মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

এক মিলিয়ন ডলার লোন জালিয়াতির ঘটনায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশি পিতা-পুত্র অভিযুক্ত

  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

 করোনা মহামরী পরবর্তী সরকারি পেচেক সুরক্ষা প্রোগ্রামের (পিপিপি) প্রায় এক মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১২ কোটি টাকা) ঋণ নিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বাংলাদেশি নির্মাণ ঠিকাদার পিতা-পুত্র অভিযুক্ত হয়েছেন। তারা হলেন- নিউইয়র্কে আঞ্চলিক সংগঠন সন্দ্বীপ সোসাইটির বর্তমান উপদেষ্টা নূরুস সাফা ও তার ছেলে মাইদা সাফা। মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নিয়ে দুটি বাড়ি ও বিলাসবহুল বিএমডবিডব্লিউ গাড়ি কিনেছেন তারা। এ ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

করোনা মহামারীর পর প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে কর্মচারিদের বেতন ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ ফেডারেল সরকার পিপিপি ঋণ সুবিধা চালু করে। এই অর্থ পরবর্তীতে মওকুফ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অনেকেই মিথ্যা তথ্য, বিশেষ করে ভুয়া অফিস ও কর্মচারি দেখিয়ে পিপিপি ঋণের অর্থে বাড়ি ও গাড়ি কিনেছেন, যা গুরুতর অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ব্রুকলিন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এরিক গঞ্জালেজ, ইউএস স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এসবিএ) জেনারেল কাউন্সেল থেরেসি মিরস এবং স্পেশাল এজেন্ট-ইনচার্জ জোনাথন মেলোন, উত্তর-পূর্ব অঞ্চল, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ লেবার, ইন্সপেক্টর জেনারেল অফিস স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন যে দুজন ঠিকাদারকে এই অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন পেচেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম থেকে ১ মিলিয়নে ডলারের বেশি প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত স্কিমের অংশ হিসাবে বাংলাদেশি পিতা-পুত্র প্রতারণামূলক ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন যা তহবিল প্রাপ্তির জন্য কোম্পানির রাজস্বকে বড় অংকে দেখিয়েছেন। এরপর সেই তহবিলগুলি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেছেন, যা কর্মীদের এবং অন্যান্য বৈধ ব্যবসায়িক খরচ প্রদানের জন্য নির্দ্দিষ্ট ছিল।

ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি গঞ্জালেজ বলেছেন, ‘এই আসামীরা পেচেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম থেকে ১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি চুরি করার জন্য একটি নির্লজ্জ পরিকল্পনায় জড়িত এবং কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন ছোট ব্যবসার মালিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় সহায়তা করার উদ্দেশ্যে নিজেদের পকেট ভারী করেছে। এই মামলায় ন্যায়বিচার অনুসরণে সহায়তার জন্য আমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

জেনারেল কাউন্সেল মিয়ার্স বলেছেন, ‘এই বিষয়ে পদক্ষেপটি ফেডারেল এজেন্সি যেমন কিংস কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস, এসবিএ-এর অফিস অফ ইন্সপেক্টর জেনারেল, অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং মেরি ক্যাভেনগ্রোসের সাথে কাজ করা ছোট ব্যবসা প্রশাসনের উন্নত প্রচেষ্টার ফসল।

স্পেশাল এজেন্ট-ইন-চার্জ মেলোন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ মহামারী সম্পর্কিত বেকারত্ব বীমা কর্মসূচির সাথে জড়িত জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত করছে। আমরা এই ধরনের অভিযোগ তদন্ত করতে আমাদের আইন প্রয়োগকারী অংশীদারদের সাথে কাজ চালিয়ে যাব।’

ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস জানিয়েছে, অভিযুক্ত নুরুস সাফা (৬৫) এবং মাইদা সাফা (৩৪)-কে স্থানীয় সময় ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ব্রুকলিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডেনা ডগলাসের সামনে হাজির করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রথম এবং দ্বিতীয়-ডিগ্রি গ্র্যান্ড লার্সেনি, একটি জাল যন্ত্রের দ্বিতীয়-ডিগ্রি ফৌজদারি দখল এবং প্রথম-ডিগ্রি মিথ্যা ব্যবসার রেকর্ডের অভিযোগ রয়েছে। তাদের জামিন ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয় এবং ৩০ অক্টোবর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি বলেছেন, তদন্ত অনুসারে নুরুস সাফা হলেন রাহিল কন্ট্রাকটিং ইনকর্পোরেশনের মালিক। তার ছেলে মাইদুল সাফা কোম্পানির প্রজেক্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে তালিকাভুক্ত।

করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্রের স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসবিএ) পেমেন্ট প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) বাস্তবায়ন করেছে। কর্মীদের বেতন-ভাতা বজায় রাখার জন্য ঋণগুলি ছোট ব্যবসার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। একটি পিপিপি লোন পাওয়ার জন্য, নিয়োগকর্তাকে প্রত্যায়িত করতে হবে যে কোভিড-১৯ সংকটের সময় তাদের কর্মশক্তিকে নিযুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বেতন বা অন্যান্য নির্দিষ্ট খরচের জন্য তহবিল ব্যবহার করা হবে।

নুরুস সাফা মোট দুটি পিপিপি ঋণ পেয়েছিলেন। ঋণ হাতে পাওয়ার পর তারা দ্রুত বিলাসবহুল আইটেমসহ ব্যক্তিগত ক্রয়ের জন্য অর্থ ব্যবহার করে। অভিযুক্তরা দুটি পাঁচ বেডরুমের বাড়ি কেনার জন্য মোট ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭০ ডলার খরচ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাড়ি দুটি একটি নিউ জার্সির ভুরিসে এবং অন্যটি পাইন হিলে অবস্থিত। এছাড়া তিনি ছেলের জন্য ৭১ হাজার ডলার ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ২০২১ সালের বিএমডব্লিউ এম-৫ কেনেন।

মামলাটি বর্তমানে ব্রকলিনের সিনিয়র সহকারী জেলা অ্যাটর্নি সের্গেই মার্টস-এর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলায় তাদের কমপক্ষে ১০ থেকে ২৫ বছরের সাজা হতে পারে।

এদিকে পিপিপি ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে পিতা-পুত্র অভিযুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে আরো কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পিপিপি ঋণ জালিয়াতি তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শাখা ও কর্মী দেখিয়ে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি পিপিপি ঋণ নিয়ে অভিজাত বাড়ি ও গাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি বলেছেন, করোনার পর পিপিপি ঋণের অর্থে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী রাতারাতি সমাজসেবক বনে যান। এখন তাদের নামে একে একে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। এ ধরণের অভিযোগ ওঠায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com