পর্যটন শহর হিসেবে শ্রীমঙ্গলের নামটি সবসময় প্রথম সারিতেই থাকে। মৌলভীবাজার জেলার শুধু এই একটি উপজেলাতেই রয়েছে ৪০টি চা বাগান। শুধু কি চা বাগান, শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানও রয়েছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাইক্কাবিল, মাধবপুর লেক, হাম হাম ঝর্ণা তারমধ্যে অন্যতম।
এই শহর ঘুরে দেখবার জন্য বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে অনেকগুলো হোটেল রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এখানে পাঁচ তারকা গ্র্যান্ড সুলতানের মতো প্রাসাদসম রিসোর্ট যেমন রয়েছে, তেমন সুলভ বাজেটের কিছু ছোট ছোট রিসোর্টও আছে। নভেম ইকো রিসোর্টটি তার মধ্যে অন্যতম। সময়ের সাথে সাথে এই রিসোর্টটি পর্যটকদের খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছে। সে কারণে এই রিসোর্টে রুম খালি পাওয়াটাই মুশকিল।
শ্রীমঙ্গলের রাধানগরের রাস্তা ধরে নভেম ইকো রিসোর্টে যেতে হয়। একেবারেই নিরিবিলি এলাকায় ছোট্ট দুটো টিলার উপর গড়ে তোলা হয়েছে এই রিসোর্ট।
দুটো ছোট টিলাকে নকশায় রেখে নির্মিত হয়েছে রিসোর্টটি। তাই টিলার মাঝের জায়গাটুকু আগের মতোই রাখা হয়েছে। সবুজ পাহাড় ঘেরা মাঠটিতে রিসোর্টের কিচেন ও খাবার ঘর। এই দুই টিলার মাঝে সংযোগ করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি ব্রীজ। আর এই ব্রীজটিই রিসোর্টটির “ট্রেড মার্ক” হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিলার গায়ে চমৎকার কাঠের ব্রীজ পার হয়ে যেতে হবে মূল রিসোর্টের থাকার অংশে।
অনেক রকম থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এই রিসোর্টটিতে। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাঠের কটেজ দুটো। কাঠের এই কটেজ দুটি খুবই দৃষ্টিনন্দন। এর ভিতরের ইন্টেরিয়রও খুব সুন্দর। এই কাঠের কটেজগুলোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে এই রুমের সাথেই রয়েছে একটি ছোট প্রাইভেট সুইমিং পুল। রিসোর্টে সবার ব্যবহার যোগ্য আরো একটি সুইমিংপুল রয়েছে।
পাহাড়ের উপর চমৎকার সূর্যাস্ত দেখা যায় রুম থেকেই। এখানে রয়েছে নিজস্ব বার-বি-কিউ করার জায়গা। এখানে কটেজের ভাড়া সবচেয়ে বেশি। প্রতি রুমের নিয়মিত ভাড়া ১১,০০০ টাকা। তবে মাঝে মাঝে বেশ বড়সড় ছাড় দেয় রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ, যেটা তাদের ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেইজ থেকে জানা যাবে।
এখানে মাড হাউজ নামে কাদা দিয়ে তৈরি একটি রুম আছে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘরের সাথে মিল রেখে বানানো এর ঘরের বিছানাও কাদা দিয়ে তৈরী করা। তবে বাথরুম এবং ঘরের প্রয়োজনীয় সব আসবাব আধুনিক। এই রুমটিতে দুইজন থাকা যাবে আর এর নিয়মিত ভাড়া ৫,৫০০ টাকা।
ডুপ্লেক্স ফ্যামিলি ভিলাটা বানানো হয়েছে বড় পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবের গ্রুপের কথা মাথায় রেখে। এ ভিলাটার দুই তলায় মোট ৪টি বেড আছে যার মধ্যে ২টি ডাবল বেড আর ৩টি সিংগেল বেড, সাতজন সহজেই থাকতে পারবেন। এই ডুপ্লেক্স ছোট্ট বাড়িটি ১,৪১৫ স্কয়ার ফিট, বাথরুম আছে দুটি যার একটি কমন আর অন্যটি এটাচড। বাইরের পাহাড়ে আনারসের চাষ হয়, সে পাহাড়টা দেখতেও অনেক সুন্দর। এই ভিলাটির ভাড়া ১৭,৫০০ টাকা।
এছাড়া রিসোর্টের মূল ভবনে বেশ কয়েক ধরনের রুম আছে। সামনেই সুইমিংপুল, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, আর রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া রিসোর্টের আরেকটি টিলার উপর রয়েছে চমৎকার একটি কাপল ভিলা। এই ভিলাটার চারপাশে দেখা যায় পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য।
ক্যাম্পিং বর্তমানে বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চাইলে এই রিসোর্টে তাবুর স্বাদও নিতে পারেন। পাহাড়ের ঢালের উপর আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন একটি তাঁবু রাখা আছে রিসোর্টটিতে।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল ট্রেনে অথবা বাসে করে যেতে পারবেন। চাইলে গাড়ী নিয়েও পৌঁছানো যায়। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে সিএনজিতে করে পৌঁছে যেতে পারবেন নভেম ইকো রিসোর্টে।