সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ১৫ নভেম্বর থেকে দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে রাসপূজা। দুইশ’ বছর ধরে এখানে কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রাসপূজা ও পুণ্যস্নানে অংশ নিচ্ছেন। এ উপলক্ষে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে রাতযাপন করলে পাবেন ৩০ শতাংশ থেকে হোটেলভেদে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএ মোতালেব শরীফ জানান, গত সপ্তাহ থেকে কুয়াকাটায় পর্যটক আসা বাড়ছে। আসন্ন রাসপূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নানকে সামনে রেখে এই ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস উৎসবকে সামনে রেখে শ্রী শ্রী রাধাকৃঞ্চ মন্দিরে প্রতিমায় রঙতুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। মেলায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাসমান দোকানিরা মেলার সামগ্রী নিয়ে কুয়াকাটায় আসতে শুরু করেছেন। প্রতি বছরে এ মেলায় বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়। এ বছরও লক্ষাধিক পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে আশা করছেন আয়োজকরা।
হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাসান সাইদ বলেন, ‘রাসপূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসতে আগ্রহী পুণ্যার্থীরা ফোনে খোঁজখবর নিচ্ছেন। পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য আবাসিক হোটেলে ৩০-৫০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাসপূজা ও মেলায় আসা প্রশাসনের ব্যক্তিদের জন্য প্রতিটি হোটেলে দুটি করে রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পূজা ও মেলার আয়োজকদের জন্যও আমরা রুম বরাদ্দ দিয়েছি।’
এর আগে রাসপূজা ও রাসমেলা উদযাপন উপলক্ষে সোমবার কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রস্তুতিমূলক সভা। সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদের সভা কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, কলাপাড়া সেনাক্যাম্প কমান্ডার শাবাব এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী হুমায়ুন সিকদারসহ রাস উদযাপন কমিটি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আবাসিক হোটেল সী-গোল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আল-আমিন মুসুল্লি বলেন, ‘উৎসবকে ঘিরে মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বেশি আসেন। তবে রাত্রিযাপন করা লোকজন তেমন আসেন না। তাই আমরা পর্যটক টানতে হোটেলে ছাড় দিয়েছি।’
আবাসিক হোটেল বেস্ট সাউদার্নের জেনারেল ম্যানেজার আবুল কালাম বলেন, আমরা আমাদের হোটেলে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছি। রাস পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ রুম অগ্রীম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি বাকীরুমগুলো বুকিং হবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার হাবীবুর রহমান বলেন, ‘রাসপূজা ও মেলায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমাদের পাশাপাশি পুলিশ, র্যাবসহ সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক মোতায়েন থাকবে।’
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আগত ভক্তবৃন্দ যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন সে জন্য সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি মেডিক্যাল টিম রাখা হবে।’
তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আরও বলেন, ‘শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আয়োজন করতে যা যা করা দরকার, সব করা হবে।’