২০২১ সালে আইনপ্রণেতারা সপ্তাহে কর্মদিবস কমানোর প্রস্তাব আনলে প্রথম এই ধারণাটিকে সমর্থন দেয় জাপান সরকার।
যদিও এই প্রস্তাবটি গ্রহণে জাপানের কোম্পানিগুলো ‘ধীরে চলো’ নীতিই অবলম্বন করেছিল। দেশটির স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, প্রায় ৮ শতাংশ কোম্পানি কর্মীদের সপ্তাহে তিন দিন বা তার বেশি ছুটি দেয়। আর ৭ শতাংশ কোম্পানি সপ্তাহে একদিনের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়।
সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দেওয়া কোম্পানির সংখ্যা যাতে বাড়ে, সেজন্য ‘ওয়ার্ক স্টাইল রিফর্ম’ নামক কর্মসূচি নিয়েছে জাপান সরকার। এ কর্মসূচির আওতায় কর্মঘণ্টা কমানো, সুবিধামতো কাজের শিডিউল ফেলা এবং সবেতন বার্ষিক ছুটি দেওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। শ্রম মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ফ্রি কাউন্সেলিং ও অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি এরকম পরিবর্তন এনে সাফল্য পাওয়া কোম্পানির গল্প জানাচ্ছে।
তবে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি কোম্পানি এ কর্মসূচির আওতায় পরিবর্তন আনতে পরামর্শ নেওয়ার জন্য এসেছে।
বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্যানাসনিক হোল্ডিংস কর্প সপ্তাহে তিন দিন ছুটি নেওয়ার সুবিধা চালু করেছে। কিন্তু কোম্পানিটির ৬৩ হাজার কর্মীর মধ্যে মাত্র ১৫০ জন এখন পর্যন্ত এ সুবিধা নিয়েছেন।
জাপানের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবেই কাজপাগল। দেশটিতে মুখ গুঁজে বেশি সময় কাজ করার বিষয়টিকে প্রশংসার চোখে দেখা হয়। জাপানিদের সাধারণ ধারণা হলো, কোম্পানির জন্য ব্যক্তিগত সময় বিসর্জন দেওয়া যায়।
তবে জাপান সরকার এখন জনগণের কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনে ‘স্বাস্থ্যকর’ ভারসাম্য আনতে চাইছে।
দীর্ঘ সময় কাজ করা জাপানিদের প্রথা। যদিও ৮৫ শতাংশ কোম্পানি জানিয়েছে, তারা তাদের কর্মীদের সপ্তাহে দুই দিন ছুটি দেয়। কর্মীরা কতক্ষণ ওভারটাইম করতে পারবেন, সে বিষয়েও বিধিনিষেধ আছে। তবে জাপানিরা ‘সার্ভিস ওভারটাইম’ করে থাকেন—এর অর্থ, এসব ওভারটাইম নথিভুক্ত করা হয় না এবং এ কাজে তারা কোনো অর্থও পান না।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক সরকারি শ্বেতপত্রের তথ্যানুসারে, চলতি বছর জাপানে অতিরিক্ত কাজ করে অন্তত ৫৪ জন মারা গেছেন।
কিছু কর্মকর্তা মনে করেন, শক্তিশালী শ্রমশক্তি ধরে রাখার জন্য জাপানিদের অতিরিক্ত কাজ করার এই মানসিকতা বদলাতে হবে। কারণ দেশটির জন্মহার দ্রুত কমছে। জন্মহার কমার পেছনে দেশটির মানুষের কাজের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়াকেই বড় কারণ মনে করা হচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে ২০৬৫ সাল নাগাদ জাপানের কাজ করতে সক্ষম জনসংখ্যা ৪০ শতাংশ কমে সাড়ে ৪ কোটিতে নেমে আসবে। বর্তমানে এই সংখ্যা ৭ কোটি ৪ লাখ।
সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দেওয়ার সমর্থকরা বলছেন, এতে মানুষ সন্তান লালনপালন করতে এবং প্রবীণ আত্মীয়দের দেখাশোনা করতে উৎসাহিত হবে। এছাড়া অবসরে যাওয়া মানুষও চাইলে আরেকটু বেশি দিন কাজ করার সুযোগ পাবেন।