আমি যখন সকাল সাতটায় কাজে আসার জন্য বের হই, তখন বাইরেটা আঁধারে ডাকা থাকে। অথচ কয়েকদিন আগেও থাকত একদম দুপুরের মতো পরিস্কার। কারণ আস্তে আস্তে দিন ছোট হয়ে আসতেছে। আবার যখন বাড়ি ফিরি বিকেল সাড়ে চারটার পর, তখনও আঁধার ঘনিয়ে আসে। পাঁচটার পরেই সন্ধ্যা আয়োজন করে নামে। অথচ বছরের একটা সময়ে এই সন্ধ্যা হয় কানাডায় নয়টারও পরে। কী অদ্ভুত না প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়ম! সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে একটা নির্দিষ্ট নিয়মে। নিয়ম ছাড়াও পরিবর্তন হয় হঠাৎ করেই। সবই আল্লাহর ইচ্ছে।
আগামী রোববারে কানাডায় সময় পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। এক ঘণ্টা ব্যাকে নেওয়া হবে। মানে এখন যে সময়ে সকাল সাতটা বাজে রোববার থেকে সেটা হবে সকাল ছয়টা। আর একটা ব্যাপার আমার মাথায় সব সময় থাকে। সেটা হলো দেশের সময়টা হিসেব করা। যেমন এখানে রাত হলে ওদেশে দিন। সেটা তো সবাই জানেন। আর টাইমটা ঠিক করি এভাবে; যদি কানাডায় রাত দশটা হয়, তাহলে বাংলাদেশে সকাল আটটা। এখনকার কথা বলছি। মানে দশ ঘণ্টার ব্যবধান। আর রোববারে সময় পিছিয়ে দিলে হবে এখানে রাত দশটা। আর বাংলাদেশে সকাল নয়টা। মানে এগারো ঘণ্টার ব্যবধান হবে।
ঘড়ির কাঁটা পেছানোর ফলে কাজ থেকে আসার সময় অন্ধকার বেশি হবে। অন্ধকারময় প্রকৃতির মাঝে ছুটে চলতে হবে। থামা যাবে না। জীবনের গতি থেমে গেলে জীবন থেকে আলোও এক রকম হারিয়ে যায়।
প্রকৃতির এই যে পরিবর্তন এতে কারোর হাত নেই। ইচ্ছে করলেই কেউ দিনকে রাত, আর রাতকে দিন বানাতে পারবে না। পারবে না আকাশের সূর্যের আলো নিভাতে। ইচ্ছে করলেই কেউ মৃ*ত্যুকে এড়াতে পারবে না। পারবে না সারা জীবন বেঁচে থাকতে। একটা নির্দিষ্ট সময় পার হলেই সবকিছু থেকে মানুষের আগ্রহ হারিয়ে যায়। জীবনের শেষ দিনটার কথা বড়ো বেশি ভাবতে থাকে মানুষ। মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার নূন্যতম সার্থকতাটা হলো মানবতা। যদি এক টুকরো মানবতা থাকে হৃদয়ে, তাহলে আপনি ম*রার পরেও বেঁচে থাকবেন। বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।
প্রতিদিন অত্যন্ত একটা ভালো কাজ বা চিন্তা আমরা করতে পারি। তাহলে দিন শেষে কোনো কিছুর জন্য না হলেও, আপনি শান্তি পাবেন কোনো এক অলৌকিক মানবতার অন্তরালে। এই যে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিদিন আমি হোমলেসদের কিছু না কিছু খাবার দিই। তারা খুব খুশি হয়। তার চেয়েও বেশি খুশি হই আমি। কারোর মুখে হাসি দেখা এক টুকরো সোনার চেয়েও দামি। আর ধরেন, আমি যদি নাও দিতে পারতাম, শুধু যদি ভাবতাম কাউকে কিছু দেওয়া উচিত তাহলেও সেটা মানবতার মধ্যে পড়ে।