শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:১০ পূর্বাহ্ন

সাজেক ভ্রমণ: ঘুরে আসুন মেঘে ঢাকা স্বর্গে

  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ মে, ২০২৪

শরতের সাদা মেঘ দিয়ে আকাশ ক্যানভাসে আঁকিবুকি করার কোন দিন, অথবা শীতের কোন রৌদ্রস্নানের দিন! দীঘিনালা ছাড়িয়ে রাঙামাটির ছাদের খোঁজে কেউ এলে, রুইলুই ও কংলাক পাড়ার লুসাই, ত্রিপুরা বা পাংখোয়ারা এখন আর অবাক হয়না। যে কোন বইপোকার কাছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়নটি হয়ত শুধুই একটি স্থানের নাম। কিন্তু ভারতের মিজোরাম সীমান্ত ঘেষা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচু সাজেক ভ্যালির মেঘ ছোঁয়ার জন্য কোন পর্বতপ্রেমীর ছেলেমানুষী কোন কিছু দিয়েই তুলনা করা যাবে না। সেই পর্বতপ্রেমীদের জন্যই সাজেক ভ্যালির এই ভ্রমণ গাইড

সাজেক ভ্যালির প্রাকৃতিক নৈসর্গ

লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলী স্রোতকে অনুসরণ করে এগোলে দেখা মিলবে সাজেক নদীর। আর সেই সাথে হৃদয়ঙ্গম হবে নৈসর্গিক এই উপত্যকার নামকরণের সার্থকতা। চান্দের গাড়ি চড়ে পাহাড়ী রাস্তা ধরে এগোনোর সময় আদিবাসী শিশুদের সঙ্গে স্বাগতম জানাবে পাহাড়ের ঢালের সবুজ বন। প্রবেশদ্বারের রুইলুইপাড়া থেকে সাজেকের শেষ প্রান্ত কংলাকপাড়ার মাঝে চোখ জুড়াবে উপত্যকা গ্রাম, হাজাছড়া ঝর্ণা, কমলক ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও বনবিহার আর দুরের নিস্তব্ধ নীলিমা। বিজিবি ক্যাম্পের হেলিপ্যাড থেকে মেঘের সমুদ্রে প্লাবিত সূর্যোদয়ের দৃশ্য যে কোন সতর্ক দৃষ্টিকে ভুলিয়ে দিবে যে সে দাড়িয়ে আছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্পে। সূর্যাস্তের সময় আবার সেই রাজকীয় অগ্নিকুণ্ডের আত্মবিসর্জনে পুরো সাজেককে মনে হবে এক অপার্থিব তোরণ। রাতের আকাশে কোটি তারার লন্ঠন ছায়াপথ জুড়ে জমিয়ে রাখা মহাজাগতিক চলচ্চিত্রের বায়োস্কোপ দেখাবে।

মধ্য আগস্টের সকাল থেকে শুরু করে প্রথম নভেম্বরের প্রথম কুয়াশা; যে কোন দিন হতে পারে পর্বতপ্রেমীদের জন্য এমন স্বপ্নের দিন।

ঢাকা থেকে প্রথমেই চলে আসতে হবে খাগড়াছড়ি। ঢাকার গাবতলী, কলাবাগান, ফকিরাপুল এবং সায়েদাবাদ থেকে খাগড়াছড়িগামী ননএসি বাসগুলোতে ভাড়া পড়বে ৬২০ থেকে ৭০০ টাকা এবং এসি বাসগুলো নিবে এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা।

খাগড়াছড়ি নেমে শাপলা চত্বর থেকে পাওয়া যাবে সাজেকে যাওয়ার চান্দের গাড়ি বা জীপ গাড়িগুলো। এগুলোতে যাত্রী ধরে সর্বোচ্চ ১৫ জন। ছোট দলের পর্যটকরা সাধারণত বড় দলগুলোর সাথে একত্রিত হয়ে পুরো গাড়ি রিজার্ভ করে নেয়। এছাড়া জীপ সমিতির অফিস ২ থেকে ৩ জনের গ্রুপকে বড় গ্রুপের সাথে চান্দের গাড়িতে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করে দেয়। শাপলা চত্বর থেকে সাজেক যেয়ে আসতে দুই দিনের জন্য ভাড়া পড়বে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।

এছাড়া খাগড়াছড়ি থেকে বাসে বা মোটর বাইকে দীঘিনালা হয়ে সাজেকের পথ ধরা যায়। বাস ভাড়া ৪৫ টাকা আর মোটর বাইক ১০০ টাকা করে নিতে পারে।

দীঘিনালাতে পৌঁছতে হবে অবশ্যই সকাল সাড়ে ৯টা অথবা দুপুর আড়াইটার মধ্যে কারণ, এরপর থেকে সেনাবাহিনীর এসকর্টে সাজেক যেতে হয়। আর এই দুই সময়েই সেনাবাহিনীর এসকর্ট থাকে। একটি সময় মিস করলে আরেকটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া সাজেকে যাওয়ার অনুমতি মেলে না। পুরো জার্নিতে সময় লাগে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা।

সাজেকে রাত্রিযাপন

পর্যটন এলাকা হওয়াতে এখানে প্রচুর হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন ক্যাটেগরির ভিত্তিতে এগুলোতে খরচ মাথাপিছু ১৫০০ থেকে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত নেয়। এছাড়া আদিবাসীদের সাথে কথা বলে তাদের কটেজে থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

সাজেক ভ্রমণে খাওয়া-দাওয়া

জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা হওয়ার কারণে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে এখানে কোন ঝামেলা নেই। জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে একবেলার আহার সেরে নেয়া যায়। প্রতিটি রিসোর্টেই আছে বারবিকিউয়ের ব্যবস্থা। এছাড়া আগে থেকে বলে রাখলে পছন্দসই খাবার তৈরি করিয়ে নেয়া যাবে।

পরিশেষে

সাজেক ভ্রমণে কিছু বিষয় মনে না রাখলেই নয়। এখানে আসার সময় অবশ্যই সাথে পাওয়ার ব্যাংক রাখা বাঞ্ছনীয় কারণ এখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে মার্জিত আচরণের পাশাপাশি তাদের প্রথা ও কাজ-কর্মের প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর ভিড় হয় তাই আগে থেকেই হোটেল রুম বুকিং দেয়াটা উত্তম। ভ্রমণ পথে বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টের সম্মুখীন হতে হয়। তাই জাতীয় পরিচয় পত্র সঙ্গে রাখা আবশ্যক। সর্বোপরি, পর্যটন এলাকার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা প্রত্যেক দর্শনার্থীর নৈতিক দায়িত্ব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com