যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন প্রকৌশল, জেনেটিকস ও জৈবপ্রযুক্তির মতো বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। কথা হলো আরিয়ান রাশেদের সঙ্গে। বাংলাদেশের এই তরুণ এ বছরই যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস বোস্টনের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। বলছিলেন, ‘এখানে এসে দেখছি, জ্যোতির্বিদ্যা বা ডেটা সায়েন্সের মতো জটিল ও আধুনিক বিষয়ের প্রতিও শিক্ষার্থীরা আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমার এক মার্কিন বন্ধু পড়ছে মনোবিজ্ঞানে। ও বলছে, মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীদের এখন অনেক চাহিদা। ভবিষ্যতে এটা আরও বাড়বে। জেনেটিকস, বায়োটেকনোলজির মতো বিষয় শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে। কারণ, জিনোম এডিটিং বা ক্যানসার নিরাময়ের গবেষণা সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। পদার্থবিজ্ঞান, গণিতের মতো বিষয়ও এখানকার শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়। আমার বন্ধু আহমেদ যেমন প্রথমে গেমিংয়ে স্নাতক কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। পরে পদার্থবিজ্ঞানে চলে গেছে। তবে যদি শুধু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি, এখানে মূলত সিএসই আর সাইকোলজি পড়তেই অন্য স্টেট থেকেও শিক্ষার্থীরা আসে।’
বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে পিএইচডি করেছেন নাদিম চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। বললেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিষয়গুলো বেশ বৈচিত্র্যময়। বর্তমানে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে। প্রযুক্তি খাতে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, উচ্চ বেতন এবং উদ্ভাবনী কাজ করার সুযোগ থাকায় অনেকে এ–সংক্রান্ত বিষয়ে পড়তে আগ্রহী। কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে জৈবপ্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যায় গবেষণার চাহিদাও বেড়েছে। ডেটা সায়েন্স এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনীতি এবং প্রযুক্তি খাতে ডেটা সায়েন্সের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শিক্ষার্থী এ বিষয়ে পড়াশোনা করছে। তবে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল, যন্ত্রকৌশল, পুরকৌশলের মতো বিষয়গুলো এখনো পছন্দের শীর্ষেই আছে। এর বাইরে বিভিন্ন সৃজনশীল বিষয়েও অনেক শিক্ষার্থীকে পড়তে দেখছি।’
যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক কামরুন নাহারের সঙ্গে কথা হলো। বললেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চাহিদা তো সব সময়ই ছিল, আছে। এর পাশাপাশি এখানকার শিক্ষার্থীরা অনেকেই দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। বিশেষ করে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের বিষয়ের চাহিদা বাড়ছে। কারণ, বর্তমান সময়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনকে গভীরভাবে বোঝার প্রয়োজন আছে। কূটনীতি বা গবেষণার ক্ষেত্রেও এই দক্ষতার চাহিদা বাড়ছে। জার্মানি, অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার বিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এ–সংক্রান্ত বিষয়েরই চাহিদা বেশি।’
অস্ট্রেলিয়ায় তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ বিজ্ঞান ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্স পড়ুয়া অনুপম দাস বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় নিজের আগ্রহকে যেমন গুরুত্ব দেয়, তেমনি কোন বিষয়ে বাজারে চাকরি বেশি, সেটাও মাথায় রাখে। বাণিজ্য ও মার্কেটিংয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ দেখি। আবার অনেকে একটু ব্যতিক্রম বিষয়ও বেছে নিতে চায়। আমার বন্ধু জোয়েলিজ যেমন ব্যাচেলরে অকুপেশনাল থেরাপি নিয়ে পড়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পড়ছে সানজুলা মাই। অস্ট্রেলিয়ায় এসব বিষয়ের চাহিদা অনেক। পরিবেশগত সমস্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণে অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চায়। আবার বৈশ্বিক পরিস্থিতি, করোনা–পরবর্তী বাস্তবতা মাথায় রেখে দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাঁদের পাঠ্যক্রমে বেশ দ্রুত পরিবর্তন আনছে।’
চীনের শিক্ষার্থীরা এখন কোন ধরনের বিষয়ের প্রতি আগ্রহী, জানতে যোগাযোগ করেছিলাম শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। বাংলাদেশের এই তরুণ চীনের চিংহুয়া ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন। শহিদুল বলেন, ‘চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইন্টারডিসিপ্লিনারি মেজরগুলো বেশি গুরুত্ব পায়। অর্থাৎ, ধরুন আপনি তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকসে ভর্তি হলেন। আপনাকে শুধু এর ছকে না বেঁধে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স বা সাসটেইনেবিলিটিও পড়ানো হবে। যদি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের মতো বিষয় পড়েন, তা-ও আপনাকে অন্য অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। ওদের পড়ালেখার সঙ্গে আসলে কর্মক্ষেত্রের দূরত্ব খুব কম। যেমন কম্পিউটার সায়েন্স যারা পড়ে, তারা ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সায়েন্স—এসব সম্পর্কেও ভালো ধারণা রাখে। তবে এককথায় যদি জানতে চান, আমি বলব, প্রযুক্তি–সংক্রান্ত বিষয়েই এ দেশে ছেলেমেয়েদের আগ্রহ বেশি।’