শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

সৌদি সরকারি স্কুলে সংগীত শিক্ষা চালু, ৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরব। সব সরকারি বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষা চালু করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে ৯ হাজারের বেশি সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। শুধু তা–ই নয়, সংগীত শিক্ষাকে জাতীয় শিক্ষাক্রমের একটি গুরুত্ব অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে সৌদি সরকার।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান পরিষেবা সংস্থা সৌদি এয়ারলাইনসের মাসিক সাময়িকী লিডারস–মিনা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০ ’–এর আওতায় অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য এবং সামাজিক আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে শিল্প, বিনোদন এবং শিক্ষায় সংস্কার ও বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি যুব সমাজের সাংস্কৃতিক দিগন্ত প্রসারিত করতে ও শিক্ষায় রক্ষণশীলতা দূর করার লক্ষ্যে ব্যাপকসংখ্যক সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দিল দেশটির সরকার। এর আগে সংগীত শিক্ষা ও চর্চা নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু সৌদি আরব এখন সক্রিয়ভাবে সংগীতকে শিক্ষাক্রমের অন্যতম উপাদান হিসেবে প্রচার করছে।

সৌদি আরবের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ সংগীত বিভাগ খোলা হবে। শিক্ষকদের অনেকেই শাস্ত্রীয় সংগীত, আরবি সংগীতের ঐতিহ্য এবং আধুনিক ঘরানার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সংগীত তত্ত্ব, যন্ত্র এবং পরিবেশনা শিক্ষা দেবেন।

সৌদি আরবের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দেশটির শিক্ষাক্রমে এই পদক্ষেপকে মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করছেন। একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের তরুণদের মধ্যে সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক বোধ এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বিকাশের জন্য সংগীত শিক্ষা অত্যাবশ্যক। এটি শিল্প ও বিনোদন খাতে তরুণ সৌদিদের ক্যারিয়ার গঠনে নতুন সুযোগ তৈরি করবে।’

সৌদি আরবে বিনোদন এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। এবার সরকারি বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষার প্রবর্তন করা হলো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি সিনেমা হল খুলেছে, আন্তর্জাতিক সংগীত উৎসবের আয়োজন করেছে এবং আন্তর্জাতিক শিল্পীরা মঞ্চে পারফরম করেছেন। অথচ এক দশক আগেও এসব কল্পনা করা যেত না।

যুবরাজের ভিশন–২০৩০–এর অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশের সাংস্কৃতিক জগৎ প্রসারিত করা, যেখানে শিল্পকলা, পর্যটন, বিনোদন এবং সংস্কৃতির মতো নতুন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। এর মাধ্যমে খনিজ তেলের ওপর সৌদি অর্থনীতির নির্ভরশীলতা কমবে।

তবে এই উদ্যোগকে দেশটির প্রগতিশীলরা স্বাগত জানালেও ধর্মীয় রক্ষণশীলেরা সমালোচনা করছেন। তাঁদের ভাষ্য, সংগীত শিক্ষা সৌদি আরবের ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের ক্ষয় ডেকে আনবে। যেখানে ইসলাম ধর্মের অনেক পণ্ডিতই বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সংগীত পরিবেশন ও শোনাকে হারাম (নিষিদ্ধ) বিবেচনা করেন। তবে প্রয়াত ইউসুফ আল কারজাভির মতো কিছু আলেম ও ফকিহ্ (ইসলামি আইনশাস্ত্রবিদ) বাদ্যযন্ত্র সহযোগে শালীন সংগীতকে জায়েজ (বৈধ) বলেছেন।

সৌদি সরকার জোর দিয়ে বলছে, সাংস্কৃতিক শিক্ষা ইসলামি নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, বরং পরিপূরক।

অবকাঠামো, বাদ্যযন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিশ্চিত করার পর সৌদি আরবের সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে সংগীত শিক্ষা পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শিল্পকলার মাধ্যমে শিক্ষার আধুনিকীকরণ সৌদি আরবের বড় সংস্কার প্রচেষ্টার অংশ। এর মাধ্যমে দেশটি যুব সমাজের ক্ষমতায়ন এবং দেশকে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগী করে তুলতে চায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com