মাইগ্র্যান্টদের চাপে জেরবার নিউইয়র্ক। আর দিন দিন পরিস্থিতি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। গোটা স্টেট জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই নব্য অভিবাসীরা। সর্বত্রই দেখা যায় তাদের। বিষয়টি নগরবাসী ততটা ভালোভাবে নিতে পারছে না। কিন্তু যারা এসেছে এই দীর্ঘপথ পারি দিয়ে তারাও কি খুব তুষ্ট!
এখন যখন বাস্তবতার মুখোমুখি, যে আশা-ভরসা নিয়ে তারা এসেছিলো তার যখন সন্ধান মিলছে না, মাথার ওপর সামান্য আচ্ছাদন মিলছে না, কবে হবে সব কিছু ঠিকঠাক নেই তার সুনির্দিষ্ট কোনো জানা পথ তখন ক্ষোভটাই বাড়ছে।
নিরাপত্তা ও সুন্দর জীবনের আশা নিয়ে নিউইয়র্ক সিটি এসেছিলেন ২৯ বছরের এক ভেনেজুলিয়ান নারী। নিজের পরিবার-পরিজনকে পেছনে ফেলে এসেছেন উন্নত জীবনে আশায়। কিন্তু তার সে স্বপ্ন দ্রুতই ভেঙে যায় নির্মম বাস্তবতার মুখে পড়ে। এখানে অজানা ভাষা, অজানা পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া এখন তার জন্য সত্যিই দুষ্কর।
নগরের রুজভেল্ট হোটেল এখন মাইগ্র্যান্টদের ইনটেক সেন্টার। সেখানে ৫৭৩০০ আশ্রয়প্রার্থীর ভিড়। টেক্সাস থেকে যাদের বাসে চাপিয়ে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে নিউইয়র্কে। গোটা নিউইয়র্কে এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লক্ষাধিক আশ্রয়প্রার্থী।
এরা সকলেই এখন কর্মসংস্থানের লড়াইয়ে সামিল। তাদের মৌলিক চাহিদাটুকু মেটাতে ব্যস্ত। নগরীর শেলটার হোমগুলোতে ঘুরে ঘুরেও পাচ্ছে না মাথা গোঁজার ঠাই। পরিবারের ভবিষ্যত পরিকল্পনাতো দূরের কথা, বর্তমান নিয়েই কোনো কূল-কিনারা করতে পারছে না।
এখানে পৌঁছানোর পর থেকে বরং উন্নত জীবনের স্বপ্নটাই যেনো উবে গেছে।
ইকুয়েডর থেকে এসেছেন ৪৮ বছর বয়ষ্কা এক নারী। সংঘাতময় দেশটি থেকে জীবন বাঁচাতেই তার আসা। দুই-মাস ধরে পথ চলতে চলতে অবশেষে এসে পৌঁছেছেন নিউইয়র্ক। কিন্তু এই শহরের শোরগোল দেখে নিজেই বিষ্মিত। ইচ্ছাপূরণতো দূরের কথা সামান্য স্বস্তিটুকুই মিলছেনা এখনো।
বরং শহরের মানুষগুলোর কাছে তারা যেনো বোঝা হয়েই উঠেছেন। শহরের অবকাঠামোগুলোর ওপর পড়েছে বাড়তি চাপ। প্রতিদিন শেল্টার হোমগুলোতে স্থান করে নিতে পারছে তিন হাজার জন। আর প্রতিদিনই গড়ে শহরে এসে পৌঁছাচ্ছে আরও ১০০০ মানুষ।
মেয়র এরিক অ্যাডামসতো স্বীকার করেই নিয়েছেন এর ফলে বড় আর্থিক বোঝা চেপেছে নগর কর্তৃপক্ষের ওপর। যার মোট খরচ ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এই এসে পড়া প্রতিটি মানুষকে আশ্রয় দিতে পারা এখন নগরের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ফলে কারো কারো রাত কাটছে ফুটপাতে কিংবা বাসস্টপে।