বিয়ে করলে নানা সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন সরকার। তারপরও বেকারত্ব ও আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে বিয়ের প্রতি অনীহা বাড়ছে দেশটির তরুণ-তরুণীদের। দেশটির ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস’-এর সমীক্ষা বলছে, ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রথমবার বিয়ে করছেন এমন মানুষের সংখ্যা কমেছে ৪১ শতাংশ।
গত বছর রেকর্ড সংখ্যক কম বিয়ে হয়েছে চীনে। দেশটির সিভিল অ্যাফেয়ার্স-বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত মাসে জানিয়েছে, নতুন বিয়ের সংখ্যা গত ৩৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে গিয়ে ঠেকেছে। ৮ বছর ধরেই বিয়ের হার কমতির দিকে রয়েছে। গত বছর দেশটিতে মাত্র ৬৮ লাখ ৩০ হাজার দম্পতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে এবং চলতি শতকের প্রথম দশকে জন্ম নেওয়া নারীদের মধ্যে বিয়ে করার আগ্রহ বেশ কম। চীনের আদমশুমারি অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিয়ের গড় বয়স ছিল প্রায় ২৯ বছর, যা ২০১০ সালের তুলনায় চার বছর বেশি।
সংসার শুরু করতে অনীহা কেন? সমীক্ষা বলছে, পারিবারিক সহিংসতার ভয় বিয়ে না করার পেছনে বড় কারণ। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো, লিঙ্গ বৈষম্যের মতো কারণও রয়েছে।
লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ইয়ে ল্যু মনে করেন, চীনে কর্মক্ষেত্রে এখনো লিঙ্গ বৈষম্য ব্যাপকভাবে রয়ে গেছে৷ একজন নারীকে নিয়োগের ক্ষেত্রে তার সন্তানসম্ভবা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এবং মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রয়োজন পড়বে কিনা সেটা বিবেচনায় নেয়া হয়৷
ফলে অনেক নারী ক্যরিয়ার এবং পারিবারিক জীবনের মধ্য থেকে কোনো একটি বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি৷
ইয়ে বলেন, যখন নারীরা শিক্ষার পেছনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা বিয়ে এবং মাতৃত্বে প্রবেশের জন্য একটি বেশি বয়স অবধি অপেক্ষা করেন৷
এদিকে, চীনে বিবাহবিচ্ছেদের হারও বেশ কম। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নানা মহল। তাদের দাবি, কঠোর বিধিনিষেধ ফলেই কমেছে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা। বিবাহবিচ্ছেদ কঠিন হওয়ার প্রভাবও পড়েছে বিয়েতে অনাগ্রহ সৃষ্টিতে।
চীনের উত্তরের প্রদেশ সাংসির বাসিন্দা জিনহি হু। ২৯ বছর বয়সী এই স্কুল শিক্ষকের কাছে বিয়ের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না। যদিও তার বাবা-মা এ বিষয়ে তাকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। গত তিন বছরে অন্তত ২০টি ‘ব্লাইন্ড ডেটে’ পাঠিয়েছেন। এরপরও জিনহির জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তিনি বিয়ে করার আগ্রহ পাচ্ছেন না।
জিনহি হু বলেন, বিয়ে করা, না করা স্বাধীনতার বিষয়। সবার যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে করার প্রয়োজন নেই।
সূত্র: ডয়চে ভেলে