অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজের লেবার পার্টির সরকার ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসননীতিতে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেছে। গত মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভিসা ব্যাকলগ মোকাবিলাও শুরু করেছে তারা।
২০২৩ সালে ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে। সরকার দক্ষ অভিবাসন পেশার কার্যকারিতা বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
দক্ষ অভিবাসন পেশার সর্বশেষ আপডেটটি ২০১৯ সালের ১১ মার্চ করা হয়েছিল।
ক্ষমতায় আসার পরপরই লেবার সরকার ২০২২-২৩ সালে দক্ষ ও পারিবারিক ভিসার জন্য স্থায়ী মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৯৫ হাজার করার ঘোষণা দেয়।
অক্টোবরের বাজেটে বলা হয়েছে যে, প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে উপলব্ধ দক্ষ ভিসার সংখ্যা ৭৯ হাজার ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪০০ করা হবে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো থেকে যোগ্য অভিবাসীদের জন্য ৩ হাজার ভিসার নতুন প্রোগ্রাম আগামী জুলাইয়ে চালু করা হবে।
অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের জায়গাগুলোয় এই ভিসা দেওয়া হবে।
নতুন বছরে নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কিছু ভিসা দেওয়া হবে।
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী নিউজিল্যান্ডবাসীরা দক্ষ স্বাধীন ভিসা আবেদনের অগ্রাধিকার প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।
ইমিগ্রেশন বিভাগ ভিসার কয়েকটি শর্ত বাদ দিয়েছে। আগে আবেদনকারীদের অবশ্যই কমপক্ষে ৫ বছর অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে ও নির্দিষ্ট করযোগ্য আয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের মানদণ্ড পূরণ করতে হতো।
যাদের নিউজিল্যান্ড স্ট্রিম ভিসা দেওয়া হচ্ছে তাদের নাগরিকত্বের পথও এ মাসের ১ তারিখ থেকে দ্রুত ট্র্যাক করা হবে।
বৃহত্তর আঞ্চলিক বরাদ্দের জন্য রাজ্য ও অঞ্চলগুলোর মাধ্যমে ভিসার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
কয়েকটি রাজ্য শ্রমিক ঘাটতির কারণে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের জন্য ভিসা সিস্টেমগুলোকে দ্রুততর করতে সরকার বেশকিছু নিয়ম সহজ করছে।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন, ২০২৩ সালে রাজ্য ও অঞ্চলের জন্য ৩১ হাজার ভিসার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রাজ্য ও অঞ্চলের জন্য ব্যবসায়িক উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগের জন্য আরও ৫ হাজার ভিসা দেওয়া হবে।
করোনা মহামারির কারণে নাটকীয়ভাবে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন সংখ্যা প্রভাবিত হয়। এর আগে রাজ্যগুলোকে ২৫ হাজার ৩৪৬টি মনোনীত ভিসা ও ৬৪৭টি দক্ষ আঞ্চলিক ভিসা দেওয়া হয়েছিল।
আলবেনিজ সরকার নতুন বছরে অংশীদার ভিসার নিয়ম শিথিল করে পরিবারগুলোর পুনর্মিলন সহজ করেছে।
ইস্যুকৃত এই ভিসার সংখ্যার কোনো সীমা নেই। বিভাগটি অনুমান করছে যে, এটি এই আর্থিক বছরে প্রায় ৪০ হাজার ৫০০ পার্টনার ভিসা ইস্যু করবে।
৩ হাজারের বেশি চাইল্ড ভিসা দেওয়া হবে।
শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দক্ষ ভিসার আবেদনগুলো এখন মূল্যায়ন করা হচ্ছে মাত্র ৩ দিনের মধ্যে।
অস্থায়ী ও স্থায়ী দক্ষ ভিসা আবেদনের জন্য অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থাকা আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সরকার ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার ভিসা ব্যাকলগের কারণে এক সময় প্রায় ১০ লাখ আবেদন প্রক্রিয়াধীন ছিল। এখন তা নেমে এসেছে ৬ লাখে।
ইমিগ্রেশন, সিটিজেনশিপ ও মাল্টিকালচারাল অ্যাফেয়ার্সমন্ত্রী অ্যান্ড্রু গাইলস বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্র দপ্তরে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া বাড়াতে ৪০০ জনেরও বেশি অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বাইরে আবেদনকারী ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা একদিনেরও কম সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করা হচ্ছে।’
অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কোনো এজেন্ট বা কোনো সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া যায় না। ভিসার ব্যাপারে কেউ আশ্বাস দিলে তা বিশ্বাস করার সুযোগ নেই। ভিসা পেতে আগ্রহীদের অবশ্যই নিজেদেরকে অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেশনের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে https://immi.homeaffairs.gov.au/ গিয়ে আবেদন করতে হবে।
আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী লেখক, সাংবাদিক