মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন

সিডনির সৈকতে ভাস্কর্যের মেলা

  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩

অস্ট্রেলিয়ায় সিডনির বন্ডাই সমুদ্র সৈকতে ‘স্কাল্পচার বাই দ্য সি’ শিরোনামে চলছে ভাস্কর্যের মেলা। বন্ডাই সৈকত থেকে শুরু করে সাগরের উপকূল ধরে তামারাম সৈকত পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে এই ভাস্কর্যগুলো।

গত ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এটা এই আয়োজনের ২৫তম বছর। প্রদর্শনী শেষে বিজয়ী ভাস্করদের পুরস্কৃত করা হয়।

১৯৯৭ সালে মাত্র একদিনের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ ভাস্কর্যের মেলা। তখন মাত্র ৬৪জন শিল্পীর ভাস্কর্য প্রদর্শন করা হয়েছিল। প্রায় ২৫ হাজার দর্শনার্থী সেগুলো দেখতে এসেছিল। এ মেলার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কার্যনির্বাহী হলেন ডেভিড হ্যান্ডলি।

এবছর ৫১ দেশের ১ হাজারেরও বেশি শিল্পীর প্রায় ২ হাজার ৭০০ ভাস্কর্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। আর মার্কস পার্কে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী জাদুঘর- যারা হেঁটে হেঁটে দেখতে পারবেন না, তারা এখানে এসে সব ভাস্কর্য একসঙ্গে দেখতে পারবেন। অবশ্য এগুলো আসল ভাস্কর্যের মিনিয়েচার মাত্র।

প্রত্যেকটা ভাস্কর্যই আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে। আশপাশের নিত্যকার বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করবে। আমি কোন বিদগ্ধ শিল্পবোদ্ধা নই, সাধারণ দৃষ্টিতে ভাস্কর্যগুলো দেখেছি। তারপরও আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আর প্রত্যেকটা ভাস্কর্যেরই আছে চমৎকার একটা শিরোনাম। তাই ভাস্কর্যের অর্থ না বুঝলেও শিরোনাম দেখলেই মনে আলোর ঝলক দেখা দেবে। একটা অর্থ ধরা দেবে, অবশ্য সেটাই যে একমাত্র অর্থ তাও ঠিক নয়।

<div class="paragraphs"><p>জীবনের কোনকিছুই স্থায়ী নয়</p></div>

জীবনের কোনকিছুই স্থায়ী নয়

ভাস্কর্যগুলো সব বয়সী দর্শনার্থীকেই আনন্দ দেবে বলে আমার বিশ্বাস। আর প্রত্যেকটা ভাস্কর্যের পাশেই চিহ্ন দেওয়া আছে সেটা হাত দিয়ে ছোঁয়া যাবে কিনা। অনেকগুলো ভাস্কর্য আছে যেটা দেখেই শিশুরা চড়ে বসতে চাইবে। কিছু ভাস্কর্য আছে যেটা বড়দেরকে চিন্তার জগতে নিয়ে যাবে, গৎবাঁধা জীবনের বাইরের জীবন সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করবে। উপকূল ধরে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে আপনি যেন অন্য কোন এক জগতে চলে গেছেন। চাইলে আপনি এই ভাস্কর্যগুলো কিনতেও পারবেন। তবে দামের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। যদিও শিল্পের কোন মূল্য হয় না।

কয়েকটা ভাস্কর্যের একটু বর্ণনা দেওয়া যেতে পারে, অবশ্য এগুলো নিতান্তই আমার কল্পনাবিলাসী মনের ভাবনামাত্র। প্রদর্শনীর প্রথম ভাস্কর্যটা হচ্ছে একটা বেগুনি রঙের বিলবোর্ড। তার গায়ে লাল কালি দিয়ে লেখা ‘এভরিথিং মাস্ট গো’। এটা দেখেই আমার মনে হয়েছে জীবনের কোন কিছুই স্থায়ী নয়। সবকিছুই একসময় আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায়। এটা দেখার পর নাগরিক জীবনের নিত্যকার ব্যস্ততা নিয়ে আপনি ভাবতে বসে যাবেন, মনে হবে আসলেই তো আমি এখানে ছিলাম না, আবার একসময় থাকবোও না। জীবনের সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী, এমনকি জীবন নিজেও ক্ষণস্থায়ী।

<div class="paragraphs"><p>বাবার জুতোর গন্ধ যেন হাজার ফুলের সৌরভ</p></div>

বাবার জুতোর গন্ধ যেন হাজার ফুলের সৌরভ

দ্বিতীয় ভাস্কর্যটার শিরোনাম ‘ফায়ার অ্যান্ড লাইটনিং’। এটা যেন আগুনের সঙ্গে বজ্রপাতের একটা সম্পর্ক তৈরি করছে। তৃতীয় ভাস্কর্যটির নাম ‘মাই ফাদার’স বুট’। অনেক জুতোর মধ্যে থাকে গন্ধযুক্ত মোজা। কিন্তু আমাদের বাবার জুতো যেন জীবনযাপনের সব উপাদানে সমৃদ্ধ। সেখানেই জমা থাকে আমাদের জন্য ভালোবাসা। তাই বাবার জুতোর দুর্গন্ধ যেন আমাদের কাছে হাজার ফুলের সৌরভ হয়ে ধরা দেয়।

<div class="paragraphs"><p>নিজেকে উচ্চতা ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে</p></div>

নিজেকে উচ্চতা ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে

সপ্তম ভাস্কর্যটির নাম ‘ডিগনিটি’। খুব সাধারণ একটা নীল বর্ণের ঘোড়া এটি। এর মধ্য দিয়ে দর্শনার্থী নিজের মানসিক উচ্চতা ও মর্যাদার বিষয়টি অনুভব করতে পারবেন। আর এটি স্থাপন করাও হয়েছে একটা আলাদা উঁচু স্থানে। পনেরতম ভাস্কর্যের নাম ‘ব্রিদিং স্পেস’। একটা বেঞ্চের উপর মাত্র একটা বসার মাদুর রেখে এটা তৈরি করা হয়েছে। জীবনকে অনুভব করতে হলে আমাদেরকে থামতে হবে। আর থামার জন্য আমাদের বেশি কিছু করার দরকার নেই।

<div class="paragraphs"><p>জীবনে ভারসাম্য রাখাও জরুরি</p></div>

জীবনে ভারসাম্য রাখাও জরুরি

উনিশতম ভাস্কর্যের নাম ‘জায়ান্ট ইন দ্য ফরেস্ট’, একটা বিশালাকার গরিলা দর্শনার্থীদের দিকে চেয়ে বসে আছে। আমরা দিনে দিনে বনভূমি ধ্বংস করে নগর নির্মাণ করছি। আর এখন প্রকৃতি তার শোধ নিচ্ছে। বনভূমির বাসিন্দারা যেন চেয়ে চেয়ে সেটাই দেখছে। বাইশতম ভাস্কর্যের নাম ‘দ্য টপ অফ ব্যালান্স’। একজন হাসিমুখের উলঙ্গ বালক মাথায় একটা কাচের গোলক নিয়ে দর্শনার্থীদের দিকে চেয়ে মুচকি হাসছে। আর দুই হাত দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকার চেষ্টা করছে। এটা যেন আমাদের নির্মিত সভ্যতার দিকে শিশুদের ঠাট্টা করা।

<div class="paragraphs"><p>গভীরভাবে কোনকিছু দেখার অন্তর্দৃষ্টি থাকতে হবে</p></div>

গভীরভাবে কোনকিছু দেখার অন্তর্দৃষ্টি থাকতে হবে

ছাব্বিশতম ভাস্কর্যের শিরোনাম ‘প্যাপার বা প্রোটেকশন’। অনেকগুলো কাঠকে মানুষের আকৃতি দিয়ে উপকূল জুড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এটা দেখে আমার ছোটবেলায় শেখা সেই প্ৰবাদটার কথা মনে হয়েছে- ‘একতাই বল’। ঊনচল্লিশতম ভাস্কর্যটির নাম ‘আই পুট অ্যা মুন অন দ্য টেবিল, সামওয়ান ইজ লিভিং অন ইট’। আমরা যদি কোন কিছুকে খুব ভালোভাবে দেখি তাহলে তার অন্যান্য অর্থগুলোও আমাদের সামনে মূর্ত হয়ে ওঠে। ছেচল্লিশতম ভাস্কর্যের নাম ‘ফ্যামিলি’। এটা যেন পুরো পৃথিবীকে একটা পরিবার হিসেবে দেখার এবং সবাইকে ভালোবাসার একটা চেষ্টা।

<div class="paragraphs"><p>জীবনের শুরু ও শেষের দরজা</p></div>

জীবনের শুরু ও শেষের দরজা

আটচল্লিশতম ভাস্কর্যটার নাম ‘অ্যা ব্রিজ টু ফার’। একটা দাঁড়িপাল্লার উপর একদিকে আছে বাড়ি আর একদিকে আছে একটা মেঘ। আমাদের নগর জীবনের দর্পণ যেন এই ভাস্কর্য। জীবনে ভারসাম্য খুবই জরুরি। আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে আপনি কতটা বস্তুবাদী, আর কতটা ভাববাদী হবেন। একান্নতমটির নাম ‘ডোরওয়েস’। এটা জীবনের শুরু ও শেষের ইঙ্গিতবাহী একটা ভাস্কর্য। জীবন শুরু হয় একটা দরজা দিয়ে, আবার শেষ হয় আরেকটা দরজা দিয়ে। আটান্নতমটির নাম ‘লাইক দ্য ক্লাউডস’, এটা যেন আমাদের জীবনের ‘যেমন কর্ম তেমন ফলের’ সার্থক রূপায়ণ।

বন্ডাই সৈকতজুড়ে মানুষের ভিড়। সেটাকে পাশ কাটিয়ে আমরা হাঁটা শুরু করলাম। উপকূল ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমরা গিয়ে পৌঁছলাম মার্কস পার্কে। সেখানে মাঠের মধ্যে একসঙ্গে অনেকগুলো ভাস্কর্য প্ৰদৰ্শন করা হচ্ছে। একজন তরুণ হেঁটে হেঁটে স্যাক্সোফোন বাজিয়ে যাচ্ছে মনের আনন্দে। তার সঙ্গে পরিচয় হলো। স্যাক্সোফোনের শব্দ ভাস্কর্যগুলোর সৌন্দর্য যেন অনেকগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। জীবন থেকে হারিয়ে জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার জন্য আপনি কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন ভাস্কর্যের এই মেলাতে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com