হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল আগামী ৭ অক্টোবর আংশিকভাবে চালু হবে। ওই দিন বড় পরিসর ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই টার্মিনাল দেশের এভিয়েশন খাতে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। তবে সব সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল আগামী ৭ অক্টোবর আংশিকভাবে চালু হবে। ওই দিন বড় পরিসর ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই টার্মিনাল দেশের এভিয়েশন খাতে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। তবে সব সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত।
জানা গেছে, আংশিক উদ্বোধনের দিন টার্মিনাল ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ফ্লাইট অপারেট করা হবে। টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে হলেও টার্মিনাল পরিচালনায় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ক্যালিব্রেশন করতে সময় লাগবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
অন্যদিকে টার্মিনালে প্রস্তুত হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সব মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন টার্মিনালে প্রবেশ করে সব সুবিধা উপযোগ করতে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। ক্যাপাসিটি প্রতিবছরে ১২ মিলিয়ন যাত্রী। টানেলসহ বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং ৫৪ হাজার বর্গমিটার। ফায়ার ফাইটিং স্টেশন ইকুইপমেন্টসহ চার হাজার বর্গমিটার। ইমপোর্ট কার্গো টার্মিনাল ২৭ হাজার বর্গমিটার। এক্সপোর্ট কার্গো টার্মিনাল ৩৬ হাজার বর্গমিটার। বিমানের পার্কিং অ্যাপ্রোন ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার। দুটি র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। কানেকটিং টেক্সিওয়ে ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার।
এ ছাড়া ল্যান্ডসাইডে এলিভেটেড রোডসহ বিমানবন্দর সংলগ্ন সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে কানেকটিভিটি স্থাপন, যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট সংস্থাপনসহ বিমানবন্দরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ হচ্ছে।
আংশিক উদ্বোধনের পর তৃতীয় টার্মিনালের কী কী ব্যবহার হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ অক্টোবর টার্মিনালের সফট ওপেনিং করবেন। আমাদের স্ট্রাকচার রেডি, আমাদের ইকুইপমেন্টগুলো বসানো হচ্ছে। সফট ওপেনিংয়ের পর এয়ারলাইনগুলো নতুন পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহার করতে পারবে। পুরনো টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে ২৯টি বিমান রাখা যায়। সফট ওপেনিং হলে তৃতীয় টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে আরও ১০টি বিমান পার্ক করা যাবে। ফলে বিমানবন্দরের কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়বে।
তৃতীয় টার্মিনালের নিচতলায় থাকবে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম। দ্বিতীয় তলায় থাকবে বহির্গমন লাউঞ্জ, ক্যানটিন ও বোর্ডিং ব্রিজ। তৃতীয় তলায় রাখা হচ্ছে আগমনী ও বহির্গামী যাত্রীদের ইমিগ্রেশন, চেক-ইন কাউন্টার, সিকিউরিটি সিস্টেম। বহির্গামী যাত্রীদের জন্য ছয়টি রো এবং ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালে ৫৯টি ম্যানুয়াল ইমিগ্রেশন কাউন্টার এবং ১০টি অটো কাউন্টার থাকবে। এ ছাড়া থাকবে সুপরিসর ডিউটিফ্রি শপ এবং বহির্গমন লাউঞ্জ, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। বর্তমান টার্মিনালে রয়েছে ৮টি লাগেজ বেল্ট। তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে।
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য কাস্টমের একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল থাকবে, যার আয়তন ১৩০০ বর্গমিটার। ভিআইপি যাত্রীদের জন্য রাখা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। তৃতীয় টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্তে ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ভিভিআইপি এবং ভিআইপি যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য বিশাল লাউঞ্জ করা হচ্ছে নতুন টার্মিনালে। ৪০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের প্রধান বহির্গমন লাউঞ্জ ব্যবহার করবেন ট্রানজিট যাত্রীরা। তবে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালের সংযোগ থাকবে না এখন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে করিডোর নির্মাণ হবে।
জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনালের প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম দায়িত্ব পায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি। এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয় ২০২০ সালে ১৪ জানুয়ারি।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ বাস্তবায়নের মেয়াদ ৪৮ মাস। চুক্তি মূল্য ২০৫,৯৮৬,৪৮৪,৬৯৯ টাকা (সিডি ভ্যাটসহ)।