অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ফিরতে শুরু করেছে। তবে, যতোটা আশা করা হয়েছিল, তাদের আগমনের হার তার চেয়ে কম।
ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন, স্কিলস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট (DESE) এসবিএস পাঞ্জাবি-কে জানিয়েছে, মার্চ-২০২২ নাগাদ কোর্স শুরু করেছে ১২৩,৯০০ শিক্ষার্থী, যা ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি।
- অস্ট্রেলিয়ায় ধীরে ধীরে ফিরে আসছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষার্থী-সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবে অস্ট্রেলিয়া।
- জানুয়ারি-২০২২ এ ভিসা-আবেদন সংখ্যা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। তাই, স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যুর জন্য অপেক্ষার পালা বাড়ছে।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ইতোমধ্যে হ্রাস পেয়েছে।
- ব্রাইটন ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি মেলবোর্নের সিইও অন্তরপ্রীত সিখন এসবিএস পাঞ্জাবি-কে বলেন, “ভর্তির হার ধীরে ধীরে বাড়ছে, তবে বহু ভিসাই অনুমোদিত হচ্ছে না।”
মিস্টার সিখনের প্রাইভেট কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। বিগত দুই বছর ধরে তারা অসুবিধার মধ্যে আছে।
“কলেজে ভর্তির হার অনেক কমে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদিও এই পরিস্থিতি একটু ভালভাবে কাটিয়ে উঠছে। তবে প্রাইভেট রেজিস্টার্ড ট্রেইনিং অর্গানাইজেশনস বা আর-টি-ও গুলো এখন আর বেশি আবেদন পাচ্ছে না যতোটা তারা এর আগে পেত।”
তিনি বলেন, আগামী জুলাই সেশনের জন্য তার প্রতিষ্ঠানে আবেদন-সংখ্যা একটু খানি বেড়েছে। আর, তিনি আশা করছেন যে, এ বছরের শেষ নাগাদ এই খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
In Australia, education plays an integral role in immigration. Source: Amarjeet Kumar Singh / SOPA Imag
DESE এর তথ্য অনুসারে, মার্চ-২০২২ পর্যন্ত এ বছরে ৪৪০,১২৯ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে; ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় যা ১৫ শতাংশ কম।
মিস্টার সিখন বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ফিরে আসছে। তবে, এক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীর গতিতে।
তিনি বলেন, “অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে যদি আমরা তুলনা করি, যেমন, কানাডা, সেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির পরিস্থিতি খুবই দ্রুত উন্নতি করেছে। এমনকি এক্ষেত্রে তাদের ২০১৯ সালের রেকর্ডও ভেঙ্গে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভিসার জন্য অনেকেই দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন। শিক্ষা খাতে সহায়তার জন্য সরকারের উচিত তাদের প্রতি নজর দেওয়া।”
ফার্স্ট কোয়ার্টার বা প্রথম ত্রৈমাসিক পর্বে ধীরগতির কারণ
অ্যাসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়ান এডুকেশন রিপ্রেজেন্টেটিভস ইন ইনডিয়া (AAERI) এর প্রেসিডেন্ট রবি লোচন সিং এসবিএস পাঞ্জাবি-কে বলেন, ২০২২ সালে প্রথম দফায় আগতদের মাঝে মূলত সে-সব শিক্ষার্থীরাই ছিল, যাদের আগে থেকেই ভিসা ছিল, যারা অনলাইন-শিক্ষণ করছিল এবং যারা কোভিড-১৯ এর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভ্রমণ করতে পারছিল না।
“সেখানে এমন কিছু শিক্ষার্থীও ছিল যারা ফেব্রুয়ারি-মার্চে আসার জন্য ভিসা পেয়েছিল। তবে, জানুয়ারি-২০২২ এ ভিসা-আবেদন বৃদ্ধি পেলে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময়ও নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। স্টুডেন্ট ভিসার জন্য কাউকে কাউকে তিন মাস পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়েছে।”
মিস্টার সিং আরও বলেন, “এপ্রিল-২০২২ এ হোম অ্যাফেয়ার্স থেকে AAERI কে জানানো হয়েছিল যে, তখন ভিসা প্রক্রিয়াকরণে গড়ে প্রায় ১০ সপ্তাহ করে সময় লাগতো। এসব কারণে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর জুলাই-২০২২ এর কোর্সে আসা স্থগিত হয়ে যায়।”
“ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী খাত”
AAERI এর প্রেসিডেন্ট বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী খাতে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর তীব্র অভিঘাত লাগলেও এই খাতটি ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে আসছে।
তিনি বলেন, “ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ইতোমধ্যে হ্রাস পেয়েছে।”
আমরা আশাবাদী যে, জুলাই-২০২২ সেশনের জন্য দক্ষিণ এশিয়া থেকে খুব ভাল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা আসবে।
“আমি আরও আশা করছি যে, ২০২৩ সাল নাগাদ ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৈশ্বিক মহামারীর পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার নতুন পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক বা শিক্ষা সমাপনের পরবর্তীতে কাজের সুযোগ অনেক আকর্ষণীয় এবং সম্ভবত এক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট। আর, এজন্য শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়াকে বেছে নিবে।”
Akshay Kumar, a newly arrived international student. Source: Supplied by Mr Kumar.
অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে শিক্ষা অপরিহার্য্য। বর্তমানে, বৈশ্বিক মহামারীর কারণে সৃষ্ট কর্মী-স্বল্পতার কারণে, অস্ট্রেলিয়া সরকার স্টুডেন্ট ভিসায় কাজের সীমাবদ্ধতা শিথিল করেছে।
২৫ মে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অক্ষয় কুমার। এসবিএস পাঞ্জাবি-কে তিনি বলেন, “বৈশ্বিক মহামারীর কারণে আমার পরিকল্পনা ব্যাহত হলেনও আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাব এবং নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করবো।”
“অস্ট্রেলিয়ার ভাল জীবনযাত্রা, ভাল শিক্ষা-ব্যবস্থা, বহুসংস্কৃতি এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতি আমি আকৃষ্ট।”