বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১০:০৫ অপরাহ্ন

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিদের চাকরির বাজার কমছে

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সিঙ্গাপুরে  দক্ষ শ্রমিক অভিবাসন আগামী মাসগুলোকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছে। কারণ দেশটিতে নির্মাণ প্রকল্প কমছে। একই সঙ্গে দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য কোটা কমিয়ে অন্য দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু করছে।

কোটা কমানোকে বাংলাদেশি কর্মীদের আস্থা হারানোর জন্য দায়ী করেছেন সিঙ্গাপুরে কোটা কমানোকে বাংলাদেশি কর্মীদের আস্থা হারানোর জন্য দায়ী করেছেন  । তারা বলছেন যে, অনেক বাংলাদেশি মিথ্যা বীমা দাবি থেকে শুরু করে অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে, যা দেশের শ্রমিকদের প্রতি আস্থা নষ্ট করেছে। ফলে বাংলাদেশিদের জন্য কোটা কমিয়েছে সিঙ্গাপুর।

কোটা কমানোর বিষয়ে লেবার সেন্ডিং অর্গানাইজেশনস অব সিঙ্গাপুরে মহাসচিব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, “মূলত কোভিডের পরপর সিঙ্গাপুরে কর্মীদের একটি ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছিল, যার কারণে আমরা কর্মী যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি জাম্প (উন্নতি) দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সেখানে নির্মাণ কাজ যেমন কমছে, তেমনি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কোটাও কমে গেছে।”

তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে একজন সিঙ্গাপুরিয়ানের বিপরীতে আগে সাতজন বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া যেত, চলতি বছর থেকে সেটি কমে নেমে এসেছে ৫ জনে।’

মিয়ানমার এবং ভারতের মতো প্রধান প্রতিযোগীদের টক্কর দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিবাসন কূটনীতিকে দুর্বল হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। এই দেশগুলোর তুলনায় অভিবাসন কূটনীতিতে দুর্বল হওয়ায় বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরে বড় পরিসরে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ হারাচ্ছে। সম্প্রতিকালে তারা মিয়ানমার এবং ভারত থেকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে জানিয়ে কিরণ বলেন, ‘মাইগ্রেশন ডিপ্লোমাসিতে আমরা পিছিয়ে থাকার কারণেই এ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া বাংলাদেশি কর্মীদের ওপর নানান কারণে নিয়োগকর্তাদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। মিথ্যা বীমা দাবি করা, নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ দায়েরের মতো প্রভৃতি কারণে নিয়োগকর্তারা এখন অন্য দেশের কর্মীদের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন।’

গত বছর বাংলাদেশ থেকে  সিঙ্গাপুর প্রতিমাসে গড়ে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি কর্মী নিয়োগ হয়েছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে  সিঙ্গাপুরে নিয়োগকৃত কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৪০০ জনে।

গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের জন্য শীর্ষ ৫ গন্তব্যের একটি সিঙ্গাপুর। সেদেশে বেশিরভাগ কর্মীই নিয়োগ হয় নির্মাণখাত ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৫৩,২৬৫ জন শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে সিঙ্গাপুরে ; ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল রেকর্ড ৬৪,৩৮৩ জন।

সিঙ্গাপুরে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ অভিবাসী কর্মী কাজ করছেন। ভারত, চীন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার এবং ফিলিপাইন থেকে আসা বেশিরভাগ কর্মী মিলে দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক ষষ্ঠাংশে দাঁড়িয়েছে।

এই কর্মীরা সিঙ্গাপুরে অর্থনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন— নির্মাণ, উৎপাদন, হস্পিটালিটি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন, সামুদ্রিক ও পেট্রোকেমিক্যালস এবং গার্হস্থ্য কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানিয়েছে  অভিবাসী কর্মীদের সহায়তায় নিয়োজিত ‘ট্রানজিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু (টিডব্লিউসি২) নামের একটি সংস্থা।

যদিও  সিঙ্গাপুর  সরকার জাতীয়তার ভিত্তিতে অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে ভেদাভেদ করেনা, এরপরেও পরিসংখ্যানে দেখা যায়— দেশটির নির্মাণ শিল্পে বেশিরভাগ শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে বাংলাদেশ, চীন ও ভারত থেকে।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন অনুমান অনুযায়ী,  সিঙ্গাপুরে নিয়োগকৃত ১,৬০,০০০ এরও বেশি বাংলাদেশি কর্মীর মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশিই নিয়োজিত ছিল নির্মাণ ও সামুদ্রিক ভিত্তিক শিল্পের বিভিন্ন কাজে। (টিডব্লিউসি২, ২০১৭)

স্থানীয় নিয়োগকারীরা বলছেন, বাংলাদেশি কর্মীরা নতুন দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। অথচ নিয়োগকর্তারা এখন যাদের একাধিক দক্ষতার সার্টিফিকেট রয়েছে– তাদেরকেই নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি অগ্রাধিকার দেন।

সাধারণত, বাংলাদেশি কর্মীরা নির্ধারিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে দক্ষতার সার্টিফিকেট পাওয়ার পর  সিঙ্গাপুরে যান।

বাংলাদেশে মাত্র ছয়টি বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে  সিঙ্গাপুর, যেগুলো প্রায় ২২ ধরনের ট্রেড সনদ প্রদান করে। এর বেশিরভাগই নির্মাণ খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত; এগুলো মূলত বেসরকারি নিয়োগকারী সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়।

বর্তমানে, একটি কেন্দ্র প্রতি মাসে ৭০ জন কর্মীর দক্ষতার পরীক্ষা নিতে পারে, যেখানে কোভিড মহামারি পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ এর কাছাকাছি।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এখন প্রতিমাসে আরও বেশি কর্মীর দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি চাইছে, যাতে করে তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি কর্মী বিদেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।

বর্তমানে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫,০০০ অভিবাসন প্রত্যাশী সার্টিফিকেট নিয়ে বের হচ্ছেন।

জানা গেছে, কর্মী পাঠানোর জন্য ১০টি এজেন্সিকে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ। এসব এজেন্সিকে বিএমইটিতে ৩০ লাখ টাকা জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়েছে।

তবে এসব এজেন্সির মাধ্যমে সার্টিফিকেশন পাওয়ার পরেও অন্য যেকোনো বৈধ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীরা মালয়েশিয়া যেতে পারছেন।

জামানত জমা না দিয়েও যারা কর্মী পাঠাচ্ছে, তাদের কারণে শ্রমবাজারটিতে উচ্চ অভিবাসন ব্যয়সহ নানান সংকট তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠাতে ইচ্ছুক সব এজেন্সির জন্য জামানত জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করলে এখানে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে অভিমত তাদের।

কোটা কমানোকে বাংলাদেশি কর্মীদের আস্থা হারানোর জন্য দায়ী করেছেন নিয়োগকারীরা। তারা বলছেন যে, অনেক বাংলাদেশি মিথ্যা বীমা দাবি থেকে শুরু করে অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে, যা দেশের শ্রমিকদের প্রতি আস্থা নষ্ট করেছে। ফলে বাংলাদেশিদের জন্য কোটা কমিয়েছে সিঙ্গাপুর।

কোটা কমানোর বিষয়ে লেবার সেন্ডিং অর্গানাইজেশনস অব  মহাসচিব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, “মূলত কোভিডের পরপর  কর্মীদের একটি ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছিল, যার কারণে আমরা কর্মী যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি জাম্প (উন্নতি) দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সেখানে নির্মাণ কাজ যেমন কমছে, তেমনি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কোটাও কমে গেছে।

তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে একজন সিঙ্গাপুরিয়ানের বিপরীতে আগে সাতজন বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া যেত, চলতি বছর থেকে সেটি কমে নেমে এসেছে ৫ জনে।’

মিয়ানমার এবং ভারতের মতো প্রধান প্রতিযোগীদের টক্কর দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিবাসন কূটনীতিকে দুর্বল হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। এই দেশগুলোর তুলনায় অভিবাসন কূটনীতিতে দুর্বল হওয়ায় বাংলাদেশ  বড় পরিসরে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ হারাচ্ছে। সম্প্রতিকালে তারা মিয়ানমার এবং ভারত থেকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে জানিয়ে কিরণ বলেন, ‘মাইগ্রেশন ডিপ্লোমাসিতে আমরা পিছিয়ে থাকার কারণেই এ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া বাংলাদেশি কর্মীদের ওপর নানান কারণে নিয়োগকর্তাদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। মিথ্যা বীমা দাবি করা, নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ দায়েরের মতো প্রভৃতি কারণে নিয়োগকর্তারা এখন অন্য দেশের কর্মীদের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন।’

গত বছর বাংলাদেশ থেকে  প্রতিমাসে গড়ে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি কর্মী নিয়োগ হয়েছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে  নিয়োগকৃত কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৪০০ জনে।

গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের জন্য শীর্ষ ৫ গন্তব্যের একটি সিঙ্গাপুর। সেদেশে বেশিরভাগ কর্মীই নিয়োগ হয় নির্মাণখাত ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৫৩,২৬৫ জন শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে  ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল রেকর্ড ৬৪,৩৮৩ জন।

সিঙ্গাপুরে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ অভিবাসী কর্মী কাজ করছেন। ভারত, চীন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার এবং ফিলিপাইন থেকে আসা বেশিরভাগ কর্মী মিলে দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক ষষ্ঠাংশে দাঁড়িয়েছে।

এই কর্মীরা অর্থনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন— নির্মাণ, উৎপাদন, হস্পিটালিটি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন, সামুদ্রিক ও পেট্রোকেমিক্যালস এবং গার্হস্থ্য কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানিয়েছে অভিবাসী কর্মীদের সহায়তায় নিয়োজিত ‘ট্রানজিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু (টিডব্লিউসি২) নামের একটি সংস্থা।

যদিও  সরকার জাতীয়তার ভিত্তিতে অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে ভেদাভেদ করেনা, এরপরেও পরিসংখ্যানে দেখা যায়— দেশটির নির্মাণ শিল্পে বেশিরভাগ শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে বাংলাদেশ, চীন ও ভারত থেকে।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন অনুমান অনুযায়ী,  নিয়োগকৃত ১,৬০,০০০ এরও বেশি বাংলাদেশি কর্মীর মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশিই নিয়োজিত ছিল নির্মাণ ও সামুদ্রিক ভিত্তিক শিল্পের বিভিন্ন কাজে। (টিডব্লিউসি২, ২০১৭)

স্থানীয় নিয়োগকারীরা বলছেন, বাংলাদেশি কর্মীরা নতুন দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। অথচ  নিয়োগকর্তারা এখন যাদের একাধিক দক্ষতার সার্টিফিকেট রয়েছে– তাদেরকেই নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি অগ্রাধিকার দেন।

সাধারণত, বাংলাদেশি কর্মীরা নির্ধারিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে দক্ষতার সার্টিফিকেট পাওয়ার পর  যান।

বাংলাদেশে মাত্র ছয়টি বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছেযেগুলো প্রায় ২২ ধরনের ট্রেড সনদ প্রদান করে। এর বেশিরভাগই নির্মাণ খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত; এগুলো মূলত বেসরকারি নিয়োগকারী সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়।

বর্তমানে, একটি কেন্দ্র প্রতি মাসে ৭০ জন কর্মীর দক্ষতার পরীক্ষা নিতে পারে, যেখানে কোভিড মহামারি পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ এর কাছাকাছি।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এখন প্রতিমাসে আরও বেশি কর্মীর দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি চাইছে, যাতে করে তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি কর্মী বিদেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।

বর্তমানে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫,০০০  অভিবাসন প্রত্যাশী সার্টিফিকেট নিয়ে বের হচ্ছেন।

জানা গেছে, কর্মী পাঠানোর জন্য ১০টি এজেন্সিকে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ। এসব এজেন্সিকে বিএমইটিতে ৩০ লাখ টাকা জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়েছে।

তবে এসব এজেন্সির মাধ্যমে সার্টিফিকেশন পাওয়ার পরেও অন্য যেকোনো বৈধ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীরা মালয়েশিয়া যেতে পারছেন।

জামানত জমা না দিয়েও যারা  কর্মী পাঠাচ্ছে, তাদের কারণে শ্রমবাজারটিতে উচ্চ অভিবাসন ব্যয়সহ নানান সংকট তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠাতে ইচ্ছুক সব এজেন্সির জন্য জামানত জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করলে এখানে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে অভিমত তাদের।

নিয়োগকারীরা। তারা বলছেন যে, অনেক বাংলাদেশি মিথ্যা বীমা দাবি থেকে শুরু করে অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে, যা দেশের শ্রমিকদের প্রতি আস্থা নষ্ট করেছে। ফলে বাংলাদেশিদের জন্য কোটা কমিয়েছে সিঙ্গাপুর।

কোটা কমানোর বিষয়ে লেবার সেন্ডিং অর্গানাইজেশনস অব  মহাসচিব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, “মূলত কোভিডের পরপর  কর্মীদের একটি ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছিল, যার কারণে আমরা কর্মী যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি জাম্প (উন্নতি) দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সেখানে নির্মাণ কাজ যেমন কমছে, তেমনি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কোটাও কমে গেছে।”

তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে একজন সিঙ্গাপুরিয়ানের বিপরীতে আগে সাতজন বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া যেত, চলতি বছর থেকে সেটি কমে নেমে এসেছে ৫ জনে।’

মিয়ানমার এবং ভারতের মতো প্রধান প্রতিযোগীদের টক্কর দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিবাসন কূটনীতিকে দুর্বল হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। এই দেশগুলোর তুলনায় অভিবাসন কূটনীতিতে দুর্বল হওয়ায় বাংলাদেশ  বড় পরিসরে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ হারাচ্ছে। সম্প্রতিকালে তারা মিয়ানমার এবং ভারত থেকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে জানিয়ে কিরণ বলেন, ‘মাইগ্রেশন ডিপ্লোমাসিতে আমরা পিছিয়ে থাকার কারণেই এ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া বাংলাদেশি কর্মীদের ওপর নানান কারণে নিয়োগকর্তাদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। মিথ্যা বীমা দাবি করা, নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ দায়েরের মতো প্রভৃতি কারণে নিয়োগকর্তারা এখন অন্য দেশের কর্মীদের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন।’

গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রতিমাসে গড়ে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি কর্মী নিয়োগ হয়েছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে  নিয়োগকৃত কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৪০০ জনে।

গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের জন্য শীর্ষ ৫ গন্তব্যের একটি সিঙ্গাপুর। সেদেশে বেশিরভাগ কর্মীই নিয়োগ হয় নির্মাণখাত ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৫৩,২৬৫ জন শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে; ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল রেকর্ড ৬৪,৩৮৩ জন।

সিঙ্গাপুরে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ অভিবাসী কর্মী কাজ করছেন। ভারত, চীন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার এবং ফিলিপাইন থেকে আসা বেশিরভাগ কর্মী মিলে দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক ষষ্ঠাংশে দাঁড়িয়েছে।

এই কর্মীরা  অর্থনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন— নির্মাণ, উৎপাদন, হস্পিটালিটি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন, সামুদ্রিক ও পেট্রোকেমিক্যালস এবং গার্হস্থ্য কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানিয়েছে অভিবাসী কর্মীদের সহায়তায় নিয়োজিত ‘ট্রানজিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু (টিডব্লিউসি২) নামের একটি সংস্থা।

যদিও  সরকার জাতীয়তার ভিত্তিতে অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে ভেদাভেদ করেনা, এরপরেও পরিসংখ্যানে দেখা যায়— দেশটির নির্মাণ শিল্পে বেশিরভাগ শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে বাংলাদেশ, চীন ও ভারত থেকে।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন অনুমান অনুযায়ী,  নিয়োগকৃত ১,৬০,০০০ এরও বেশি বাংলাদেশি কর্মীর মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশিই নিয়োজিত ছিল নির্মাণ ও সামুদ্রিক ভিত্তিক শিল্পের বিভিন্ন কাজে। (টিডব্লিউসি২, ২০১৭)

স্থানীয় নিয়োগকারীরা বলছেন, বাংলাদেশি কর্মীরা নতুন দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। অথচ  নিয়োগকর্তারা এখন যাদের একাধিক দক্ষতার সার্টিফিকেট রয়েছে– তাদেরকেই নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি অগ্রাধিকার দেন।

সাধারণত, বাংলাদেশি কর্মীরা নির্ধারিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে দক্ষতার সার্টিফিকেট পাওয়ার পর  যান।

বাংলাদেশে মাত্র ছয়টি বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে, যেগুলো প্রায় ২২ ধরনের ট্রেড সনদ প্রদান করে। এর বেশিরভাগই নির্মাণ খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত; এগুলো মূলত বেসরকারি নিয়োগকারী সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়।

বর্তমানে, একটি কেন্দ্র প্রতি মাসে ৭০ জন কর্মীর দক্ষতার পরীক্ষা নিতে পারে, যেখানে কোভিড মহামারি পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ এর কাছাকাছি।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এখন প্রতিমাসে আরও বেশি কর্মীর দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি চাইছে, যাতে করে তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি কর্মী বিদেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।

বর্তমানে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫,০০০  অভিবাসন প্রত্যাশী সার্টিফিকেট নিয়ে বের হচ্ছেন।

জানা গেছে,  কর্মী পাঠানোর জন্য ১০টি এজেন্সিকে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ। এসব এজেন্সিকে বিএমইটিতে ৩০ লাখ টাকা জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়েছে।

তবে এসব এজেন্সির মাধ্যমে সার্টিফিকেশন পাওয়ার পরেও অন্য যেকোনো বৈধ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীরা মালয়েশিয়া যেতে পারছেন।

জামানত জমা না দিয়েও যারা  কর্মী পাঠাচ্ছে, তাদের কারণে শ্রমবাজারটিতে উচ্চ অভিবাসন ব্যয়সহ নানান সংকট তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠাতে ইচ্ছুক সব এজেন্সির জন্য জামানত জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করলে এখানে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে অভিমত তাদের।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com