২৩ নভেম্বর প্রকাশিত হোম অফিসের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থেকে ১৭ হাজার ৩১৬টি আশ্রয় আবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছে৷
ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ শুধু তাই নয়, আশ্রয় আবেদন যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত দিতে গিয়েও হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার৷ কারণ, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা অর্থাৎ ব্যাকলগ চলতি বছরের জুনে রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷
আশ্রয় আবেদনের ব্যাকলগ নিয়ে সংসদীয় কমিটির প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্বীকার করেন, আবেদন প্রত্যাহার করা ১৭ হাজার ৩১৬টি আশ্রয়প্রার্থীর সন্ধান হোম অফিসের কাছে নেই৷
রক্ষণশীল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ব্যাকলগ বা জমে থাকা আবেদন চলতি বছরের শেষ নাগাদ নিষ্পত্তি করার উচ্চাবিলাসী লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিলেন। সংসদীয় কমিটি সরকারের এমন লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও মন্ত্রনালয়ের দুই প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করেছে।
হোম অফিসের মতে, আশ্রয় আবেদন প্রত্যাহারের নানা কারণ থাকতে পারে। অনেকেই তাদের আশ্রয় আবেদনের সিদ্ধান্ত পাওয়ার আগেই যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন। আবার অনেকেই বিভিন্ন কারণে তাদের আশ্রয় আবেদনের সাক্ষাৎকারে যোগ দিতে ব্যর্থ হন কিংবা যুক্তরাজ্যে থাকতে আশ্রয় আবেদন বাদ দিয়ে অন্য কোনো আইনি পদ্ধতি বেছে নেন।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কনজারভেটিভ দলের এমপি টিম লফটন হোম অফিসের অন্তর্বর্তীকালীন স্থায়ী সচিব সাইমন রিডলিকে ১৭ হাজার ৩১৬টি আশ্রয় আবেদন প্রত্যাহার এবং এসব সাবেক আবেদনকারীদের হদিস হোম অফিস জানে কিনা জানতে চান।
সাইমন রিডলি তার উত্তরে বলেন, বেশ কিছু পুরনো আবেদন যাচাই করার সময়ে কিছু লোক পালিয়ে গেছে।
এমপি টিম লফটন এই প্রশ্নের প্রতিউত্তরে আরো জিজ্ঞেস করেন, এই ১৭ হাজার ৩১৬ জন লোক কোথায় আছেন সেটি নিয়ে হোম অফিসের কোন ধারণা আছে কিনা৷
উত্তরে রিডলি বলেন, “আমরা জানি না তারা কোথায় আছে।”
যুক্তরাজ্যে আসা একজন আশ্রয়প্রার্থী তার আবেদনের বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত পেলে সিদ্ধান্ত পাওয়ার ২১ দিনের মধ্যে সরকারি আবাসন ছেড়ে যেতে হয়৷ অপরদিকে কেউ চাইলে আপিল করতে পারেন৷
আপিল আবেদন নাকচ হলে কিংবা আপিল গ্রহণযোগ্য না হলে আপিলের সিদ্ধান্ত প্রাপ্তির ২১ দিনের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে হয়৷
সংসদীয় কমিটির প্রশ্নের জবাবে রিডলি বলেন, অনেক আশ্রয়প্রার্থীরা তাদের আবেদনের সাক্ষাৎকারে উপস্থিত না হয়েই আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন৷
চলতি বছরের জুনে প্রকাশিত ন্যাশনাল অডিট অফিসের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অনেকগুলো প্রত্যাহার আসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অর্থাৎ এমন আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে কারণ তারা সময়মতো আবেদন ফর্ম জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন কিংবা সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হতে পারেননি। বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক ব্যর্থতাও থাকতে পারে। যেমন হোম অফিস অনেকসময় একজন আশ্রয়প্রার্থীর সবশেষ প্রশাসনিক ঠিকানা নথিভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়৷
প্রতিবেদন অনুসারে, এসব কারণ ছাড়াও অনেক আশ্রয়প্রার্থী ইচ্ছাকৃতভাবে অদৃশ্য হয়ে থাকতে পারেন৷ তাদের মধ্যে শঙ্কা থাকে, তাদের আশ্রয় আবেদন হয়ত মঞ্জুর করা হবে না৷
গত সপ্তাহে প্রকাশিত হোম অফিসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত আশ্রয় আবেদনের বর্তমান ব্যাকলগ ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১২ শতাংশ কমে এক লাখ ২২ হাজার ৫৮৫-এ দাঁড়িয়েছে৷
হোম অফিসের স্থায়ী সচিব স্যার ম্যাথিউ রাইক্রফট সংসদীয় কমিটির এমপিদের সামনে বলেন, হোম অফিস সবসময় আত্মবিশ্বাসী। সরকারের মন্ত্রীরা সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী মাসের শেষের দিকে ব্যাকলগ দূর করার যে পরিকল্পনা করেছেন সেটি বাস্তবসম্মত৷
তিনি আরও বলেন, ব্যাকলগ মোকাবিলায় অতিরিক্ত কারিগরি সক্ষমতা ও জনবল যুক্ত করা হয়েছে।