পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপরাষ্ট্র জাপান। এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ওখোৎস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও চীনের তাইওয়ান পর্যন্ত বিস্তৃতি। যে শব্দ থেকে জাপান নামটি এসেছে, সেই শব্দের অর্থ ‘সূর্য উত্স’। জাপানকে ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ বা ‘নিশিথ সূর্যের দেশ’ বলা হয়।
জাপান একটি যৌগিক আগ্নেয়গিরীময় দ্বীপমালার দেশ। এই দ্বীপমালা ৬,৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ হল হোনশু, হোক্কাইদো, ক্যুশু ও শিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭% এলাকা নিয়ে গঠিত। জাপানের জনসংখ্যা ১২৬ মিলিয়ন। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন। এই শহরটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার ২য় বৃহত্তম মূল শহর। টোকিও ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত বৃহত্তর টোকিও অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক মহানগরী।
জলবায়ু:
জাপানের জলবায়ু প্রধানত নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। তবে উত্তর থেকে দক্ষিণে জলবায়ুর মধ্যে বিরাট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। জাপানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলি ছয়টি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে বিভাজিত হয়েছে। এগুলি হলো: হোক্কাইডো, জাপান সাগর, কেন্দ্রীয় উচ্চভূমি, সেতো অন্তর্দেশীয় সাগর, প্রশান্ত মহাসাগর ও র্যু ক্যু দ্বীপপুঞ্জ। সবচয়ে উত্তরে অবস্থিত অঞ্চল হোক্কাইডোতে আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু দেখা যায়। এখানে শীতকাল দীর্ঘ ও শীতল এবং গ্রীষ্মকাল খুব উষ্ণ থেকে শীতল। এখানে ভারী বৃষ্টিপাত দেখা যায় না। তবে শীতকালে দ্বীপগুলি গভীর তুষারের চাদরে আচ্ছাদিত হয়ে থাকে।
জাপান সাগর অঞ্চলটি হোনশুর পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। এখানে উত্তরপশ্চিম শীতকালীন বায়ুর প্রভাবে ভারী তুষারপাত হয়। গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার তুলনায় শীতল থাকে। যদিও কখনও কখনও এই অঞ্চলটি অত্যধিক উষ্ণ হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় উচ্চভূমি অঞ্চলে অন্তর্দেশীয় আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু দেখা যায়। এখানে গ্রীষ্ম ও শীতে এবং দিনে ও রাতে তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্য দেখা যায়। এই অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত হয়। যদিও শীতকালে সাধারণত তুষারপাত ঘটে। চুউগোকু ও শিকোকু অঞ্চলের পার্বত্য এলাকা সেতো অন্তর্দেশীয় সাগর অঞ্চলকে মৌসুমি বায়ুর হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে এই অঞ্চলে সারা বছরই আবহাওয়া মনোরম থাকে।
টোকিও স্টেশনে শিনকানসেন, জাপানের দ্রুততম এবং বিশ্বের অন্যতম দ্রুত ট্রেন।
জাপানের পরিবহন ব্যবস্থা অত্যাধুনিক এবং পরিবহন অবকাঠামো ব্যয়বহুল। জাপানে সড়ক নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়। সমগ্র দেশে বিস্তৃত ১.২ মিলিয়ন কিলোমিটারের পাকারাস্তাই হলো জাপানের প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা। জাপানের বামহাতি ট্রাফিক পদ্ধতি। বড় শহরে যাতায়াতের জন্য নির্মিত সড়কসমূহ ব্যবহারের জন্য সাধারণত টোল নেয়া হয়।
জাপানে বেশ কয়েকটি রেলওয়ে কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগীতা বিদ্যমান। এসব রেল কোম্পানির মধ্যে জাপান রেলওয়েস গ্রুপ, কিনটেটসু কর্পোরেশন, সেইবু রেলওয়ে, কেইও কর্পোরেশন উল্লেখযোগ্য। এসব কোম্পানি রেল পরিবহনকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে; যেমন- রেল স্টেশনে খুচরা দোকান স্থাপন। প্রায় ২৫০ কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত শিনকানসেন জাপানের প্রধান শহরগুলোকে সংযুক্ত করেছে। এ ছাড়া অন্যান্য রেল কোম্পানিও সময়ানুবর্তিতার জন্য সুপরিচিত।
বিমানবন্দর হলো হানেদা বিমানবন্দর। এটি এশিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর। জাপানের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলনারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অন্যান্য বড় বিমানবন্দরের মধ্যে রয়েছে কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শুবু সেন্ট্রেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। জাপানের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর হলনাগোয়া বন্দর।
যেসব স্থান ভ্রমণ করতে পারবেন ফ্রিতে
হিরোশিমা
হিরোশিমা পিস পার্কে ঘুরে বেড়াতে পারবেন ইচ্ছেমতো। এর জাদুঘরটিও ফ্রিই বলা চলে, প্রবেশমূল্য মাত্র ৫০ ইয়েন। এখানে মাযদা জাদুঘরে বেড়ানো, পার্শ্ববর্তী মিয়াজিমাতে ডাইশন মন্দির, ফুসিমি ইনারি মঠে বেড়ানো সত্যিই আনন্দদায়ক। প্রাচীন প্রাসাদ এবং ভিলার দেখা পাবেন বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে আছে কিয়োটো ইম্পেরিয়াল প্যালেস, সেন্টো প্যালেস, কাটসুরা ভিলা, সুগাকিন ভিলা ইত্যাদি। কাছেই আছে নিশিকি মার্কেট। হেঁটে বেড়াতে পারেন দার্শনিকদের পথ ধরে আর ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন ঐতিহাসিক জায়গাগুলো।
নারা
ইয়োশিকিন, হাইজো প্যালেস তো দেখবেনই। হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়াবেন নারা পার্ক এবং নারামিচি।
টোকিও
সুকিজি মার্কেট, মিজি মঠ, ইম্পেরিয়াল প্যালেস আর ইস্ট গার্ডেন, সেনসজি টেম্পল, টোকিও গভর্নমেন্ট অফিসের অবজার্ভেশন ডেক এই সবই বিনামূল্যে ঘুরে বেড়াতে পারবেন আপনি। সাথে সিনজুকু, সিবুয়া, হারাজুকু, আকিহাবারা আর গিনঞ্জায় করুন কেনাকাটা, ঘুরাঘুরি।
সমুদ্র তীরের শহর মিনাতো মিরাই, সংক্ষেপে এমএম, ইয়োকোহামার বাণিজ্যিক শহর এটি। রাতে যেন রূপ নেয় জাদুর শহরে। ইয়োকোহামায় আছে কিরিন বিয়ার ভিলেজ। যেতে পারেন চায়না টাউন, ইয়ামাসিতা পার্ক, ওসানবাশি পিয়ারসহ আরও অনেক জায়গায়।
যেসব স্থান ভ্রমণে বিদেশিরা ডিসকাউন্ট পান:
জাপান ভ্রমণে বিভিন্ন ডিস্কাউন্ট অফার পেতে পারেন। বিদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য এমন অনেক অফার থাকে। যেমন, টবু নিক্কো ফ্রি পাস। নিক্কো এবং কিনুগাওয়া এলাকায় ভ্রমণ করতে পারবেন এই পাস ব্যবহার করে। নারার বিভিন্ন জায়গাগুলো দেখার ক্ষেত্রেও পাওয়া যায় এমন ডিসকাউন্ট। এজন্য আপনাকে পর্যটক তথ্যকেন্দ্রে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে কোনো অফার চলছে কিনা। অবশ্যই আপনার পাসপোর্টটি সঙ্গে রাখবেন। বাস, ট্রেন, মেট্রোর অনেক ধরনের অফার এবং ডে টিকেট পাওয়া যায়। মেট্রোর ডে টিকেট দিয়ে আপনি যতবার খুশি মেট্রোতে উঠতে বা নামতে পারবেন আর ঘুরে বেড়াতে পারবেন টোকিওর এ-মাথা থেকে ও-মাথা।
শিশু এবং বয়স্কদের জন্য
কিছু জায়গা আছে যেখানে ১২ বছরের কম বয়সীরা ছাড় পেয়ে থাকে। আবার কিছু জায়গায় ডিসকাউন্ট অফারটি থাকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানো ছাত্রছাত্রীদের জন্যও। প্রবীণ ব্যক্তিরা ৬৫ বছরের বেশি হলে ছাড় পেয়ে থাকেন।
জাদুঘর পাস
টোকিওর ৬০ টি জাদুঘর এবং চিড়িয়াখানায় বিনামূল্যে ঘুরতে পারবেন আপনি এই পাসটি থাকলে। পাসটির মূল্য ২০০০ ইয়েন। এটি পাবেন এপ্রিল থেকে জানুয়ারি। প্রথমবার ব্যবহারের পর ২ মাস এর মেয়াদ থাকে। কানসাই এলাকা ঘুরে বেড়াতেও এমন একটি পাসের সহযোগিতা পাবেন।