মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ অপরাহ্ন

চাকরি ছাড়তে সহযোগিতাকারী কোম্পানির দিকে ঝুঁকছেন জাপানিরা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ওয়ার্কোহলিক বা কাজপাগল জাতি হিসেবে পরিচিতি রয়েছে জাপানিদের। কাজের প্রতি তাদের নিবেদন এতটাই যে অনেক সময় নিজের চাকরি বা কর্মস্থল পছন্দ না হওয়া সত্ত্বেও মানসিক দ্বিধা-দোলাচলের কারণে অনেকেই চাকরি ছাড়তে পারেন না।

এই জাপানিদের সহযোগিতা করতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন কোম্পানি। ‘এক্সিট’ সেসবের মধ্যে অন্যতম। চাকরি ছাড়তে ইচ্ছুক জাপানিদের অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ করে এই কোম্পানি। কোনো ব্যক্তি যদি সেই এক্সিটে যোগাযোগ করে বলেন যে তিনি তার বর্তমান কর্মস্থল ত্যাগ করতে চান এবং এক্ষেত্রে তিনি এক্সিটের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন— সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির প্রতিনিধি হিসেবে কর্মস্থল কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে এক্সিট এবং জানিয়ে দেয় যে তাদের ক্লায়েন্ট আর সেখানে কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চাকরি ছাড়তে ইচ্ছুক ওই ব্যক্তি কবে তার কর্মস্থলে শেষ কার্যদিবস কাটাবেন, সেই তারিখও কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয় এক্সিট।

২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে এক্সিট। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার ব্যক্তিকে চাকরি ছাড়তে সহযোগিতা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এই পরিষেবাবাবদ প্রত্যেক ক্লায়েন্টের কাছ থেকে সম্মানি হিসেবে ২০ হাজার ইয়েন (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬ হাজার ৫৮৬ টাকা) নেয় এক্সিট।

এই খাতে জাপানের প্রথম কোম্পানি এক্সিট। তারপর অবশ্য ‘অ্যালবাট্রস’ এবং ‘মোমুরি’ নামে আরও দু’টি কোম্পানি এসেছে এবং বর্তমানে তারা রীতিমতো এক্সিটের প্রতিদ্বন্দ্বী।

এক্সিট কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠানতা তোশিইউকি নিনো (৩০) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানান, সাধারণত বস বা উর্ধ্বতন কর্তার কঠোর আচরণ, ওভারটাইম পরিশোধ না করা এবং ছুটি না পাওয়া জনিত কারণে চাকরি ছাড়েন জাপানিরা।

তবে এই সমস্যাগুলো সব দেশের চাকরিস্থলেই রয়েছে এবং অন্যান্য দেশের চাকরিজীবীরা অন্য কারো সহযোগিতা ছাড়াই চাকরি ছাড়েন। সেক্ষেত্রে জাপানিদের কেন সহযোগিতাকারীর প্রয়োজন হয়— ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এ প্রশ্নের উত্তরে তোশিইউকি নিনো বলেন, “অধিকাংশ জাপানি তর্ক করা বা দৃঢ়ভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে দক্ষ নন। এটা শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটি দেখা যায়। আমাদের সংস্কৃতিতেই আসলে মুখে মুখে তর্ক করা বা দৃঢ়ভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করার ব্যাপারটি নেই।”

“অফিসের উধ্বংতন কর্তা বা কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারটি জানেন এবং অনেক সময় তারা এটির সুযোগ নেন। কর্মচারীদের ওপর তারা নানাভাবে চাপে রাখেন এবং চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য করেন। এসব কারণে যারা সত্যিই চাকরি ছাড়তে চান, তারা আমাদের সহযোগিতা কামনা করেন এবং আমরাও আমাদের জায়গা থেকে যতখানি সম্ভব—সহযোগিতা করি।”

আরেক কোম্পানি অ্যালবাট্রসের কর্মকর্তা আইউমি সেকিনে জানান, তিনি নিজেই এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তিনি বলেন, “আমি একটি গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করতাম। ব্যক্তিগত কারণে আমি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং আমার বসকে জানাই। কিন্তু বস শুনেই বেঁকে বসলেন এবং বললেন যে তিনি কোনোভাবেই আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন না।”

“আমাদের এ বিষয়ক কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমি কাঁদতে থাকি এবং তিনি যেন আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন, সেজন্য তার কাছে হাতজোড় করে মিনতি জানাতে থাকি। প্রচুর কান্নাকাটি করার পর বস আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে রাজি হন।”

সূত্র : ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com