বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গত ৩ বছরে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪ গুন বাড়লেও সেখান থেকে রেমিট্যান্স আয় কমছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭২৬ বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে কাজ পেয়েছেন।
২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন এবং ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জনে।
তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে সৌদি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সৌদি থেকে রেমিট্যান্স ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ও ২০২২-২৩ সালে তা ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম খান সাম্প্রতিক বছরগুলোয় হুন্ডির ব্যবহার বেড়ে যাওয়াকে রেমিট্যান্স কমার কারণ বলে মনে করেন।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হুন্ডির প্রসার এর চাহিদার ওপর নির্ভর করে। সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে।’
‘যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই চাকরির ধরন না জেনেই দেশ ছাড়ছেন’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আবার তাদের অনেকেই চাকরি পান না। কেউ আবার প্রতারণার শিকার হন। তাই আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী রেমিট্যান্স পাচ্ছি না।’
তার মতে, ‘যেহেতু বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বল্প বেতনের চাকরির জন্য বিদেশে যান, তাই ভারত ও ফিলিপাইনের তুলনায় বাংলাদেশে মাথাপিছু রেমিট্যান্স অনেক কম।’
২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। অথচ, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে চাকরি পাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনেক কম।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবাসী শ্রমিকদের প্রকৃত আয়ে ও তাদের রেমিট্যান্স পাঠানোয় বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের প্রান্তিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে।
আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৮২৯ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭২০ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার ও যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৬১৫ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার।
সেই ৩ মাসে ১৭ হাজার ৪১৭ নারীসহ মোট ২ লাখ ৯৪ হাজার শ্রমিক বিদেশে গিয়েছেন।
প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার ৫৭৮ বাংলাদেশি চাকরির আশায় সৌদি আরবে গেছেন। এটি দেশের মোট জনশক্তি রপ্তানির ৩৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক গিয়েছেন ৩২ দশমিক ৩২ শতাংশ, ওমানে ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, কুয়েতে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও কাতারে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ।