যখন বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোর একাংশের জনগণের স্বপ্নের ঠিকানা আমেরিকা, তখন সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে আমেরিকার নাগরিকেরাই দেশ ছেড়ে পরিবার নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন অন্য দেশে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আমেরিকা থেকে মানুষ সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন ইউরোপে। সেখানকার বিভিন্ন দেশে গিয়ে তারা নতুন জীবন শুরু করে মাতৃভূমির মায়া কাটিয়ে ফেলছেন অনায়াসেই।
পরিসংখ্যান বলছে, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, ডেনমার্কে, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, চেক রিপাবলিকসহ বেশ কিছু ইউরোপের দেশ বিশাল সংখ্যক আমেরিকার নাগরিকদের স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দিয়েছে। ব্রিটেনে বসবাসকারী আমেরিকানদের সংখ্যা ২০১৩ সালে ছিল ১ লক্ষ ৩৭ হাজার, ২০২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার।
আমেরিকার নাগরিকদের ইউরোপে চলে যাওয়ার নেপথ্যে উঠে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ,অনেকের মতে, আমেরিকায় মানুষের জীবনযাত্রার মান আগের চেয়ে খারাপ হয়ে গেছে। স্বচ্ছন্দে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারছেন না অনেকেই। উন্নত জীবনধারার খোঁজে তাই ইউরোপে যাচ্ছেন তারা।
আরেকটি কারণ হলো, আমেরিকায় বাড়িভাড়া বা থাকার খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে, বেড়েছে জমির দামও। নাগরিকদের বেতন সেই অনুপাতে বাড়েনি। ইউরোপের দেশগুলোতে এই খরচ অপেক্ষাকৃত কম।
আমেরিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও নাগরিকদের দেশ ছাড়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই দেশের রাজনৈতিক ডামাডোলে বিরক্ত। তবে এ ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে নাগরিকদের দেশছাড়ার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
আমেরিকার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন— এমন প্রতিজ্ঞা করে বসেছিলেন নাগরিকদের অনেকেই। ২০১৬ সালে ট্রাম্প দেশটির প্রেসিডেন্টে নির্বাচিত হলে কেউ কেউ সত্যিই দেশ ছাড়েন। বারাক ওবামার আমলে ১১ শতাংশ, ট্রাম্পের আমলে ১৬ শতাংশ আমেরিকান ইউরোপে স্থায়ী হয়েছেন। ২০২২ সালের মধ্যে এই পরিমাণ বেড়ে ১৭ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে।
আমেরিকায় কর্ম ঘণ্টা ইউরোপের চেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকায় চাকুরিজীবীদের কাজের গড় সময় বছরে ১,৮১১ ঘণ্টা, অন্যদিকে ইউরোপে এক বছরে ১,৫৭১ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
আমেরিকা ছাড়ার নেপথ্যে একটি বড় কারণ হল বর্ণবিদ্বেষ। কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের এখনও নিচু নজরে দেখে দেশটির সমাজের একাংশ। ২০২১ সালে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর দেশটির অনেক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ইউরোপে চলে গিয়েছিলেন।
তবে আমেরিকা থেকে ইউরোপে গিয়ে সেখানে স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে করোনা পরবর্তী সময়ে। আমেরিকায় থাকার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই। মহামারির পর দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও নড়বড়ে হয়ে সরকারের ওপর ঋণের বোঝা চেপেছে। দেউলিয়া হয়েছে একের পর এক জনপ্রিয় ব্যাংক।অনেকেই তাই অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। ইউরোপে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ইন্ধন জুগিয়েছে সরকারের এই অর্থনৈতিক জটিলতা।
ইউরোপের যে দু’টি দেশকে অনেক বেশি সংখ্যক আমেরিকাবাসী নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের জন্য বেছে নিয়েছেন, সেগুলো হল পর্তুগাল এবং স্পেন। এছাড়া, অন্য ইউরোপীয় দেশেও আমেরিকানদের ভিড় নিয়মিত বাড়ছে।