বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন

সামর্থ্যবানরা পাকিস্তান ছাড়ছেন, মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বাকিরা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩

স্বাধীনতার ৭৬ বছর পার করছে পাকিস্তান। যেখানে স্বাধীনতা দিবস মানে পাকিস্তানিদের জন্য বড় রকমের উৎসব, সেখানে চলতি বছর তাদের এ দিনটি কাটছে অনেকটাই আড়ম্বরহীনভাবে। দেশের অধিবাসীরা বলছেন, এ স্বাধীনতা দিয়ে কী হবে, যেখানে রাজনীতিতে শান্তি নেই, অর্থনীতিতে স্বস্তি নেই; ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের বরাতে জানা গেছে, দেশটির সর্বত্র শুধু মানুষের হায়-হুতাশ। স্বাধীনতা তাদের কাছে আর কোনো মাহাত্ম্য বহন করছে না। চলতি বছর মে মাসে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩৮ শতাংশ। এদিকে, জুলাই মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ঠেকেছে ২৮.৩ শতাংশে। অদূর ভবিষ্যতে এ মূল্যস্ফীতি কমবে এমন কোনো সম্ভাবনাও নেই।

এ যখন অবস্থা, তার ওপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানতে দেশটিতে বাড়ানো হয়েছে পেট্রোলের দাম। প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ টাকা। শুধু পেট্রোলের দাম না, সাধারণের অভিযোগ, আরোপ করা হয়েছে অযাচিত কর, কমে গেছে রুপির মান – সব মিলিয়ে খাদের কিনারায় পাকিস্তান, মানবেতর মানুষের জনজীবন।

গত সপ্তাহে দেশটির সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন দেয়ার কথা থাকলেও পাকিস্তানের হাওয়া বলছে, নতুন নির্বাচন হতে অনেক দেরি। যে দেশে এখন সরকারের ঠিক নেই, সেই দেশকে অভিভাবকহীন ভূখণ্ড ছাড়া আর কিছু বলছেন না খোদ দেশটির নাগরিকরা।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশটির নাগরিকরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, অন্যান্য বছর এ দিনটি আলাদা গুরুত্ব বহন করতো। বাসায় ভালো রান্নাবান্না হতো, বাচ্চারা নতুন পোশাক পরতো, পরিবার নিয়ে সারাদিন চলতো উদযাপন। অথচ চলতি বছর এসে যেখানে বাসার চুলা জ্বালানো দায় হয়ে পড়েছে, সেখানে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন তাদের কাছে বিদ্রুপাত্মক আচারণ বলে ঠেকছে।

রাজধানী ইসলামাবাদের স্কুল শিক্ষক সাকিব জাভেদ আরব নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, পাকিস্তান নিয়ে এখন আর কোনো আশা নেই। দেশটি থেকে আর কোনো কিছুই প্রত্যাশা করা যায় না। দেশটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, রাজনীতির মাঠে প্রতিহিংসা, বারবার নেয়া ভুল সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে নরকের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।

ইসলামাবাদের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, যারা তরুণ তারা আর দেশে থাকতে চাইছেন না। শিক্ষিত তরুণরা উপায় খুঁজছেন কীভাবে দেশ ছাড়া যায়। হলফ করে বলা যায়, দেশের ৫০ শতাংশ তরুণই এখন আর দেশে থাকতে চাইছেন না। পড়াশোনার পাঠ চুকানোর আগেই তারা ভাবছেন কীভাবে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমানো যায়। যারা দেশ ছাড়ছেন, তারা প্রত্যেকে দেশকে ভালোবাসেন। কিন্তু এটি এখন একমুখী ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। দেশ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না।

দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষক রাইসুল বকস রইস বলেন, ‘হয় ইউরোপ, না হয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছেন পাকিস্তানিরা। একজন মানুষের স্বপ্ন কী থাকে? ভালোভাবে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা। পাকিস্তানে আর যা হোক ভালোভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব না। তাই যাদের সামর্থ্য আছে তারাই পাকিস্তান ছাড়ছেন।’

রইস আরও বলেন, বাজারে অস্থিরতা চলছে। দিনকে দিন এ অস্থিরতা আরও বাড়ছে। এর মধ্যে নানা অজুহাতে বিভিন্ন খাতে কর বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে রিয়েল স্টেইটে আলাদা করে কর বাড়ানোয় মধ্যবিত্তদের নিজেদের একটি বাড়ির যে স্বপ্ন ছিল, তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। যে টাকা দিয়ে পাকিস্তানে নিজের একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনা যাবে, ওই টাকায় অন্য দেশে আরামে থিতু হওয়া যাবে।

পাকিস্তানের বর্তমান সমস্যার জন্য রইস রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করে বলেন, যখন দেশের সরকারের ঠিক নেই, রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা বলে কিছু নেই, তখন দেশে না আসবে বিনিয়োগ, না শান্ত হবে বাজার ব্যবস্থা। পাকিস্তানের রাজনীতিতে এমন কালো মেঘ জমেছে যে, সেটি কাটিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলতি বছর পাকিস্তান আইএমএফ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার বেইল-আউট ঋণ পেয়েছে। কিন্তু দেশটির অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর আগেও পাকিস্তান বহুবার আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে; কিন্তু ঋণের টাকা কাজে লাগাতে পারেনি। পাকিস্তানের একটি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দরকার; অন্যথায় দেশটির অর্থনীতি এবার মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা তাদের।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com