শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

রোজায় ওমরাহ যাত্রীদের প্লেনভাড়া বেড়েছে ৪০ হাজার টাকা

  • আপডেট সময় রবিবার, ১০ মার্চ, ২০২৪

রমজান মাসজুড়ে ঢাকা থেকে সৌদি আরবের সব রুটে প্লেন ভাড়া দেড় থেকে দুই গুণ বাড়ানো হয়েছে। প্লেনের ভাড়া বাড়ায় ওমরাহ যাত্রীদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি সূত্রে জানা গেছে, ওমরাহ যাত্রীরা সাধারণত সৌদি আরবের জেদ্দা ও মদিনা শহরে যান। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের এই দুই রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে কেবল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সাউদিয়া)। এই রুটে স্বাভাবিক সময়ে বিমানের রিটার্ন ভাড়া ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। একই ভাড়া থাকে সাউদিয়ারও। তবে এই মুহূর্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেদ্দা রুটের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা এবং মদিনা রুটের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। জেদ্দা ও মদিনা রুটে সৌদি এয়ারলাইন্স নিচ্ছে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিমান ও সাউদিয়া টিকিট প্রতি ৪০-৪৫ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছে।

অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, এই মৌসুমে এটাই স্বাভাবিক ভাড়া। প্রতিবছর রোজায় ওমরাহ হজযাত্রীদের সংখ্যা বাড়ে। সেই তুলনায় ফ্লাইট সংখ্যা না বাড়ায় প্লেনের ভাড়া বাড়তি থাকে।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব কমার পর থেকে ওমরাহ যাত্রীদের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে মূল হজের প্যাকেজ খরচ বেড়ে যায়। তখন থেকে অনেকে হজ করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে কম খরচে ওমরাহ হজ করার সিদ্ধান্ত নেন। অতিরিক্ত সওয়াবের আশায় তারা রমজান মাসকে বেছে নেন। এ কারণে এ মাসে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। বিপরীতে পর্যাপ্ত টিকিট পাওয়া যায় না।

ভাড়া বাড়িয়েছে থার্ড ক্যারিয়ারগুলো

বিমান বাংলাদেশ ও সাউদিয়া ছাড়াও ১১টির মতো এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নিয়ে নিজ দেশে ট্রানজিট দিয়ে সৌদি আরবে ওমরাহ যাত্রী পৌঁছে দেয়। ট্রানজিট ও যাত্রার লম্বা সময়ের কারণে এসব ফ্লাইটের ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তবে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে তারাও ফ্লাইটের দাম দেড় থেকে দুই গুণ বৃদ্ধি করেছে।

বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে এয়ার অ্যারাবিয়া এয়ারলাইন্স, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, ফ্লাই দুবাই, গালফ এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ, কাতার এয়ারওয়েজ, এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্তারা এয়ারলাইন্স, ওমান এয়ার এবং সালাম এয়ার ওমরাহ যাত্রী বহন করে।

dhakapost

এয়ার ইন্ডিয়া ও ভিস্তারা এয়ারলাইন্স স্বাভাবিক সময়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায় যাত্রী বহন করত। রমজানে এয়ার ইন্ডিয়া ভারতে ট্রানজিট দিয়ে ভাড়া ধরেছে ৯০ হাজার টাকা, অপরদিকে ভিস্তারা এয়ারলাইন্স ৯৭ হাজার টাকা। একইভাবে ওমান ও সালাম এয়ার ৬৫ হাজার টাকার ভাড়া ৯৬ হাজার টাকা নিচ্ছে। এমিরেটস এয়ারলাইন্স ১ লাখ ৬ হাজার এবং গালফ এয়ার ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছে।

এ বিষয়ে একাধিক এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিমানের একজন কর্মকর্তা বলছেন, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতিবছরই রমজানে এমনটি হয়।

অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ ধর্মপ্রাণ মানুষ রমজান মাসে ওমরাহ পালনে যেতে চান। এয়ারলাইন্সগুলো এই সুযোগে তাদের বেসিক ইকোনমি ক্লাসের টিকিটগুলো বিক্রি বন্ধ করে অতিরিক্ত দাম ধরে ইকোনমি ফ্লেক্সি এবং ইকোনমি প্রিমিয়াম ক্লাসের দাম নিচ্ছে। প্রতিবছরই এমন হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ারলাইন্সগুলোর অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এয়ারলাইন্সের কমার্শিয়াল ফ্লাইটগুলো দেখার কোনো এখতিয়ার আমাদের নেই। এছাড়া খুব ডায়নামিক প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণ করে তারা। যখন চাহিদা বাড়ে ও ক্যাপাসিটি কম থাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম বাড়ায়। ওমরাহতে অনেকেই সৌদি আরব যায়, সেসময় শুধু এয়ারলাইন্স নয়, মক্কা-মদিনায় হোটেলের দামও অনেকগুণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি তেলের দাম ও ডলারের দরবৃদ্ধির কারণে ভাড়া একটু বেশি আছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী ফ্লাইটের সিট না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ভাড়া বাড়ে। বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনাকারীরা যাত্রীর চাহিদা দেখে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশীয় এয়ারলাইন্সের সম্প্রসারণ দরকার, তাদের ফ্লাইট বৃদ্ধি করা দরকার।

তিনি বলেন, যখন দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট বাড়িয়ে বেশি যাত্রী বহন করবে তখন জোগানটা বাড়বে। তখন আর ভাড়া অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে না। এখন যেহেতু ফ্লাইট কম তাই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো।

২০২৩ সালে রমজান মৌসুমে প্রায় ১ কোটির বেশি মুসল্লি ওমরাহ করতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে সৌদি আরব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com