আমাজনের ব্যবসা বাড়ানোর পাশাপাশি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে ২৫ কোটি ডলারে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকাটি কিনে নেন বেজোস। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকাটি
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ২০১৩ সালে ২৫ কোটি ডলারে মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের মালিকানা কিনেছিলেন। এবার তিনি সংবাদমাধ্যমটি বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউইয়র্ক পোস্ট।
নিউইয়র্ক পোস্টের বরাতে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, ওই অর্থ দিয়ে ওয়াশিংটন কমান্ডার্স নামে একটি আমেরিকান ফুটবল দল কিনবেন বেজোস। ওই ফুটবল দল কেনার জন্য বেজোস “পথ পরিষ্কারের উপায় খুঁজছেন।”
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটন পোস্ট বিক্রি করবেন সংবাদমাধ্যমটির একজন নিয়ন্ত্রক। যদিও ওই সূত্রটি ওই নিয়ন্ত্রকের পরিচয় প্রকাশ করেনি।
তবে জেফ বেজোসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন ওয়াশিংটন পোস্ট বিক্রি করা হবে না। এছাড়া সংবাদমাধ্যমটির একজন মুখপাত্রও এটি অস্বীকার করেছেন।
বেজোস অসংখ্যার বলেছেন, কোনো সংবাদমাধ্যমের মালিক হওয়ার লক্ষ্য তার ছিল না। কিন্তু অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অনলাইনের পরিধি বাড়াতে ২০১৩ সালে ডোনাল্ড গ্রাহামের কাছ থেকে ওয়াশিংটন পোস্ট কিনে নেন তিনি। জেফ বেজোসের অধীনে ওয়াশিংটন পোস্টের পরিধি আরও বাড়ে। লাভের মুখ দেখে এটি।
এদিকে বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস গত বছরের নভেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, জীবদ্দশায় নিজের বেশিরভাগ সম্পত্তি দাতব্য সংস্থায় দান করে দেবেন।
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের জন্ম ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের আলবুকার্কে। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিকসের প্রতি ছিল তার ব্যাপক আগ্রহ। ১৯৬০-এর দশকের জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন সিরিজ “স্টার ট্রেক”-এর বিশেষ ভক্ত তিনি। স্কুলে পড়ার সময়েই নিজেদের বাড়ির গ্যারেজে তৈরি করেন একটি ছোট গবেষণাগার। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কীভাবে কাজ করে, তার খুঁটিনাটি জানতে দিনের বেশির ভাগ সময় ওই গ্যারেজেই পড়ে থাকতেন তিনি।
স্কুল ও উচ্চমাধ্যমিক পেরোনোর পর জেফ বেজোস নিজের প্রিয় বিষয় কম্পিউটার অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তি হন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৬ সালে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে প্রিন্সটন থেকে কম্পিউটার অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করেন তিনি। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি কোম্পানিতে কাজ করেন। ডিই শ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় তার মাথায় ঘুরতে থাকে ইন্টারনেটের অপার সম্ভাবনার কথা। ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে নতুন কী ব্যবসা দাঁড় করানো যায়, তখন সেটিই ছিল তার মূল ভাবনা।
১৯৯৪ সালে ডিই শ-এর চাকরি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে চলে যান তিনি। সেখানে এক বছর গবেষণার পর নিজের বাড়ির গ্যারেজে ১৯৯৫ সালের ১৬ জুলাই প্রতিষ্ঠা করেন আমাজন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে বই বিক্রি করাই ছিল বেজোসের প্রথম ব্যবসা। প্রথম এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪৫টি দেশে অনলাইনে ২০ হাজার ডলার বা ১৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করে আমাজন। সে সময় অনলাইনে বইয়ের এমন বিক্রি ছিল অনেকটা অভাবনীয়।
এরপর শুরু হয় আমাজনের জয়যাত্রা। ১৯৯৮ সালে বইয়ের বাইরে গান ও সিনেমার সিডি বিক্রি করতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৭ সালে ডিজিটাল মাধ্যমে বই পড়ার যন্ত্র “কিন্ডেল” বাজারে নিয়ে আসেন বেজোস।
বেজোস প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবেও পরিচিত। ২০০০ সালে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন প্রতিষ্ঠা করেন। নিত্যনতুন উপায়ে আমাজনের ব্যবসা বাড়ানোর পাশাপাশি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে ২৫ কোটি ডলারে “ওয়াশিংটন পোস্ট” পত্রিকাটি কিনে নেন তিনি। বেজোস দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকাটি। বেজোস এক্সপেডিশন নামে ব্যক্তিগত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করেন বেজোস। গুগলে প্রথম দিককার বিনিয়োগকারী হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে।