কানাডা থেকে অবৈধভাবে নদীপথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, কানাডা পুলিশ গত ৩১ মার্চ, শুক্রবার উভয় দেশের সীমান্তে স¤প্রতি আট জনের লাশ উদ্ধার করেছে। সেন্ট লরেন্স নদী দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
উভয় দেশের সীমান্তের একটি জলাভ‚মি থেকে পাওয়া আটটি লাশ দুটি পরিবারের সদস্যদের, একটি পরিবার কানাডার পাসপোর্টধারী রোমানীয় বংশোদ্ভূত আর অপরটি ভারতীয়। তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। সীমান্তের কাছে আকওয়েসেন জলাভ‚মিতে উল্টে থাকা একটি নৌকার কাছে ছয়টি লাশ পাওয়া যায়। শুক্রবার পুলিশের একটি হেলিকপ্টার সেইন্ট লরেন্স নদীতে আরও দুটি লাশ খুঁজে পায়।
এক সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় পুলিশের ডেপুটি প্রধান লি অ্যান ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, ডুবে যাওয়া নৌকাটি আকওয়েসেন মোহাক কমিউনিটির নিখোঁজ বাসিন্দা কেসি ওকসের (৩০) মালিকানাধীন। পুলিশ হেলিকপ্টারযোগে ওকসকে খুঁজে ফেরার সময়ই লরেন্স নদীতে ওই দুটি মৃতদেহ পায়, কিন্তু ওকসকে এখনও খুঁজে পায়নি, তিনি নিখোঁজই আছেন। ওকসের সঙ্গে ওই পরিবার দুটির কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা পরিষ্কার নয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা যে আটটি লাশ পেয়েছে তাদের মধ্যে দুটি শিশুর লাশ আছে, বাকি ছয়জন পূর্ণবয়স্ক। পুলিশ জানিয়েছে, কানাডার কোস্টগার্ড আকাশপথে তল্লাশি চালানোকালে গত ৩০ মার্চ, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে মোহক অঞ্চলের আকওয়েসেনের সি স্নাইন জলাভ‚মিতে প্রথম লাশটি পায়, স্থানটি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তের ঠিক পাশেই। পরে আশপাশেই বাকি লাশগুলো পাওয়া যায়। তাদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ প্রধান ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, একটি শিশুর বয়স তিন বছরের নিচে আর তার কানাডার পাসপোর্ট ছিল। অন্য শিশুটিও কানাডার নাগরিক। “তারা সবাই অবৈধভাবে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে,” বলেছেন তিনি। বুধবার রাতে ওই এলাকার আবহাওয়া পরিস্থিতি খারাপ ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।
যে আকওয়েসেন এলাকায় লাশগুলো পাওয়া গেছে সেটি কানাডার কুইবেক প্রদেশের অন্তর্গত; এলাকাটি মোহক কমিউনিটির অন্তর্ভুক্ত। মোহক কমিউনিটির এলাকাগুলো আবার কানাডার অন্টারিও, কুইবেক প্রদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক রাজ্যজুড়ে ছড়ানো। এ এলাকাটি কানাডার মন্ট্রিয়েল শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পশ্চিমে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “এটি একটি হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। কী ঘটেছিল, কীভাবে এটি ঘটেছে তা আমাদের পুরোপুরি বুঝতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এমন সম্ভাবনা কীভাবে কমানো যায় তা করতে যা করা দরকার করতে হবে।”
সা¤প্রতিক মাসগুলোতে সীমান্তের অন্য অংশেও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করা মানুষের লাশ পাওয়া গেছে। জানুয়ারিতে কানাডার মানিটোবার ইমারসনের কাছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তের পাশে বরফ আচ্ছাদিত একটি মাঠে একটি নাবালকসহ চারজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃতরা ভারত থেকে আসা পরিবার বলে বিশ্বাস মার্কিন কর্মকর্তাদের।
এর আগে ডিসেম্বরে মন্ট্রিয়েলের বাসিন্দা ফ্রিটজনেল রিচার্ডকে (৪৪) যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তের কাছে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে পুনর্মিলনের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা গেছে।
জানুয়ারিতে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টার সময় মার্কিন সীমান্ত পুলিশ ৩৬৭ জনকে আটক করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো স¤প্রতি অবৈধ সীমান্ত পারাপার মোকাবেলার বিষয়ে একটি চুক্তি সই করেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পদক্ষেপের কারণে শরণার্থী ও অভিবাসীরা সীমান্ত পারাপারের সময় আরো বেশি ঝুঁকি নেবে।
খবর : বিবিসি ও রয়টার্সের