দিন দিন উদ্বেগজনক হারে কমছে চীনের জনসংখ্যা। ক্রমাগত দেশটিতে দেখা যাচ্ছে তরুণদের ঘাটতি। জন্মের চেয়ে মৃত্যুহার বেশি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখতে ইতোমধ্যেই নানা পদক্ষেপ নিয়েছে চীন সরকার। এরপরও পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। জনসংখ্যা বাড়াতে বাধ্য হয়ে নতুন চিন্তাধারা তুলে ধরল দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। এবার নারীদের ঘরে থাকতেই উদ্বুদ্ধ করছে ক্ষমতাসীন দল। পুরোনো প্রথায় ফিরে যেতেই আহ্বান তাদের। সমস্যা থেকে উত্তরণ ও ধীর হয়ে পড়া অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে এই পথই দেখছেন চীনের নেতারা। গত সোমবার চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নারী সম্মেলনের সমাপনীতে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ অন্য নেতারা নারীদের এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে শঙ্কিত দেশটির নারীরা।
প্রতি পাঁচ বছরে চীনে অনুষ্ঠিত হয় নারীদের কংগ্রেস (নারী সম্মেলন)। দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো পার্টির কার্যনির্বাহী নীতিনির্ধারণী সংস্থায় কোনো নারী ছিলেন না। এতেই বোঝা যায়, দলেও চরমভাবে লিঙ্গ সমতা হ্রাস করছে চীন। পূর্বের সম্মেলনগুলোতে ঘরের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকাকে প্রাধান্য দিয়েছে দেশটি। কিন্তু এই বছরের ভাষণে কর্মক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা নিয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করেননি প্রেসিডেন্ট শি। বরং সমাবেশে নারীদের বিয়ে এবং সন্তান ধারনের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। সমাপনী সভায় নারী প্রতিনিধিদের বক্তৃতায় শি বলেন, ‘আমাদের সক্রিয়ভাবে বিবাহবন্ধন এবং সন্তান জন্মদানের সংস্কৃতিকে লালন করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রেম, বিবাহ, উর্বরতা এবং পরিবার’ সম্পর্কে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করতেও দলের ভূমিকা রয়েছে।
সম্মেলনে চাকরি-বাকরিসহ নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি’র মতে, নারীদের প্রথাগত জীবনে ফিরে যাওয়া ‘চীনের আধুনিকীকরণের পথ’র জন্য অপরিহার্য। শীর্ষ ওই রাজনৈতিক সমাবেশ নারীদের জন্য হলেও সেখানে পুরুষের আধিক্য ছিল। অন্য নেতারাও তাদের বক্তব্যে বিয়ে এবং সন্তান ধারনে জোর দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধি আগের ধারায় ফিরিয়ে আনতে চরম গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে চীন সরকার। একের পর এক উদ্যোগ নিচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে নগদ প্রণোদনা (বেশিসংখ্যক সন্তান জন্মকে উৎসাহিত করতে ট্যাক্স সুবিধা)। এ বিষয়ে ওয়াশিংটনে অবস্থিত ফ্রিডম হাউজের গবেষণা পরিচালক ইয়াকিউ ওয়াং বলেছেন, ‘চীনের নারীরা এই প্রবণতা দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বছরের পর বছর কর্তৃত্ববাদী সরকার এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে অসংখ্য নারী।
নিউইয়র্ক টাইমস