যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের এক ছবির মতো ছিমছাম সুন্দর শহর পমফ্রেট। উত্তর দিক থেকে একটি পাহাড়ি সড়ক এঁকেবেঁকে নিচে নেমে এসেছে। পথের দুই পাশে সবুজ মাঠে ঘুরছে সাদা ভেড়ার পাল। কোথাও বা ছোট ছোট বন, যেখানে শরতের লাল ও কমলা পাতাগুলো যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। শহরের বাসিন্দার সংখ্যা মাত্র ৯০০!
এই পর্যন্ত বর্ণনা পড়ে শহরটিকে শান্তির নীড় মনে হলে কাউকেই দোষ দেওয়া যাবে না। কিন্তু পমফ্রেটের সৌন্দর্যই হয়েছে তার জন্য বিপদ। প্রকৃতি নিয়ে ছবি তোলা আলোকচিত্রী আর ইউটিউবার ধরনের সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সাররা দলে দলে ভিড় জমাতে শুরু করেছে এই নিভৃত জনপদে। সম্প্রতি দেখা গেছে, শহরটির মধ্য দিয়ে চলাচল করা অর্ধেকেরও বেশি গাড়ির নাম্বার প্লেট অন্য অঙ্গরাজ্যের!
পমফ্রেট শহরে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিতান্তই হাতে গোনা। একটি জেনারেল স্টোর, গ্যালারিসহ আর্ট সেন্টার, একটি থিয়েটার আর কয়েকটি নিজের হাতে বেছে কেনার আপেল বা কুমড়ার খামার্লদোকানপাট ব্যবসা বলতে এই-ই। শান্ত নিস্তরঙ্গ শহরবাসীর জীবন।
কিন্তু প্রতি শরতে সারা বিশ্ব থেকে হাজারও মানুষ এ অঞ্চলের ঢেউ খেলানো পাহাড় আর বনভূমির বর্ণিল পত্রপল্লবের রূপ উপভোগ করতে চড়াও হলে দৃশ্য বদলে যায় পুরোপুরি। তারপরও একসময় পমফ্রেটে ভিড়ের মাত্রা সহনীয় পর্যায়েই ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ১১৫ একর আয়তনের নয়নাভিরাম খামারবাড়ি স্লিপি হোলো ফার্মের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি স্থানীয়দের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ইনস্টাগ্রামে ঢু দিলে সপ্তদশ শতকের ওই ফার্ম হাউস আর তার আশপাশের দৃশ্যের হাজার হাজার ছবি পাওয়া যাবে। এ কারণেই এই একদা অখ্যাত খামারটি অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বেশি ছবি তোলা স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
পমফ্রেটের আর্টস সেন্টারের কর্মী ডেবোরা গুডউইন আক্ষেপ করে বলেছেন, এটি একটি দারুণ সুন্দর জায়গা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে।
বছর দুয়েক ধরে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ট্যুর বাসগুলো আসে আর ঝাঁকে ঝাঁকে লোক নামিয়ে দেয়।
গুডউইন জানান, জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা অহরহ ‘বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ’ লেখা গেট টপকে ওপারে যায়। অনেকে হরেক সাজে সাজতে পোশাক বদল করার চেঞ্জিং বুথ বসায়। তারা গ্রামীণ সরু কাঁচা রাস্তা আটকে রাখে শহুরে ঢাউস গাড়ি দিয়ে। রাস্তার পাশে মলমূত্র ফেলে এলাকা দূষিত করে তোলে।
পমফ্রেট বাসিন্দারা জোর দিয়ে বলছে, তারা পর্যটকবিরোধী নয়। অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতিতে পর্যটনের গুরুত্ব তারাও বোঝে। শুধু চায় মানুষ তাদের শহরটিকে সম্মান করুক। অন্যের জন্য সমস্যা সৃষ্টি না করুক।
সূত্র : বিবিসি।