সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

বৈশ্বিক ভোক্তাবাজারে যেভাবে এশিয়ার উত্থান ঘটছে

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

এশিয়ার বাজারে দুর্যোগ ঘটছে। এই ঘটনাই এখন শিরোনাম হচ্ছে। এশিয়ার বিকাশকে রূপদান করে যেসব দীর্ঘমেয়াদি শক্তি, সেগুলো এই ডামাডোলে পড়ে যাচ্ছে আড়ালে। গত কয়েক সপ্তাহে এশিয়ার বাজার হঠাৎ লোকসানে পড়েছে। তবে সেই সঙ্গে একটা ইতিবাচক ব্যাপারও ঘটেছে। এশিয়ার ৪৮০ কোটি অধিবাসীর অর্ধেকের বেশি মানুষ প্রথমবারের মতো দৈনিক ১২ ডলার খরচ করার মতো ক্রয়ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। এই তথ্য পাওয়া গেছে ওয়ার্ল্ড ডেটা ল্যাবরেটরি থেকে।

এই মাইলফলকের গুরুত্ব এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এ ঘটনা দারিদ্র্য থেকে সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনধারায় উত্তরণকে চিহ্নিত করছে। এই ব্যক্তিরা এখন মোটরসাইকেল, গ্যাস স্টোভ এবং সৌন্দর্যপণ্যের মতো জিনিস কেনার জন্য টাকা খরচ করার কথা বিবেচনা করবে।

বৈশ্বিক ভোক্তাশ্রেণিতে এশিয়ানদের আধিপত্য তুলনামূলকভাবে একটি সাম্প্রতিক উন্নয়ন। ২০০০ সাল পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী ভোক্তাশ্রেণিতে আধিপত্য ছিল প্রধানত পশ্চিমাদের। তাদের মোট সংখ্যা ছিল ১৭০ কোটি।  ১৯৮০ সালে ৭০ শতাংশ ভোক্তাশ্রেণি ছিল ধনী ওইসিডি দেশগুলোর নাগরিক। ওইসিডি, মানে দ্য অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট–ভুক্ত দেশের সংখ্যা ৩৮। ওয়ার্ল্ড ডেটা ল্যাবরেটরির হিসাব অনুযায়ী আজ বিশ্বব্যাপী গ্রাহক শ্রেণির প্রায় ৬০ শতাংশ এশিয়ান। এশিয়ার বর্তমানে ২৪০ কোটি ভোক্তা রয়েছে। আগামী দশকে আরও ১০০ কোটি যুক্ত হবে। তার মানে বিশ্বের মোট ভোক্তার ৬৫ শতাংশ হবে এশিয়ান। কিন্তু এশিয়ান ভোক্তা বেশির ভাগই একজন নতুন পর্যায়ের ভোক্তা। তারা প্রতিদিন গড়ে ২০ ডলার খরচ করে। এর মানে হলো যে এশিয়ার মোট ব্যয়ক্ষমতা বর্তমানে ১৯ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের ব্যয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ।

এশিয়ায় ভোক্তাশ্রেণি দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। আবার ভোক্তা ব্যয়ের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে সীমিত। এই বৈসাদৃশ্য অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক ওয়ার্ল্ড কনজ্যুমার আউটলুক-এর হিসাবে, বিশ্বব্যাপী ভোক্তাশ্রেণির সম্প্রসারণে এশিয়া শীর্ষস্থান ধরে রাখবে। আসন্ন বছরে প্রত্যাশিত সাড়ে ১৩ কোটি ভোক্তার মধ্যে ১১ কোটি আসবে এশিয়া থেকে। তদুপরি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যয় করা প্রতিটি বাড়তি ডলারের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করবে এশিয়া।

ওয়ার্ল্ড ডেটা ল্যাবরেটরির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ভারত আগামী বছর ভোক্তাশ্রেণিতে লোক যোগ করার ক্ষেত্রে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে। চীনের ৩ কোটি ৩০ লাখ নতুন ভোক্তার তুলনায় ভারতের নতুন ভোক্তা হবে ৪ কোটি ৭০ লাখ। তাদের অনুসরণ করবে পাঁচটি প্রায়ই উপেক্ষিত এশিয়ান অর্থনীতি: ইন্দোনেশিয়া (৬০ লাখের বেশি), বাংলাদেশ (৪০ লাখের বেশি), ভিয়েতনাম (৪০ লাখের বেশি), ফিলিপাইন (৩০ লাখের বেশি) এবং পাকিস্তান (২৫ লাখের বেশি)। ২০২৪ সালের বিশ্বব্যাপী ভোক্তাশ্রেণির নেতাদের মধ্যে শীর্ষ সাতটি অবস্থান দখল করবে এশীয় দেশগুলো। তাদের পরেই থাকবে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মিসর।

এশিয়ার আরও ২৪০ কোটি মানুষ এখনো ভোক্তাশ্রেণিতে প্রবেশ করতে বাকি আছে। ২০৩৪ সালের মধ্যে জন্ম নেবে আরও ৩৩ কোটি শিশু। তার মানে পৃথিবীর মোট ভোক্তার অর্ধেকের বেশি। ওয়ার্ল্ড ডেটা ল্যাবের হিসাব অনুযায়ী ২০৩৪ সালের মধ্যে এশিয়া থেকে আসবে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ভোক্তা আর ১৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়তি ভোক্তা ব্যয়। উদীয়মান এশিয়ার অধিকাংশ দেশের এই পর্যায়ে আসা এখনো বাকি। চীন আর ভিয়েতনাম গত দশকেই তা অর্জন করেছে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া আর ফিলিপাইনের বেশি দেরি নেই (যথাক্রমে ২০২৭, ২০২৮ এবং ২০২৯ সালে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপাল প্রধান ভোক্তা দেশ হয়ে উঠতে ২০৩০ সাল লেগে যাবে।

এশিয়ার ভোক্তাশ্রেণি যথেষ্ট বাড়ছে। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির। এশিয়ার বাজারের সাম্প্রতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং আঞ্চলিক আর্থিক বাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই বিপদগুলো এশিয়ার ভোক্তা ভিত্তির প্রসারকে লাইনচ্যুত করবে না। হয়তো বিলম্বিত করবে।

কোভিড-১৯ মহামারির মতো বাধাগুলো এশিয়ার ভোক্তাশ্রেণির বৃদ্ধিকে ধীর করে দিয়েছে কিন্তু থামাতে পারেনি। উল্লেখিত সমস্যাগুলোও এশিয়ার ভোক্তাশক্তির দীর্ঘমেয়াদি উত্থানকে লাইনচ্যুত করবে না। এই বৃদ্ধির জন্য অন্তর্নিহিত কারণ দীর্ঘায়ু, উন্নত শিক্ষা এবং নগরায়ণ। এই দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনগুলো এশিয়ার গতিপথে যেকোনো স্বল্পমেয়াদি ধাক্কার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে।

তবে সব মিলিয়ে এই কথা বলা নিরাপদ যে চীন বয়োজ্যেষ্ঠ ভোক্তাবাজারের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকবে। এই সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১২ কোটি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বেড়ে প্রায় ১৮ কোটি হয়ে যাবে। সে তুলনায় তরুণ জেনারেশন জির বড় বাজার হবে ভারত। আজকে সে সংখ্যা ১৫ কোটি। ২০৩০–এর মধ্যে তা বেড়ে হবে সাড়ে ২১ কোটি। বৈশ্বিক ভোগ্যপণ্য কোম্পানিগুলোর উচিত এশিয়ার দিকে নজর দেওয়া। জনসংখ্যার হিসাব মাথায় না রাখলে সাধারণত হেরে যেতে হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com