বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ অপরাহ্ন

‘অভিবাসনবিরোধী’ ইটালির সরকারের বিদেশি কর্মী নির্ভরতা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

ইটালির সরকার অনিয়মিত অভিবাসনের বিপক্ষে কড়াকড়ি আরোপের কথা বললেও কর্মী সংকট মেটাতে বিদেশিদের জন্য কাজের দুয়ার খুলে দিচ্ছে৷ সরকারের দাবি, তারা বৈধ অভিবাসনকে উৎসাহ দেয়৷

মাদু কুলিবালি পুরাতন ইটালির নতুন মুখ৷ ২০১৮ সালে তিনি গিনি থেকে ইটালিতে আসেন৷ বিদেশি অভিবাসীদের দিয়ে কর্মী ঘাটতি পূরণের একটি উদ্যোগের অংশ হিসেবে টাসক্যানি অঞ্চলের প্রথম অভিবাসী বাস চালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি৷

ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও তার প্রতি কৃতজ্ঞ কুলিবালি৷ গত বছরের অক্টোবরে ক্ষমতায় আসার পরই সমুদ্রপথে অনিয়মিত উপায়ে আসা অভিবাসন বন্ধে নানা উদ্যোগে বিশ্বজুড়ে সংবাদ শিরোনাম হন মেলোনি৷ তবে এই কড়াকড়ির বিপরীতে কর্মী ঘাটতি মেটাতে কয়েক হাজার অভিবাসীকে দেশটিতে বৈধভাবে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে মেলোনি সরকার৷

মেলোনি সরকার অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে বড় আওয়াজ দিলেও তেমন সফলতা মেলেনি৷ ছবি: আনসা
মেলোনি সরকার অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে বড় আওয়াজ দিলেও তেমন সফলতা মেলেনি৷ ছবি: আনসা

কর্মীর অভাবে ‘উদার’ সরকার?

বয়স্ক মানুষের সংখ্যা আর দ্রুত জনসংখ্যা কমার দিক থেকে ইটালি অবস্থান শীর্ষে৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০৫০ সাল নাগাদ ইটালির জনসংখ্যা বৃদ্ধির বদলে ৫০ লাখ কমে যাবে৷ জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি থাকবে ৬৫ বছরের উপরে৷ শিল্প, নির্মাণ ও পর্যটন ও কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে তাই প্রয়োজন প্রচুর তরুণ কর্মী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তনিও তাজানি এরইমধ্যে টিউনিসিয়ার সঙ্গে তিন বছর মেয়াদি একটি চুক্তি করেছেন৷ এর আওতায় বছরে চার হাজার টিউনিসিয়ানের জন্য ভিসা ও রেসিডেন্স পারমিটের (বসবাসের অনুমতি) প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে৷ তিনি জানান, তার সরকার বৈধ অভিবাসনের বিরোধী নয়৷ বলেন, ‘‘ইটালি ও ইউরোপে কারা প্রবেশ করবে সেটি আমরা বাছাই করতে চাই, মানবপাচাকারীরা নয়৷’’

শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞ ও সাবেক রক্ষণশীল আইনজীবী গুইলিয়ানো কাজ্জোলা মনে করেন, অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যার বাস্তবতা সরকারের অভিবাসনবিরোধী অবস্থানকে উদার করছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি পুরোপুরি একমত যে অভিবাসনই ইটালির জনসংখ্যা বৃদ্ধির সবচেয়ে সহজ উপায়৷ কেননা আজকে যে শিশুর জন্ম হবে ২০ বছর পর সে শ্রমবাজারে ঢুকবে৷ অন্যদিকে যে ২০ বছর বয়সে এখানে আসছে, তাকে আপনি এখনই কাজে লাগাতে পারেন৷’’

শুধু ইটালি নয়, এমন পরিস্থিতিতে আছে ব্রিটেন, ক্যানাডা, জার্মানি বা জাপানও৷

মেলোনি সরকার অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে বড় আওয়াজ দিলেও সরকারের এ নিয়ে সফলতা এখনও সীমিত৷ উত্তর আফ্রিকা থেকে সমুদ্রপথে আশ্রয়প্রার্থীদের আগমনের সংখ্যা চলতি বছর এরইমধ্যে প্রায় এক লাখ ৫৩ হাজারে পৌঁছেছে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে সংখ্যাটি ছিল ৯৬ হাজার৷

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের জন্য ২০২৩-২৫ সালের কাজের ভিসার নির্ধারিত কোটা চার লাখ ৫২ হাজারে উন্নীত করেছে ইটালির সরকার৷ এটি তার আগের তিন বছরের চেয়ে তিনগুণ বেশি৷ শুধু চলতি বছরের জন্য এই কোটা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার, যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ৷

এই ভিসা মূলত ইটালিতে বসবাস করছেন, কিন্তু নিবন্ধিত হননি তাদের জন্য বরাদ্দ৷ যাতে তারা বৈধ হওয়ার সুযোগ পান৷

তারপরও এই সংখ্যা যথেষ্ট নয়৷ ব্যবসায়ী ও ইউনিয়নগুলোর কাছ থেকে আসা চাহিদা অনুযায়ী সরকার একটি হিসাব করেছে৷ তাতে ২০২৩-২৫ সালে আট লাখ ৩৩ হাজার ভিসা অনুমতি প্রয়োজন৷ চলতি বছর এই কোটায় ভিসার আবেদন জমা পড়েছে ছয় লাখের বেশি৷

ইটালিতে সবচেয়ে বেশি সংকট রয়েছে উত্তরের অপেক্ষাকৃত ধনী প্রদেশ ব্রেশাতে৷ সেখানে বেকারত্বের হার মাত্র চার শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের অর্ধেক৷

ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে চালু করা একটি স্কিমের আওতায় সরাসরি আশ্রয়প্রার্থীদের রিসেপশন সেন্টার বা অভ্যর্থনা কেন্দ্র থেকে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে৷ ব্রেশাতে শিল্পখাতের পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান পাওলো বেত্তোনি বলেন, ‘‘আমরা মরিয়া হয়ে কর্মীর খোঁজ করছি৷ আমরা ইটালির তরুণদের কাছ থেকে কোনো আবেদন পাই না, কেননা ম্যানুয়াল শ্রমের প্রতি তাদের আর আগ্রহ নেই৷ একে তারা দ্বিতীয় শ্রেণির কাজ বলে মনে করে৷’’

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা এখন পর্যন্ত আশ্রয়প্রার্থীদের ৮০০ জনের প্রার্থী তালিকা থেকে ২০০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে৷

কম দক্ষতা প্রয়োজন এমন খাতেই মূলত কর্মীর সংকট রয়েছে৷ অনেকের মতে কাজের পরিবেশ ও বেতন আকর্ষণীয় না হওয়াই এর অন্যতম কারণ৷ ইটালি ৩৮ সদস্যের ওইসিডির একমাত্র দেশ যেখানে মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় গত ৩০ বছরে প্রকৃত মজুরি কমেছে৷

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com