আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই রিফুয়েলিং সিস্টেম চালু করে নতুন মাইল ফলক অর্জন করলো কক্সবাজার বিমান বন্দর। রোববার ঢাকা থেকে আসা একটি উড়োজাহাজে জ্বালানি তেল সরবরাহের মাধ্যমে শুরু হলো এই যাত্রা।
গতকাল রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় দেখা যায়, কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। একদিকে সাগর ছুঁয়ে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে বাস্তবে রূপ পাচ্ছে, ঠিক তেমনি এগিয়ে চলছে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। যার কারণে এই বিমান বন্দরের ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণে। একই দিন দুপুর ২টা না বাজতেই দেখা যায়, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে একের পর এক উড়োজাহাজ নামছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৮৭ ফ্লাইট থেকে শুরু করে বেসরকারি বিমান সংস্থার প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাইট ওঠানামা করছে কক্সবাজার বিমান বন্দরে। দুপুর দেড়টার দিকে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে কক্সবাজার বিমান বন্দরে উদ্বোধন করা হয়েছে উড়োজাহাজে রিফুয়েলিং কার্যক্রম। পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃক কক্সবাজার বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে ১২শ’ লিটার জ্বালানি তেল সরবরাহের মাধ্যমে রিফুয়েলিং কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের অধিনায়ক (পরিচালন শাখা) এয়ার কমডোর মো. আসিফ ইকবাল, পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান, মহাব্যবস্থাপক (বিপণন), মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন ও পরিকল্পনা) এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক (এভিয়েশন) সহ পদ্মা অয়েল কোম্পানীর কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়াও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন বেসরকারি এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিবৃন্দ এ উদ্বোধনী রিফুয়েলিং কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন।
পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্বোধনী দিনে কক্সবাজার বিমান বন্দরে সিলেট ও ঢাকাগামী ৩টি ফ্লাইটে সরবরাহ করা হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ লিটার জ্বালানি। এখন প্রতিদিনই কক্সবাজার বিমান বন্দরে এ কার্যক্রম চালু থাকবে।
আগামীতে এ অঞ্চল রিফুয়েলিংয়ের হাব হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে এমনটিই জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ।
তিনি বলেন, পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড বহু বছর ধরে রিফুয়েলিং কার্যক্রম জড়িত রয়েছে। তাদের দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তাই কক্সবাজার বিমান বন্দরে উড়োজাহাজের রিফুয়েলিং ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রমের দায়িত্বটা তাদের দেওয়া হয়েছে। সে দায়িত্বটা গত (রোববার) পূর্ণাঙ্গভাবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, ‘কক্সবাজারের অর্থনৈতিক যে হাব বা বলতে পারি পর্যটনের হাব অথবা উন্নয়নের যে যাত্রাটা আগামীতে হতে যাচ্ছে সেটাকে কাভারেজ করতে গেলে এটা খুবই প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় রিফুয়েলিং হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে বা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যতো প্লেন যাবে তাদের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গা হবে কক্সবাজার। কারণ একেক সময় পৃথিবীর একেকটি জায়গা উঠে আসে। এক সময় হংকং তারপর সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক এখন দুবাই। কিন্তু বলতে পারি যে, ভবিষ্যতে কক্সবাজারই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কেন না খুব স্বল্প সময়ে এখানে বিমান এসে নামতে, রিফুয়েলিং করতে এবং যেতে পারবে।
বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ার অ্যাস্ট্রা’র কক্সবাজারস্থ সহকারি স্টেশন ম্যানেজার শহিদুল আলম চৌধুরী বলেন, উড়োজাহাজে ঢাকা থেকে অতিরিক্ত জ্বালানি নিলে অনেক সময় সেটা সমস্যা হয়ে যায়। কিন্তু এখন ঢাকা থেকে কম জ্বালানি নিয়ে কক্সবাজার বিমান বন্দরে এসে রিফুয়েলিংটা করলে অনেক সুবিধা হবে। আবার অনেক সময় বৈরী আবহাওয়া থাকলে উড়োজাহাজে জ্বালানির সংকট হয়। আগে এই বিমানবন্দরে যা রিফুয়েলিং করা যেত না। কিন্তু এখন রিফুয়েলিংয়ে কার্যক্রম চালু হওয়ায় জ্বালানির সমস্যাটা দূর হবে।
বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার কক্সবাজারের স্টেশন ইনচার্জ মুসা আহমেদ বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ রিফুয়েলিং কার্যক্রম চালু হওয়ায় সময় ও অর্থ দুটির অপচয় রোধ হবে। একই সঙ্গে যাত্রী সেবার মানও বাড়বে।
পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, কক্সবাজার বিমানবন্দরে বর্তমানে ৩টি ট্যাংকে জ্বালানি তেলের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার লিটার। এটি আগামীতে পর্যায়ক্রমে ৩ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে।