ইতালির রাজধানী রোম শহর হাজার হাজার বছর ধরেই বিখ্যাত। প্রায় ২৮০০ বছর আগে গোড়াপত্তন হওয়া এ শহর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতার পীঠস্থান হিসেবে দেখা হয় রোমকে। কলোসিয়াম, প্যানথিয়ন সহ রোমের ঐতিহাসিক সব স্থাপনা দেখতে প্রতি বছরই লক্ষ লক্ষ পর্যটক যায় রোমে। আর সরকারের মতে এত এত সব পর্যটকের চাপে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রোমের পরিবেশ ও স্থাপনাগুলো। তাই এইসব পর্যটকের আচার-আচরন নিয়ন্ত্রণ করতেই সরকার নতুন সব উদ্ভট নিয়ম-কানুন চালু করেছে।
নতুন এসব নিয়মের মধ্যে তাদের জন্য শাস্তি রয়েছে যারা রোমের প্রচন্ড গরম সহ্য করতে না পেরে, রোমে ছড়িয়ে থাকা ফোয়ারাগুলোর কোনো একটায় ঝাঁপিয়ে পড়ে একটু ঠান্ডা হবেন বলে। তবে শুধু তাই নয়, পুরুষরা এখন থেকে খালি গায়ে প্রকাশ্যে ঘুরতে পারবেন না। ভালবাসার সম্পর্কের দীর্ঘায়ু কামনা করে অনেকেই বিভিন্ন জায়গার বেড়ায় তালা লাগিয়ে রাখত, যা অনেক দিন থেকে চলে আসা রোমের একটি কুসংস্কার প্রথা। এখন থেকে এটিও বেআইনী। পূর্বে লাগানো তালাগুলোও অনেক জায়গা থেকেই খুলে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ। তবে যাদের লাগানো তালা খুলে ফেলা হয়েছে, তাদের ভালবাসার সম্পর্কের পরিনতি সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি এখন পর্যন্ত।
খাওয়ার ওপরও আরোপ করা হয়েছে বিধি-নিষেধ। আশপাশ নোংরা করতে পারে এমন খাবার খাওয়া যাবে না প্রকাশ্য স্থানে। অর্থাৎ রাস্তার ধারে বসে আর আইসক্রিম খেতে পারবে না কেউ, কেননা তাতে আইসক্রিম গলে রাস্তায় পড়ে নোংরা হবার সম্ভাবনা থাকে।
রোমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ‘নাসোনি’ নামক পানযোগ্য পানির ফোয়ারা। সেখান থেকে জনসাধারন পানি পান করতে পারে বিনামূল্যে। কিন্তু সেই সাধারন পানি খাওয়ার মত কাজেও নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। পানি খাওয়ার সময় কোনভাবেই পানির নলে মুখ লাগানো যাবে না। বরং হাতের সাহায্যে মুখ না লাগিয়েই খেতে হবে পানি। নাহলেই থাকছে জরিমানা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
নিয়মের খড়্গ যে শুধু পর্যটক সংশ্লিষ্ট, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। রোমের অধিবাসীরা এখন থেকে আর বারান্দায় বা খোলা জায়গায় দড়ি টাঙিয়ে কাপড় শুকাতে দিতে পারবেন না। তাতে সৌন্দর্য নষ্ট হয়, এমনটাই দাবি কর্তৃপক্ষের। প্রকাশ্য স্থানে গান-বাজনাও করা যাবে না। অর্থাৎ মনের খুশিতে রাস্তায় গান করলে, বা বাদ্যযন্ত্র বাজালেও গুনতে হতে পারে জরিমানা।
ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে চাকাওয়ালা সুটকেস নিয়েও যাতায়াত করা যাবে না এখন থেকে।
তবে, এসব নিয়ম লঙ্ঘন করলে কত জরিমানা হবে অথবা কি শাস্তি পেতে হবে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও পরিষ্কার করে কিছু জানায়নি। তবে এতটুকু জানানো হয়েছে যে, ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে পুলিশ নিয়মিত পাহারায় থাকবে। সেসব স্থানে যেসব পর্যটক যথাযথ নিয়ম মানবেন না, তাদের সাময়িকভাবে সেসব এলাকায় যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হবে।