শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ অপরাহ্ন

যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া আপনার রোম্যান্টিক সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তুলছে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০২৩

সুস্থ রোম্যান্টিক সম্পর্ককে মনে করা হয় মানুষের জীবনের জন্য এক ‘অশেষ আর্শীবাদ’। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই অনেকেই একমত হবেন যে, সুন্দর জীবন, মানসিক সুস্বাস্থ্য ও সফল ক্যারিয়ারের জন্য সুস্থ রোম্যান্টিক সম্পর্ক খুবই জরুরি। যদিও রোম্যান্টিক সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে যেকোনো সময়। যার মারাত্মক প্রভাব পড়ে আমাদের কাজে বা ক্যারিয়ারে। আর, সম্পর্ককে বিষাক্ত করার ক্ষেত্রে আজকাল বড় ভূমিকা রাখছে সোশ্যাল মিডিয়া।

গত এক দশকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রোম্যান্টিক সম্পর্কের সূচনা খুবই সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য জুটি তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডের ছবি, ভিডিও বা বর্ণনা আপলোড করে যাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ দিন, অ্যানিভার্সারি, বিয়ে, এনগেজমেন্ট, ক্যাজুয়াল হ্যাংআউটস, ফ্যামিলি গ্যাদারিং বা ফ্রেন্ডস মিটআপ তো বটেই; এমন খুব কম ঘটনাই আছে যা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসছে না।

কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে, এসব অনলাইন অ্যাকটিভিটি ধিরে ধিরে অসুস্থ বা বিষাক্ত করে তুলছে আমাদের রোম্যান্টিক সম্পর্কগুলোকে। এমনকি অন্যের জীবনের সাথে নিজের জীবনের তুলনা করে সে অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিটি বাড়ানোর বা অনুকরণের ভয়াবহ মানসিকতাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কে তার প্রেমিকা বা স্ত্রীকে বা স্বামীকে কী উপহার দিয়েছে, তারা কীভাবে ট্যুরে যাচ্ছে, শপিং করছে, রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে এমন সবকিছুই অবাধে চলে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর, এসবে বিষাক্ত হচ্ছে অসংখ্য মিষ্টি রোম্যান্টিক সম্পর্ক। এমনকি, এসব কারণে অসংখ্য সুন্দর সম্পর্ক গড়িয়েছে বিচ্ছেদে।

বিখ্যাত ভারতীয় অন্টলজিস্ট ও মেন্টাল হেলথ এন্ড রিলেশনশিপ এক্সপার্ট আশমিন মুঞ্জাল সোশ্যাল মিডিয়ার এমন কয়েকটি দিক চিহ্নিত করেছেন যেগুলো রোম্যান্টিক সম্পর্কের ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

১. ঈর্ষা ও নিরাপত্তাহীনতা: অন্যের জীবন কেমন চলছে সেটি দেখার বা জানার বিশ্বস্ত মাধ্যম এখন সোশ্যাল মিডিয়া। কে কার সাথে সম্পর্কে আছে, কী করছে এরকম খুবই বেসিক ইনফরমেশনগুলো অনেকের মাঝেই ঈর্ষা ও মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। এতে বাড়ে মানসিক চাপ ও অশান্তি। আর এখান থেকেই হয়তো সেটি এগোয় আরও মারাত্মক কিছুর দিকে।

২. গোপনীয়তার অভাব: খেয়াল করবেন যে, সোশ্যাল মিডিয়াগুলো সাধারণত আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে উৎসাহিত করে। নিজেদের ব্যক্তিগত বা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও শেয়ার করে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন অনেকেই। এমনকি পার্টনারের ছবি শেয়ার করে প্রাইভেসি ক্ষুণ্ণ করার মতো ঘটনা আমরা ঘটতে দেখছি প্রায়। এতে একই সাথে সম্পর্কে বাড়ছে প্রতারণা ও অবিশ্বাস।

৩. অপব্যাখ্যা ও ভুল বোঝাবুঝি: মুখোমুখি একজন মানুষের সাথে কথা বলা আর সোশ্যাল মিডিয়ার কথা বলার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আর এ পার্থক্যের কারণেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সহজ হয়ে গেছে ভুল বোঝাবুঝি বা অপব্যাখ্যার মতো বিষয়গুলো। টেক্সট মেসেজে কথা বলার সময় ওপর প্রান্তের মানুষটির মনোভাব, কথার টোন, উদ্দেশ্য বা আবেগগুলো বোঝা বেশ কঠিন। এ কারণে, ভুল বোঝাবুঝি বাড়ছে মারাত্মক হারে।

৪. সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি: সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সময়ের অপচয় আমাদের বাস্তব সম্পর্কগুলোর ওপরে ফেলে মারাত্মক প্রভাব। দুজনের যে কোনো একজনও যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হন তাহলেই দেখা যাবে যে তাদের পারস্পারিক মিথষ্ক্রিয়া ও এক সাথে সময় কাটানো কমে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তির কারণে পার্টনারের প্রতি অবহেলা বেড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে মানসিক দূরত্ব বেড়ে যাওয়া এমনকি পরস্পরের যাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন অনেক জুটি।

৫. ফ্লার্টিং ও অবিশ্বাস: সোশ্যাল মিডিয়া ফ্লার্টিং, মানসিক-শারীরীক প্রতারণার মতো বিষয়গুলোকে সহজ করে ফেলেছে। অনেকেই এসবের সুযোগ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে করে চলেছেন নানা ধরনের প্রতারণা। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে অনেকেই নিজেদের অ্যাটেনশন সিকিং মানসিকতার জন্য পার্টনারের অজান্তেই করে চলেছেন প্রতারণা। এতে পরস্পরের প্রতি বেড়্রেছে অবিশ্বাস আর অনাস্থা।

৬. তুলনা করার মানসিকতা ও অসন্তুষ্টি: সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা সাধারণত চেষ্টা করেন নিজেদের সুখী দেখাতে। তারা চেষ্টা করেন শুধুমাত্র জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোই উপস্থাপনের। আর, সবসময় এ ধরনের কনটেন্ট শেয়ারে সম্পর্কের মধ্যে বাড়ে অবাস্তব প্রত্যাশা। যা পর্যায়ক্রমে নিয়ে যায় অসন্তুষ্টি ও হতাশার দিকে।

সম্পর্ককে সুস্থ রাখতে যা যা করবেন: সম্পর্কের ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব কমাতে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো, বিশ্বাস, সীমা নির্ধারণ ইত্যাদি জরুরি। সুস্থ রোম্যান্টিক সম্পর্ক রক্ষায় কাপলদের মধ্যে ভার্চুয়াল যোগাযোগের চেয়ে সামনাসামনি কথা বলা বা পাশে বসে কথা বলাকে উৎসাহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত একসাথে সময় কাটানো, পার্টনারের প্রতি বিশ্বস্ততা ও কৃতজ্ঞতা, পারস্পারিক সহযোগিতা ইত্যাদি বাড়লে সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব কমানো সম্ভব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com