যেকোনো বাগানে গিয়ে বিভিন্ন রঙের ফুল, প্রজাপতি এসব দেখতে কার না ভালো লাগে? আর বাগানটি যদি হয় মাটি থেকে উঁচুতে, অনেকটা উপরে, তাহলে তো কথাই নেই! এরকমই একটি বাগান হলো ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান। আমরা সবাই জানি ইরাক দেশটির অধিকাংশ জুড়েই রয়েছে মরুভূমি। অনেক দিন আগে এই দেশেই ব্যাবিলন নামে একটি শহর ছিলো। এ শহরটি গড়ে উঠেছিলো ইউফ্রেটিস নদীর তীরে। সেই সময় ব্যাবিলন শহরের রাজা ছিলেন নেবুচাঁদনেজার। তিনি একদিন এক অদ্ভুত পরিকল্পনা করলেন। স্ত্রীর বিনোদনের জন্য মরুভূমির ভিতরেই একটি উদ্যান তৈরির কথা ভাবলেন। কিন্তু মরুভূমিতে গাছ বাঁচানো এক মহা সমস্যার কথা। কারণটা সেখাকার পানির স্বল্পতা। কাজেই স্বাভাবিকভাবে তো সেখানে বাগান তৈরি করা এক কথায় অসম্ভব। এজন্যই রাজা এক বিশেষ পদ্ধতিতে বাগান তৈরির পরিকল্পনা করলেন।
মেসোপটেমিয় সভ্যতার মধ্যে এই ব্যাবিলনের সভ্যতা অন্যতম। ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে ওঠা ব্যাবিলন শহরটি ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। চারকোণা এ শহরটি তখন প্রশস্ত প্রতিরক্ষা প্রাচীরে ঘেরা ছিল, যা উচ্চতা এবং প্রশস্তের দিক থেকে ছিল বিস্ময়কর। শহরের সামনে ছিল মজবুত ও উঁচু প্রবেশ পথ। আবার শহরের মধ্যে একটি বড় স্তম্ভও তৈরি করা হয়েছিল। যার নাম ছিল ব্যাবিলন টাওয়ার। নামটির সঙ্গে সম্ভবত ব্যাবিলন নামটির সম্পর্ক ছিল।
পারস্য সম্রাট সাইরাস ৫১৪ খৃস্টপূর্বাব্দে জেরুজালেম দখল করে শহরটি ধ্বংস করেন। তাদের উপাসনালয় এবং রাজপ্রাসাদ পুড়িয়ে দেন। তার সময় থেকেই ব্যাবিলনের সাম্রাজ্য ম্লান হতে থাকে। তার পরবর্তীকালে নেবোনিডাস সম্রাট হন। তবে ব্যাবিলনের সমৃদ্ধি হারিয়ে যেতে থাকে। ব্যাবিলন এখন ধ্বংসস্তূপ। পারসিয়ান সম্রাটের প্রচণ্ড আক্রমণে নিমিষেই ধুলোয় মিশে যায় ব্যাবিলন নগরী।
আইদানীং কিছু গবেষক ও ইতিহাসবিদ মনে করেন ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান আসলে ব্যাবিলনে ছিল না। এটি ছিল ইরাকেরই প্রাচীন সাম্রাজ্য এসিরিয়ার নগর নিনেবেহ-তে। এবং নির্মাণ করেছিলেন এসিরিয়ার রাজা সিনেক্রেব টাইগ্রিস নদীর তীরে খ্রি:পূ: ৬৮১ সালের দিকে। তবে এই দাবীর স্বপক্ষে শক্ত প্রমাণ তোলা যায় না গ্রীক ইতিহাসবিদদের জন্য।
এতসব বিতর্কের পর ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান সম্পর্কে কিছুটা আশা দেখান জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক রবার্ট কোল্ডওয়ে। ১৮৯৯ সালে তিনি ব্যাবিলন শহরে খনন কাজ শুরু করেন। রাজা নেবুচাঁদনেজার এর প্রাসাদ, দুর্গ, টাওয়ার অব ব্যাবিলন এবং নগর রক্ষাকারী দেওয়াল সবই পাওয়া যায় তার খনন কাজে। শেষদিকে তিনি ১৪টি রুমবিশিষ্ট একটি স্থান খুঁজে পান যার ছাদ ছিল পাথরের তৈরি। ব্যাবিলনের প্রাচীন ইতিহাস অনুযায়ী উত্তর দিকের দুর্গ এবং ঝুলন্ত বাগান ছাড়া আর কোথাও ছাদ তৈরিতে পাথর ব্যবহারের কথা উল্লেখ ছিল না। এবং ঐ দুর্গ তিনি আগেই খুঁজে পাওয়ায় এই স্থানটিই ঝুলন্ত বাগান ছিল তা দাবী করেন তিনি। এমনকি তিনি চেইন পাম্প ব্যবহার করা হত এমন একটি কক্ষও খুঁজে পান। যা বাগানটির অস্তিত্ব স্বপক্ষে জোরালো প্রমাণ দেয়।
তবে আধুনিক গবেষকদের মতে কোল্ডম্যান এর এই দাবী ভুল। কারণ যে অংশটি তিনি ঝুলন্ত বাগান বলে চালিয়ে দিয়েছেন তা নদী থেকে অনেক দূর যা ইতিহাসবিদদের বাগানের অবস্থান সম্পর্কে বর্ণনা এবং পানি সরবরাহের সমস্যা উভয় দিক থেকেই বেশ অসুবিধাজনক। তাছাড়া আধুনিক অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে এই অংশটি কোনও উদ্যান হিসাবে নয় বরং প্রাসশনিক কাজকর্ম এবং স্টোররুম হিসাবে ব্যবহৃত হত।
তবে সর্বশেষ কথা হল বাগানটির গঠন ও অবস্থানগত দিক নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও প্রাচীন ইরাকে একটি আধুনিক ছাদবাগান ছিল একথা অবশ্য কেউই অস্বীকার করেনি।