শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:১৬ অপরাহ্ন

সিলিকন ভ্যালির পর বন্ধ হলো সিগনেচার ব্যাংক

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩

তিন দিনের মধ্যে দুটি ব্যাংক বন্ধ হলো মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রে—সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক। নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যম মানের ব্যাংকগুলো সংকটের মুখে পড়েছে। এই দুটি ব্যাংক যে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল, তা মূলত এ কারণেই।

বিষয়টি হচ্ছে, এই মধ্যম মানের ব্যাংকগুলোর গ্রাহকভিত্তি জেপি মর্গানের মতো মহিরুহ ব্যাংকগুলোর মতো অতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়। যেমন এসভিবি ব্যাংকের গ্রাহক ছিল মূলত স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো। সিগনেচার ব্যাংক ঋণ দিত মূলত আবাসন খাতে। সেই সঙ্গে তারা সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সির গ্রাহকদের টানতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল।

তবে গত শুক্রবার এসভিবি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, সিগনেচার ব্যাংক অনেকটা তার জেরেই বন্ধ হয়েছে। দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভাষ্য, এই দুটি ব্যাংক বন্ধ করা না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়ত।

গত সপ্তাহে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের গ্রাহকদের অর্থ তুলে নেওয়ার হিড়িক শুরু হলে সিগনেচার ব্যাংকের গ্রাহকেরাও জানতে চান, তাঁদের আমানত সুরক্ষিত কি না। অনেকের মনেই আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এ কারণে যে তাঁদের আমানতের পরিমাণ আড়াই লাখ ডলারের বেশি। দেশটির ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন বা এফডিআইসি আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত আমানতের সুরক্ষা দেয়, তার বেশি নয়।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে, আমানতের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, তাঁদের ক্ষতি হবে না। কিন্তু গুজব একবার ছড়িয়ে পড়লে দাবানলের মতো হয়ে যায়, যার বলি হলো সিগনেচার ব্যাংক।

নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বলেন, সিগনেচার ব্যাংকের অনেক আমানতকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যাঁরা মূলত উদ্ভাবনী অর্থনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নিউইয়র্কের শক্তিশালী অর্থনীতির পেছনে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

শুক্রবার এসভিবি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই সিগনেচার ব্যাংকের গ্রাহকেরা আমানত তুলে নিতে শুরু করেন। সেই ঘটনায় তাদের শেয়ার দর পড়তে শুরু করে। শুধু তাই নয়, সিগনেচার ব্যাংকের সমকক্ষ আরও কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ার দরও পড়ে যায়।

তা সত্ত্বেও ব্যাংকের নেতৃত্ব আশাবাদী ছিল, এই ঝড় মোকাবিলা করা যাবে, কারণ, গতকাল রোববার সকালে অর্থ তুলে নেওয়ার গতি অনেকটাই কমে এসেছিল। কিন্তু একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের জানায়, তারা ব্যাংকটি বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে। এই কথা শোনার পর ব্যাংকের নেতৃত্বের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। নিউইয়র্ক রাজ্যের ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিআইসির সঙ্গে সমন্বিতভাবে এর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছে।

ব্যাংকটি মূলত পেশাদারি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকার হয়ে উঠেছিল। আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা বিশেষত্ব অর্জন করেছে। অর্থ ধরে রাখার জন্য গ্রাহকদের এস্ক্রো হিসাবসহ নানা ধরনের সেবা দিত তারা। দেশজুড়ে তাদের ৪০টি শাখা ছিল।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে সিগনেচার ব্যাংকের ১০ ভাগের প্রায় ৯ ভাগ আমানতের বিমা ছিল না। গত সপ্তাহেই তারা জানিয়েছিল, তাদের ৮০ শতাংশের বেশি আমানত আইনি প্রতিষ্ঠান, হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া কোম্পানি, উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান ও আবাসন ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সিগনেচার ব্যাংকের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। ট্রাম্পের ফ্লোরিডা গলফ কোর্সে ঋণ দেওয়াসহ ট্রাম্পের জামাই জ্যারেশ কুশনার ও তাঁর পিতা চার্লস এই ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা।

এটি কি বড় ধসের সূচনা
এসভিবি ধসে পড়ার ঘটনায় পৃথিবীজুড়ে আর্থিক খাতে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেছে। সেটা হলো, এই ঘটনা কি আরও ধ্বংস ডেকে এনে পুরো ব্যাংকিং খাতকে পতনের পথে নিয়ে যাবে?

সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শত কোটি ডলারের মালিক হেজফান্ড ব্যবস্থাপক বিল অকম্যান এসভিবির সঙ্গে বেয়ার স্টানর্সের তুলনা করেছেন। ২০০৭-০৮ সালে যে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট হয়েছিল, তার শুরুতেই ধসে পড়েছিল এই ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান।

টুইটারে বিল অকম্যান লেখেন, একটি ব্যাংকের ব্যর্থতা ও আমানত হারানোর ঝুঁকির জায়গা হলো, এ ধরনের ঘটনা যদি কম সম্পদধারী ব্যাংকে এরপর ঘটে এবং তা ধসে পড়ে, তাহলে এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটতে পারে। সিগনেচার ব্যাংকের বন্ধ হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর কথা অনেকটাই ফলে গেল।

তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষক এখন পর্যন্ত মনে করছেন, এসভিবির ঘটনা শুধু একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির ব্যাপার। এটি প্রযুক্তিবিষয়ক স্টার্টআপগুলোকে ঋণ দিত। কিন্তু অর্থনীতির ধীরগতি এবং গত এক বছরে আটবার নীতি সুদহার বাড়ানোর কারণে সিলিকন ভ্যালির স্টার্টআপগুলোর বিনিয়োগ কমে যায়। তখন তারা বাধ্য হয়ে এসভিবি থেকে তহবিল তুলে নিতে শুরু করে। যার চাপে বন্ধ হয়ে যায় এই ব্যাংক।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com