশের সর্বোচ্চ চূড়া তাজিন ডং (১২৩১ মিটার) এর প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরটি। এত উঁচুতে কীভাবে তারা এই শহরটি নির্মাণ করেছিল সেটাই সবচেয়ে বড় রহস্য। তাও আবার শত শত বছর পূর্বে। যখন কিনা ইনকাদের মধ্যে চাকার ব্যবহার প্রচলিত ছিল না। তাহলে এতো উঁচুতে পাথর উঠিয়েছিল কিভাবে! যা দিয়ে এই শহর নির্মাণ করা হয়েছিল! ধারণা করা হয় শত শত শ্রমিক পাহাড়ের ঢালু জাইগা দিয়ে ঠেলে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল এই সব পাথর।
শহরটিতে ১৪০ টি স্থাপনার মধ্যে এখনো সবকটিই টিকে আছে। এটি নির্মাণ করতে কোন প্রকার সিমেন্ট বালুর ব্যবহার না করায় ভূমিকম্পেও এর কোনপ্রকার ক্ষতি হয়নি। এটি নির্মাণ করতে প্রয়োগ করা হয়েছিল সমসাময়িক কালের সবথেকে সূক্ষ্ম এবং বিখ্যাত বাস্তুবিদ্যার কৌশল।
এখানে বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে রয়েছে কিছু মন্দির, পবিত্র স্থান, উদ্যান এবং আবাসিক ভবনসমূহ। মাচু পিচুতে রয়েছে ১০০টিরও বেশি সিঁড়ি যার মধ্যে কিছু কিছু সিঁড়ি নির্মিত হয়েছে একটি মাত্র গ্রানাইট পাথরের খণ্ড দিয়ে। এখানে আরও রয়েছে প্রচুর সংখ্যক ঝরনা, যেগুলো পাথর কেটে তৈরি করা ছোট ছোট খালের মাধ্যমে পরস্পর সংযুক্ত এবং এসব মূলত সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়াও এই সেচব্যবস্থা ব্যবহার করে একটি পবিত্র ঝরনা থেকে প্রতিটি বাড়িতে পানি সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এরপর থেকে আস্তে আস্তে মাচু পিচু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। এটিকে পেরুর সরকার ১৯৮১ সালে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা প্রদান করে।
তথ্য সূত্র: ইন্টারনেট