মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন

পদ্মা সেতু: বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বরিশালের পর্যটনে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩

পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে দেশের গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যখানে থাকা বরিশাল বিভাগ প্রবেশ করতে যাচ্ছে সোনালি সম্ভাবনার যুগে। আর এরমধ্য দিয়ে গোটা বরিশাল বিভাগে শিল্পায়নের যাত্রা শুরু হওয়ার পাশাপাশি পর্যটনখাতেও ঘটবে বিকাশ।

দ্য বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বরিশাল বিভাগে শুধু সড়ক যোগাযোগে উন্নত ব্যবস্থার অভাবের কারণে এতদিন পর্যটনখাতে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে। তবে বর্তমান সরকার সময়ের সাথে সাথে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনে সেই সাগরপাড়ের কুয়াকাটা থেকে শেখ রাসেল সেতু, শেখ জামাল সেতু, শেখ কামাল সেতু, পায়রা সেতু, খয়রাবাদ সেতু, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু এবং সর্বশেষ পদ্মা ও পিরোজপুরের বেকিটুয়ায় অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাজ সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু এবং এর কয়েকদিন পরেই হয়তো অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আর এসব সেতুতে যান চলাচলের মধ্য দিয়ে সময় বাঁচবে এবং ভোগান্তি কমবে। যা অন্য সকল কিছুর পাশাপাশি পর্যটনবান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

তিনি বলেন, গোটা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের পর্যটনের বিকাশ ঘটেছে। তবে বৃহত্তর বরিশালে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের পাশাপাশি বিখ্যাত লাল-শাপলার বিল, নদী-খালে ভাসমান হাট-বাজার, ভোলা ও পটুয়াখালীর নদী ও সাগর বেষ্টিত ছোট ছোট দ্বীপ, সাগরকন্যা কুয়াকাটা, উপকূলীয় বন এলাকাসহ পর্যটনের নানান কিছু রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি পরিকল্পিত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে গোটা বরিশালের পর্যটনখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আমাদের পার্শবর্তী দেশ মালদ্বীপের জিডিপিতে শতভাগ অবদান তাদের পর্যটনের, নেপালের ৫৫ শতাংশ এবং ভারতেরও ১৮ শতাংশ রয়েছে। আর বাংলাদেশের পর্যটনের যে চিত্র তাতে জিডিপিতে ৩ শতাংশেরও কম অবদান রয়েছে এ খাতের। পর্যটনখাতে কর্মসংস্থানেও আমরা মাত্র ২ শতাংশের কাছাকাছি। যেখানে ওয়ার্ল্ড জিডিপিতে ১১ শতাংশ অবদান করে পর্যটন এবং ১০ শতাংশ কর্মসংস্থান হয় পর্যটনখাতে।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে ১৬০ কোটির মতো ট্যুরিস্ট রয়েছে। প্রতি সাতজনের একজন হলো পর্যটক। সেখানে বর্তমানে ৭৫ শতাংশ পর্যটক মুভমেন্ট করে ইউরোপ আমেরিকায়। আমরা স্টাডিতে দেখেছি, ২০৫০ সালে ৭৫ শতাংশ পর্যটক এশিয়াতে আসবে। ফলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রচুর বিদেশি পর্যটক আসবে। পৃথিবীর ৮০ শতাংশ দেশে সারাবছর ঘুরে বেড়ানো যায় না। বাকি ২০ শতাংশ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে আপনি সারাবছর ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এটাও পর্যটকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু পর্যটনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে। পদ্মা সেতুর কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি হাজার হাজার অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সমাগম হচ্ছে সেখানে। আর এ সেতুটা চালু হলে রাজধানী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রচুর পর্যটক আসবে। পাশাপাশি পায়রা ও মোংলা বন্দরের কারণে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকেও প্রচুর পর্যটক আসবে এবং পর্যটনের সুন্দর জায়গা সৃস্টি হবে।

তিনি বলেন, আমরা জানি কুয়াকাটা দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত, তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত হচ্ছে ভোলা, যেটা আমরা অনেকেই জানতাম না। মালদ্বীপে যে ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোতে ঘিরে পর্যটনের উন্নয়ন করা হয়েছে; ভোলাতেও সেটা সম্ভব।

তবে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, বরিশালকে ভেনিস বানানো যাবে না, কারণ ভেনিসের খালগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে এটাকে পর্যটনের জন্য অনেক আকর্ষণীয় করে তোলা যাবে। ট্যুরিজমে আমি বিশ্বাস করি, তবে এটা ধীরে ধীরে হবে। ন্যাশনাল লেভেল ট্যুরিজম হলে সেটা ইন্টারন্যাশনাল হবে।

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাসিন্দা একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশ গুপ্ত বলেন, হেমন্ত-শীতে কুয়াশা, গ্রীষ্মে ঝড়-বৃষ্টি, শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে উত্তাল নদ-নদী—এভাবে যুগ যুগ ধরে রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সঙ্গে যোগাযোগে প্রকৃতির কাছে জিম্মি ছিল বরিশাল-খুলনা অঞ্চল। স্থল-নৌ-আকাশ পথে চলাচলে যখন তখন বিধিনিষেধ জারি হয় ‘১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত’ দিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতু যেন প্রচণ্ড দাবদাহে এক পশলা বৃষ্টিতে বয়ে আনা কোমল সুবাতাস। তবে কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা নয়, এ প্রকল্পের আর্থ-সামাজিক প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারি। শুরুর দিকেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে প্রতি দিন গাড়ি চলবে ২৪-২৫ হাজার। ২০৫০ সালে প্রতিদিন গাড়ি চলবে ৬৭ হাজার।

তিনি বলেন, এখন পর্যটন খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। কুয়াকাটা সৈকতের আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি নদ-নদী বিধৌত বরিশাল অঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী সুন্দরবনকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। স্বরূপকাঠি-বানারীপাড়া অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নৌকায় ভাসমান বাজারকেও সারা বছর সচল রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com