শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

পদ্মা বহুমুখী সেতু দিয়ে ট্রেন চলবে জুনে

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে আগামী জুনে। আর এ লক্ষ্যে জোর কদমে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও একইদিনে বাস ও ট্রেন চলাচল করবে বলে শুরুতে জানিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু করোনা মহামারির ফলে চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের দেশে ফেরত যাওয়া ও বাংলাদেশে ফিরে আসতে দেরি হওয়া, বহু নদী ও খালে ব্রিজ কালর্ভাট নির্মাণ, অতিবৃষ্টিসহ নানা কারণে রেলের কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়।

এ বিষয়ে পদ্মা লিংক রেল প্রকল্পের পিডি আফজাল হোসেন জানান, মূলত পদ্মা লিংক প্রকল্পটি ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ৩টি ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, যার ভৌত অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। দ্বিতীয় ভাগ মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। এ অংশের অগ্রগতি সব চেয়ে আশানুরূপ ৮৮ শতাংশ। আর শেষ ভাগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশ পড়েছে। এ অংশের অগ্রগতি ৫৫-৬০ শতাংশ।

তিনি জানান, তবে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী চলতি বছরের জুনে আমরা ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার ট্রেন চালাতে চাই। এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রেলপথের সার্বিক অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ, ট্র্যাক বসানোর কাজ প্রায় শেষ। তবে পদ্মা সেতুর ওপর ৩০ শতাংশ অংশে এখনো ট্র্যাক বসানোর কাজ বাকি রয়েছে- যা আগামী মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

আফজাল হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে মাওয়া অর্থাৎ পদ্মা সেতুর আগ পর্যন্ত রেলপথের সার্বিক অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। আর এ অংশের গড় আর্থিক অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।

তিনি জানান, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত মোট ১৪টি স্টেশন। এসব স্টেশনের কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এদিকে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর ওপর ব্রিজের কাজ প্রায় শেষের পথে। তবে ঢাকা থেকে গেণ্ডারিয়া পর্যন্ত কাজ বেশ কিছু বাকি রয়েছে। এখানে দয়াগঞ্জে দুটি আন্ডারপাস ও দুটি ব্রিজ হওয়ার কথা, কিছুটা কাজ এখনো বাকি। যেখানে ৩টি লাইন বসানোর কথা সেখানে ১টি লাইন বসানো হয়েছে। বাকি দুটি লাইন বসানোর কাজ চলছে। সেখানে এ অংশের কাজ কিছুটা পিছিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ৮২ কিলোমিটার পথে ট্রেন চালানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। যদি জুন মাসে এই ৮২ কিলোমিটারের কাজ শেষ না হয় তাহলে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কি.মি ট্রেন চলবে বলে নিশ্চিত করেন আফজাল হোসেন।

যদিও রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আগামী জুনের মধ্য পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। রেলমন্ত্রী জানান, আমরা ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙা পর্যন্ত প্রথম ধাপে ট্রেন চালাব। এ লক্ষ্যে রেলওয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, ২০২৪ সালের মধ্যে ঢাকা-যশোর পথে রেল চলাচল করবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের কাজ শেষ হয়েছে ৮৮ শতাংশ।

এদিকে রাজধানীর খুব কাছের হলেও ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে রেল যায়নি। মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলাও রেলের বাইরে। পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্প এসব জেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা নতুন করে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় আরেকটি প্রকল্প রেললিংকের অধীনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)।

এই রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। যদিও প্রকল্প নেয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। শুরুতে পদ্মা সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত ছিল না। পরে চায়না এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে বিলম্ব, ভায়াডাক্ট নির্মাণে ত্রæটি ইত্যাদি কারণে রেল প্রকল্পের কাজে বিলম্ব ঘটে। প্রথমে যানবাহনের সঙ্গে একইদিন রেল চালুর পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু রেললাইন বসানোসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হতে দেরি হওয়ায় রেলের কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়। পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে সরকারের সেতু বিভাগ। সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করার দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের।

বর্তমানে খুলনা, যশোরসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় রেল যোগাযোগ আছে। তবে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে এসব এলাকায় যেতে হয়। বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত দূরত্ব ৩৮১ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে যে রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমে যাবে। এখন রেলের হিসাবে, আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা থেকে খুলনা যেতে সময় লাগে ১১ ঘণ্টা। কিন্তু পদ্মা সেতু হয়ে যে রেললাইন করা হচ্ছে, তাতে উচ্চগতির ট্রেন চালানো সম্ভব। ফলে খুলনা-যশোরে ৪ ঘণ্টার মধ্যে যাওয়া সম্ভব। আর পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ চালু হলে সমগ্র উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো, এমনকি পায়রা ও মোংলা বন্দরও ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। এর ফলে জিডিপিতে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটবে বলে রেলমন্ত্রী জানান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com