চীনের রাজধানী বেইজিং, পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লিয়াওনিংসহ বিভিন্ন শহর ও প্রদেশের শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ‘রহস্যজনক’ নিউমোনিয়া। প্রতিদিন হাজার হাজার আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন অভিভাবকরা; চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে সেই ভিডিও ছড়িয়েও পড়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে করোনার মতো চীনের নিউমোনিয়াও কি বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে? -খবর ব্লুমবার্গ।
অক্টোবরের শেষ দিক থেকে বেইজিং এবং লিয়াওনিংয়ের শিশুদের মধ্যে রহস্যজনক নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। রোগটিকে রহস্যজনক নিউমোনিয়া বলার কারণ হলো, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা যেমন শ্বাসকষ্টে ভোগেন, অজানা এই রোগটিতে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যেও এ উপসর্গের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে নিউমোনিয়ার রোগীদের শ্বাসকষ্ট ছাড়াও কফ ও বুকে ঘড়ঘড় শব্দের মতো উপসর্গ দেখা যায়। আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। যদিও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি উচ্চমাত্রার জ্বরের মতো উপসর্গ রয়েছে আক্রান্ত শিশুদের। এছাড়া শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আক্রান্ত প্রত্যেক শিশুর ফুসফুসে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফোসকা বা ফুস্কুড়ি পরিলক্ষিত হয়েছে। জলবসন্ত রোগে মানুষের শরীরে যেমন ফোসকা ওঠে, সেসবের সঙ্গে মিল রয়েছে সেগুলোর।
গত ১২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশ জুড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে এই রোগটিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা। করোনাকালে জনগণ যেসব বিধিনিষেধ মেনে চলতেন, অজানা এই নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়া রোধ করতেও দেশের লোকজনকে সেসব বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশনের কর্মকর্তারা।
এদিকে চীনে এই নতুন নিউমোনিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বিশ্ব জুড়ে। কারণ বৈশ্বিক করোনা মহামারির ভয়াবহ স্মৃতি এখনো ফিকে হয়ে যায়নি। শ্বাসতন্ত্রের সেই প্রাণঘাতী রোগটি প্রথম শানক্ত হয়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী শহর উহানে এবং শনাক্ত হওয়ার পর প্রাথমিক পর্যায়ে করোনাকেও ‘রহস্যময় নিউমোনিয়া’ বলে উল্লেখ করেছিল চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনায় গত তিন বছরে বিশ্ব জুড়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৭ জনের। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি ‘রহস্যময় নিউমোনিয়া’ সম্পর্কে চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেই অনুযায়ী, এই রোগটি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সরবরাহও করেছে ন্যাশনাল হেলথ কমিশন।
কমিশন জানিয়েছে, আক্রান্ত শিশুদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের দেহে নতুন ধরনের কোনো জীবাণু পাওয়া যায়নি, বরং মাইকোপ্লাজমা নামে এক ধরনের পরিচিত ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাইকোপ্লাজমা বেশ পরিচিত একটি ব্যাকটেরিয়া এবং এই ব্যাকটেরিয়া শিশু ও পরিণত বয়স্ক ব্যক্তি উভয়ের দেহেই সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। বয়স্কদের মধ্যে মাইকোপ্লাজমার সংক্রমণের শিকার হন, তাদের মধ্যে ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি ও মৃদু শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা যায় এবং সাধারণ ঠান্ডার ওষুধে কিংবা ওষুধ ছাড়াই এক বা দু’সপ্তাহের মধ্যে তা সেরে যায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে তা খানিকটা গুরুতর রূপ নিতে পারে। কারণ, তাদের শ্বাসতন্ত্র পরিণত বয়স্কদের মতো শক্তিশালী নয়। ফলে শিশুদের ক্ষেত্রে ‘রহস্যময়’ এই নিউমোনিয়ার সত্যিকারের নিউমোনিয়া হয়ে ওঠার আশঙ্কাও থেকে যায়। এই রোগটির একটি স্বীকৃত ওষুধও রয়েছে। জিথরোম্যাক্স নামের সেই ওষুধটির চীনা সংস্করণের নাম ইয়িন উউডং। তাই যদি চীনের বাইরে এই ‘রহস্যময় নিউমোনিয়া’ ছড়িয়েও পড়ে তাহলেও তা করোনা মহামারির মতো বড় কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না। ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের পাঠানো এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, নতুন কোনো জীবাণু এই নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী নয়।