১২ এপ্রিল (শুক্রবার) আলবেনিয়ার বিশেষ কার্যালয়ের (স্পাক) বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে ইটালির বার্তা সংস্থা আনসা৷
সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীদের ইইউর বিভিন্ন দেশে পাচারে জড়িত সন্দেহে মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে ১১ জন উদ্যোক্তা, তারা উৎপাদন খাতে কর্মরত৷
তাদের মধ্যে ৫৩ বছর বয়সি এক ইটালীয় নাগরিককে আলবেনিয়ার ভ্যালোনা শহর থেকে আটক করা হয়েছে৷
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চক্রটি অভিবাসীদের বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা পেতে সাহায্য করত৷ এরপর সেখান থেকে কাজের ভিসায় আলবেনিয়ায় নিয়ে আসত৷
তিরানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরে অভিবাসীদের সহায়তা করতে সীমান্ত পুলিশের বেশ কিছু কর্মকর্তাকেও হাত করেছিল অপরাধী চক্রটি৷ পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে চার সদস্যকেও আটক করা হয়েছে৷
এছাড়া দুই অপরাধী সংগঠনের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের সময় পুলিশ কর্মকর্তারা অস্ত্র, জাল নথি এবং নগদ প্রায় ১০ লাখ ইউরো জব্দ করেছে৷
২৫৩ বাংলাদেশি পাচার
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে কর্মরত আলবেনিয়ার বিশেষ দপ্তর (স্পাক) এই চক্র দুটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রমাণ সাপেক্ষে তদন্ত শুরু করে৷
স্পাকের তদন্তকারীরা বিশেষ আদালতের বিচারকের সামনে বলেন,
আলবেনিয়ায় বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত আইন কাজে লাগিয়ে একটি অপরাধমূলক গোষ্ঠী সংগঠিত করেছিল অভিযুুক্তরা৷ এভাবে তারা মোট ২৫৩ জন বাংলাদেশিকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ডি ক্যাটাগরির কাজের ভিসায় আলবেনিয়ায় আসতে সহায়তা করে৷ এছাড়া ইরান ও পাকিস্তানের নাগরিকদেরও টার্গেট করেছিল তারা৷
আদালতের বিচারক ফ্লোরা হাজরেদিনাজকে স্পাকের দুই তদন্তকারী এন্ড্রি সেতি এবং লুয়ান তাফাল্লা বলেন, চক্রটি ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল লিংক’ নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির সহায়তায় অভিবাসীদের গ্রাহক হিসেবে খুঁজে বের করত৷ পরবর্তীতে আন্তোনিও স্পেসিয়ন, জুলজেটা সিপা এবং আর্তুর মাতা নামের তিন ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট বের করত৷ এছাড়া আরো বেশ কিছু রেস্তোরাঁ ও হোটেল মালিক তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করত৷
সবশেষ ভিসার জন্য যাবতীয় প্রশাসনিক নথি বের করতে নেটওয়ার্কটিকে সহায়তা করত সীমান্ত পুলিশের চার কর্মকর্তা৷ স্পাক বিভিন্ন নজরদারি ডিভাইস, ওয়্যারট্যাপিং এবং অন্যান্য তদন্তের মাধ্যমে পুর প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছে৷
তদন্তের এক পর্যায়ে, দুবাই হয়ে আলবেনিয়ায় কাজের ভিসায় আসা এক বাংলাদেশি যাত্রীর সাথে একটি ট্র্যাকিং ডিভাইস যুক্ত করে দেয়া হয়েছিল৷ যদিও শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, অভিবাসীরা আলবেনিয়া কাজ না করে, আসার পরপরই ইইউর অন্য দেশের দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করত৷
আলবেনিয়া থেকে সেন্ট্রাল ইউরোপ
অভিবাসীদের কাছ থেকে জনপ্রতি পাঁচ হাজার ইউরোর নিয়ে তাদের বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অনিয়মিত পথে নিয়ে আসার ব্যবস্থা নিত এই অপরাধী চক্রটির সদস্যরা৷ তারা অভিবাসীদের পরবর্তী যাত্রার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট পেতেও সহায়তা করেছিল৷
এই চক্রের বেশ কিছু সদস্যকে তিরানা বিমানবন্দরে নিয়োগ করা হয়েছিল৷ সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা অভিবাসীদের স্বাগত জানিয়ে অভিবাসীদের কসোভো সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হতো৷
কসোভো থেকে কাঙ্ক্ষিত ইইউ দেশে সংশ্লিষ্টরা তাদের যাত্রা অব্যাহত রাখত৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আলোচিত ‘বলকান রুট’ এর অন্যতম প্রধান দেশ আলবেনিয়া৷ এই রুট ব্যবহারকারী অভিবাসীদের বেশিরভাগই এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তবে এসব ব্যক্তিদের অনেকেই দীর্ঘ সময়ের জন্য আলেবনিয়ায় আটক থাকেন৷
ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে আলবেনিয়া কর্তৃপক্ষ নয় হাজার অনিয়মিত অভিবাসী শনাক্ত করেছিল৷
ইনফোমাইগ্রেন্টস