মিশরীয় ধনকুবের মোহামেদ আল ফায়েদ ৯৪ বছর বয়সে মারা গেছেন। ব্রিটেনের স্থায়ী বাসিন্দা না হয়েও তিনি বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানকে বেকায়দায় ফেলতে ভয় পাননি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডনের কাছে সারে এলাকায় তার প্রাসাদ-সম বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে শুক্রবার তার মৃত্যু হয়।
মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরের রাস্তার ফেরিওয়ালা হিসেবে জীবিকা শুরু করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিশ্বের অন্যতম অভিজাত দোকান লন্ডনের হ্যারডস বা প্যারিসের ঐতিহ্যবাহী রিৎজ হোটেলের মালিক হয়েছিলেন তা রূপকথার কাহিনীর মতো।
বিদেশি হয়েও ব্রিটিশ ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিকে কখনও ভয় পাননি আল ফায়েদ। তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা এবং জটিল কৌশল ব্রিটিশ ক্ষমতাসীনদের একাধিকবার সমূলে নাড়া দিয়েছে। তার সঙ্গে অনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কনজারভেটিভ পার্টির তিনজন রাজনীতিকের রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটেছে।
প্যারিসে সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলের দোদি এবং প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর ঘটনাকে আল ফায়েদ সবসময় হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করে গেছেন। এজন্য তিনি খোলাখুলি প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী যুবরাজ ফিলিপস্ এবং এবং ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা এমআই-সিক্সকে দায়ী করেছিলেন। ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের তদন্তে অবশ্য ঐ সন্দেহের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মোহামেদ ফায়েদের জন্ম ১৯২৯ সালে মিশরের বন্দর শহর আলেকজান্দ্রিয়ার খুব সাধারণ একটি পরিবারে। রাস্তায় কোমল পানীয় ফেরি করা দিয়ে তার ব্যবসা জীবনের শুরু। কিন্তু ১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি তার কপাল খুলে যায় – যখন তিনি প্রখ্যাত সৌদি অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাসোগজির বোনকে বিয়ে করেন।
খাসোগজি তার বোনের স্বামীকে তার ব্যবসায় চাকরি দেন- যার ফলে মোহামেদ ফায়েদ উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশ ছাড়াও লন্ডনের প্রভাবশালী মহলে ঢোকার সুযোগ পেয়ে যান।
ষাটের দশকের শুরুতেই এই মিশরীয় প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক বনে যান। আরব শেখদের থেকে শুরু করে হেইতির কুখ্যাত স্বৈরাচারী শাসক দুভালিয়ারের মত লোকজনের সাথে নিয়মিত ওঠাবসা ছিল তার।
সেইসময় তিনি মিশরে একটি কোম্পানি খুলে জাহাজ পরিবহনের ব্যবসা শুরু করেন। পরে বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ব্রুনেই এর সুলতানের আর্থিক উপদেষ্টা হন।
১৯৭৪ সালে বসবাসের জন্য ব্রিটেনে এসে নিজের নামের সাথে আল শব্দটি যুক্ত করেন তিনি। এ নিয়ে ব্রিটেনের ব্যঙ্গ পত্রিকা প্রাইভেট আই সেসময় তাকে ‘নকল ফারাও’ বলে আখ্যায়িত করেছিল।
পাঁচ বছর পর ১৯৭৯ সালে ফায়েদ এবং তার ভাই আলি যৌথভাবে প্যারিসের ঐতিহ্যবাহী এবং অভিজাত হোটেল রিৎজ কিনে নেন। তার ছয় বছর পর, অন্যান্য প্রতিযোগীদের টেক্কা দিয়ে তিনি লন্ডনে বিশ্বের অন্যতম অভিজাত দোকান হ্যারডস কিনে নেন।