ভ্রমণ বা চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রতি বছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি বিদেশে যান। এর বাইরে কর্মসূত্রে বা ব্যবসার কাজেও যাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। বিদেশ যাত্রাই মানে সঙ্গে রাখতে হয় বৈদেশিক মুদ্রা। এ ক্ষেত্রে সবার পছন্দ ইউএস ডলার। চাইলে ব্রিটিশ পাউন্ড, ভারতীয় রুপি, রিয়াল, দিনার বা রিঙ্গিতও নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে তার একটা সীমা আছে। সীমার বাইরে নগদে বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে নিয়ে যাওয়া বেআইনি। চাইলে বিদেশ থেকে যে কোনো অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে করে নিয়ে আসা যায়। তবে সীমার অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্ট খুলে জমা রাখতে হয়।
বিদেশ ভ্রমণের বাইরেও কখনও কখনও ব্যক্তির ব্যয়ের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন পড়তে পারে। যেমন- ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে চাইলে আপনি বিদেশে না গিয়েও দেশে বসেই অনলাইনে অন্য দেশের পণ্য বা সেবা কিনতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ করতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রেও অর্থ পরিশোধের সীমা রয়েছে।
ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ কতটা বৈদেশিক মুদ্রা নিজের জিম্মায় রাখা যাবে বা অনলাইন কেনাকাটায় বৈদেশিক মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করা যাবে, তা সময় সময় নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭-এর ক্ষমতাবলে এ দায়িত্ব পালন করে আর্থিক খাত ও মুদ্রাবাজারের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিদেশ ভ্রমণে নগদ ডলার: যে কাজেই হোক, বিদেশ ভ্রমণের সময় আপনি সর্বোচ্চ কত ডলার নিতে পারবেন, এ তথ্য আপনার জানা থাকা উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদেশ ভ্রমণের সময় জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি আছে। তবে এর পুরোটা নগদ বা নোট আকারে নেওয়া যাবে না। নগদ বা নোট আকারে জনপ্রতি একবারে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ডলার নেওয়া যাবে। চাইলে বাকি সাত হাজার ডলার পর্যন্ত অর্থ ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের মাধ্যমে নেওয়া যাবে। আরও পরিস্কার করে বলা যায়, একজন ব্যক্তি পকেটে করে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ডলার নিতে পারবেন। পরিবারের দু’জন গেলে পাঁচ-পাঁচ মোট দশ হাজার ডলার নিতে পারবেন।
এখানে আরও একটা তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট পঞ্জিকা বছরে নিয়ম অনুসারে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত এনডোর্স করে নিতে পারবেন। এটা একবার বা বহুবার, যাই হোক না কেন। চাইলে একবার ভ্রমণে ১২ হাজার ডলার খরচ করা যাবে। তবে ওই বছর নিজ খরচে বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারবেন না। চিকিৎসা বা শিক্ষার মতো বিশেষ প্রয়োজনে বেশি পরিমাণ ডলার নেওয়ার প্রয়োজন হলে যৌক্তিক কারণের উপযুক্ত নথি জমা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। বিষয়টি আরেকটু পরিস্কার করে নেওয়া যাক। ধরুন, কোনো বছরের জানুয়ারিতে আপনি বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে মোট পাঁচ হাজার ডলার খরচ করে এলেন। ওই বছর আপনি আরও এক বা একাধিবার বিদেশ ভ্রমণে সঙ্গে সর্বোচ্চ সাত হাজার ডলার নিতে পারবেন। ধরুন, নির্দিষ্ট বছরে দু’বার ভ্রমণে মোট ১১ হাজার ডলার খরচ করেছেন। তৃতীয়বারও যাওয়ার প্রয়োজন এবং এবার দরকার আরও চার হাজার ডলার। অতিরিক্ত তিন হাজার ডলার খরচের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিতে হবে।
বিদেশফেরতের সময় নগদ ডলার: বিদেশে যাওয়ার সময় আপনি যত ডলারই নিয়ে যান না কেন, ফিরে আসার সময় আপনি যে কোনো অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার সঙ্গে করে নগদে বা কার্ডে করে আনতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার নগদে আনতে কোনো ঘোষণা দেওয়ার দরকার নেই। তবে ১০ হাজার ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা নগদে আনলে এফএমজি ফরমে বন্দরেই ঘোষণা দিতে হয়। এরপর চাইলে সঙ্গে আনা নগদ ডলারের সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার নিজের জিম্মায় রাখতে পারবেন। বেশি হলে সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে অনুমোদিত ব্যাংক বা মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিতে হবে। তবে চাইলে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) অ্যাকাউন্ট খুলে অতিরিক্ত ডলার ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় রাখার সুযোগ আছে। নিজের জিম্মায় ১০ হাজারের বেশি ডলার নগদে সংরক্ষণ করা বেআইনি। ধরা পড়লে জেল, জরিমানা হওয়ার ভয় আছে।
বিদেশ ভ্রমণে বাংলাদেশি টাকা বহন: বিদেশ থেকে ফেরার পর নিজের বাড়ি বা গন্তব্যস্থল পর্যন্ত যেতে টাকার প্রয়োজন। এ বিবেচনায় বিদেশে যাওয়ার জন্য একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নগদে সঙ্গে করে নিতে পারবেন। আবার ফেরার সময়ও ওই পরিমাণের বেশি টাকা সঙ্গে আনতে পারবেন না।
অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানে ডলার লেনদেন নয় :বাংলাদেশে ডলার বা অন্য কোনো বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন দরকার। ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করার অনুমোদন নেই- এমন ব্যক্তির সঙ্গে ডলার কেনাবেচা করা অবৈধ। সুনাগরিক হিসেবে সবার উচিত, আইন মেনে বৈধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডলার কেনাবেচা করা।