শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

ইমিগ্রেশন ও লাগেজ ব্যবস্থাপনায় জোর, বদলে গেছে বিমানবন্দর

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৪

দুবাইয়ে এসি সারানোর কাজ করেন খুলনার দৌলতপুরের বিপ্লব হাওলাদার। তিন বছর পর মঙ্গলবার সকালে তিনি দেশে ফেরেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্রুতই শেষ হয় তাঁর ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা। এর পর লাগেজ বেল্টে গিয়ে দেখেন, তাঁর লাগেজ আগেই চলে এসেছে। কোনো ঝঞ্ঝাট ছাড়াই বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসেন বিপ্লব। প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আরও বেশ কয়েক যাত্রী। তাদের তথ্যমতে, বিমানবন্দরের পরিবেশ এখন বেশ ভালো। আগের মতো হয়রানি-ভোগান্তি নেই বললেই চলে। অবশ্য কিছু বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে তাদের।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সাম্প্রতিককালে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইমিগ্রেশন তিন শিফট থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে চার শিফট। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। বিমানবাহিনীর ১ হাজার সদস্য যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। লাগেজ ব্যবস্থাপনা দ্রুত করা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্মীরা আরও আন্তরিকভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, টার্মিনাল ১ ও ২ বেশ পরিচ্ছন্ন। অসচেতন যাত্রীরা বিভিন্ন খাবার ও পানীয়ের প্যাকেট, মোড়ক বা বোতল যেখানে-সেখানে ফেললেও দ্রুত তা সরিয়ে নিচ্ছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া যানগুলোকে দ্রুত টার্মিনাল থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রবেশপথ থেকে বারবার সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাত্রীর স্বজনকে। যদিও সেই প্রচেষ্টা পুরোপুরি সফল হচ্ছিল না। কারণ, স্বজনরা এদিক-সেদিক ঘুরে আবারও এসে ভিড় করছিলেন। এ ছাড়া ড্রাইভওয়েতে ছিলেন বিপুলসংখ্যক মানুষ, যারা যাত্রীর সঙ্গে এসেছিলেন। আগে একপাশে বসার ব্যবস্থা থাকলেও এখন নেই। এ কারণে ড্রাইভওয়ের একপাশে বসে পড়েন স্বজনরা।

প্রবেশ ফটকগুলোয় আগে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার সদস্যরা যাত্রীর টিকিটসহ প্রয়োজনীয় কাগজ যাচাই করতেন। এখন সেখানে বিমানবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করায় যাচাই প্রক্রিয়ায় গতি এসেছে। বিমানবন্দরে দ্রুত ঢুকতে পারছেন যাত্রীরা। তাদের সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়াতে এবং স্বজনকে সরে যেতে অনুরোধ করছিলেন লাল জ্যাকেট পরা একদল তরুণ। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে গত ১৯ অক্টোবর থেকে তারা কাজ করছেন। মূলত বিনামূল্যে প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেন।

সেই তরুণদের একজন উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোনায়েম হোসেন। তিনি বলেন, অনেকে বিমানবন্দরের নিয়মকানুন জানেন না, কোথায় যেতে হবে বা লাইনে দাঁড়াতে হবে, বুঝতে পারেন না। তাদের বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিই আমরা। লাগেজ বহনে সমস্যা হলে তার ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়।

বিমানবন্দর প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহেদ হোসেন জানান, যাত্রীসেবায় তিন গুণ বেশি জনবল নিয়ে কাজ করছেন তারা। সেই সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিচালনায় আইওএম থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৬০ শিক্ষার্থী দায়িত্ব পালন করছেন। তিন পালায় আট ঘণ্টা করে তারা টার্মিনালের ভেতর-বাইরে কাজ করছেন।
যাত্রীরা জানান, বড় ভোগান্তি ছিল লাগেজ পেতে দীর্ঘ সময় লাগা। সেই সঙ্গে প্রায়ই লাগেজ কাটা বা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া যেত। লাগেজ থেকে মালপত্র চুরির অভিযোগও ছিল এন্তার। তবে এখন দ্রুতই মিলছে লাগেজ, নেই কাটার অভিযোগও। তবে কিছু লাগেজ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। দিল্লি থেকে ঢাকায় ফেরা এক যাত্রী জানালেন, তাঁর স্যুটকেসের একপাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্ভবত লাগেজ ছুড়ে ফেলার কারণে এমনটা হয়েছে।

দুবাই থেকে আসা আরেক যাত্রী জানান, বিমানবন্দর থেকে বের হতেই নানা লোকজন ঘিরে ধরছেন। কেউ গাড়ি, কেউ বৈদেশিক মুদ্রা ভাঙানোর জন্য। একজন আবার তাঁকে বলেছেন, ছোট ভাই মনে করে কিছু ডলার দিয়ে যান!

দুপুরে আবুধাবি থেকে আসেন ফেনীর দাগনভূঞার লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের পরিবেশ আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। সবাইকে আন্তরিক মনে হয়েছে। একই কথা জানান মাস্কাট থেকে আসা কুমিল্লার মাসুদ আলম।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, যাত্রীসেবা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইমিগ্রেশনের শিফট বাড়ানোয় যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com