যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, আতঙ্কে দুর্নীতিবাজ-সন্ত্রাসী ও সুবিধাবাদীরা
রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাবেক-বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গণমাধ্যমও আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে যুক্ত হবে। এতে আতঙ্ক শুরু হয়েছে সকল মহলে। রাজনীতিক দলের মধ্যে মধ্যে একে অন্যের দিকে এই পরিস্থিতির দায় দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অন্য দিকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাও রয়েছেন নিজ নিজ অন্যায়ের হিসাব-নিকাশ মেলাতে ব্যস্ত। আর নতুন করে গণমাধ্যমের ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য দুঃশ্চিন্তায় ফেলেছে সাংবাদিক নেতাদেরও।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রোববার এ কথা বলেছেন বলে বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাথে সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
টেলিভিশন স্টেশনটির কার্যালয়ে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সেখানে তিনি মার্কিন ভিসা নীতিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়েছিল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি।
ওই ঘোষণার প্রায় চার মাস পর গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ শুরুর ঘোষণা দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র দপ্তর শুক্রবার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী ও জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্য রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এসব ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অন্য ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির আওতায় ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্য রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এই বিবৃতি প্রকাশের পর সেদিন রাতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার গণমাধ্যমকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্যপ্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
তবে কাদের ওপর বা কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা জানাননি তিনি। এ বিষয়ে ব্রায়ান শিলার বলেন, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম তাঁরা প্রকাশ করবেন না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসাসংক্রান্ত তথ্য গোপনীয় বিষয়।
এর আগেই জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা দেওয়ার পর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এ তথ্য জানায়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, আজ পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী এবং তাতে সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাজনীতি, অর্থনীতিতে বড় প্রভাব
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করায় আওয়ামী লীগ সরকার একধরনের চাপে পড়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা প্রকাশ্যে চাপের বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার কথা বলছেন। অন্যদিকে বিএনপি এই পরিস্থিতির জন্য এককভাবে সরকারকে দায়ী করছে। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি অবশ্য মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ তাদের জন্য রাজনৈতিকভাবে কিছুটা সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগের বিষয়টিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকরের ঘোষণার খবরে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কারসাজির কারণে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছিল, সেগুলোর দামই আজ সবচেয়ে বেশি কমেছে। যেমন ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, অগ্রণী ইনস্যুরেন্স, ফু-ওয়াং ফুড ইত্যাদি। এসব কোম্পানির কোনো কোনোটির শেয়ারের দাম গত এক মাসে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এ ছাড়া কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজারের লেনদেন কেন্দ্রীভূত হয়ে গিয়েছিল বিমা খাতে। আজ এসব খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হওয়ায় লেনদেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।