ব্রিটেন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিয়ের সংস্কৃতি। দেশটির শিশু ও পরিবার-বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিভিটাসের সমীক্ষার ফলাফল অনুসারে, এমন প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ২০৬২ সাল নাগাদ বিয়ের সংস্কৃতি অদৃশ্য হয়ে যাবে দেশটি থেকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমান অবস্থা বজায় থাকলে ২০৬২ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতি ৪০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে বিবাহিত দম্পতি থাকবে মাত্র একটি। তবে আশার কথা হলো, ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি বিয়ের হার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের তুলনায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিয়ের হার ৪৫ গুণ বেশি। আর দেশটিতে বসবাসরত ক্যারিবীয় অশ্বেতাঙ্গদের তুলনায় এই হার ৭১ গুণ বেশি।
ব্রিটেনের সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৯১ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বিয়ে করার হার কমেছে ৪৪ শতাংশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিয়ে না করে সিভিল পার্টনারশিপে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়লেও ব্রিটেনের জনশুমারির তথ্যে দেখা গেছে, এমন সম্পর্কে থাকা মানুষের সংখ্যাও কমছে।
ব্রিটেনে খ্রিস্টান, ইহুদি, মুসলমান, হিন্দু ও শিখ ধর্মে বিশ্বাসীদের বিয়ের হার ধর্মে অবিশ্বাসীদের তুলনায় ২৪ গুণ বেশি। আবার ধর্মে বিশ্বাসীদের তুলনায় অবিশ্বাসীদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ২১ শতাংশ বেশি।
ব্রিটেনের অফিস ফর ন্যাশন্যাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল ছিল ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম বছর, যখন বিবাহিত দম্পতির চেয়ে অবিবাহিত মা-বাবা বেশি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বিয়ের হারের ক্ষেত্রেও ২০২২ সালে সর্বনিম্ন সংখ্যক যুগল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ও আলতাব আলী ট্রাস্ট্রের ভাইস চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেখেছি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ইসলামিকভাবে বিয়ে করলেও তা ব্রিটেনের ম্যারিজ রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধন করার প্রবণতা কমে গেছে। এদেশে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি সন্তানরা ব্রিটেনের মুলধারার স্রোতে যাতে ভেসে না যায় সেজন্য ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধের চর্চার বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, বিলেতের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে একেকটি বিয়েতে গড়ে ন্যূনতম ১৫ হাজার থেকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত খরচ করার প্রবণতা বেশি। অনেক দম্পতি প্রচলিত সামাজিক রীতির কারণে ধারদেনা করেও বিয়ে করেন। পরে এই দেনার বড় বোঝা পারিবারিক কলহ ও সংসার ভাঙ্গার কারণ হয়।
ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ফখরুল ইসলাম খছরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্রিটিশ সরকার ২০১৩ সাল থেকে বিবাহিত দম্পতিদের জন্য প্রতি বছর বিবাহ ভাতা, মধ্য থেকে নিম্ন আয়ের বিবাহিত দম্পতিদের জন্য কর ছাড়ের সুযোগ দিলেও তা যুগলদের বিয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারেনি। পরিবর্তিত সামাজিক প্রেক্ষাপট ও মূল্যবোধের বিবর্তিত পরিস্থিতি নতুন প্রজন্মকে বিয়ে বিমুখীতায় ঠেলে দিচ্ছে।
গ্রেটার সিলেট অ্যাসোসিয়েশন কার্ডিফ রিজিওনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাদল আহমেদ বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত ব্রিটেনের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টিকে সামাজিক সংকট হিসেবে স্বীকার করা।