কখনো ক্রোকোডাইল আইল্যান্ড সিনেমা দেখেছেন? যেখানে দেখানো হয়েছিল প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে একটি দ্বীপে অনেকের আটকে পড়ার গল্প! আর সেই দ্বীপের জলাশয়ে বাস করত ভয়ানক সব কুমির। অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবেই রয়েছে এমনটি একটি দ্বীপ।
মায়ানমারের বৃহত্তম দ্বীপ রামরি। বার্মিজ ভাষায় এটি ইয়ানবাই দ্বীপ নামে পরিচিত। রাখাইন রাজ্যের উপকূলের অবস্থান। দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৩৫০ বর্গ কিলোমিটার। এটি মূলত কুমিরের দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। আর এই দ্বীপের কুমিরকে নিয়ে রয়েছে লোহমর্ষক ঘটনা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রামরি দ্বীপ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। কিন্তু সত্যিকারের যুদ্ধ শুরু হয় তখন যখন জাপানি সেনারে যুদ্ধে হেরে পিছু হটে। ১৯৪৫ সালের ২৬ জানুয়ারি ব্রিটিশ সৈন্যরা রামরি দ্বীপে যাওয়ার উদ্যোগ নেয় যাতে তারা নতুন বিমানঘাঁটি স্থাপন করতে পারে। প্রথমে ব্রিটিশ সৈন্যরা জাপানি সামরিক বাহিনীকে আক্রমণ করে যারা এরই মধ্যে দ্বীপটি নিজেদের দাবি করেছিল।
জাপানিদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সফল অভিযানের পর, ব্রিটিশরা ১০০০ শত্রু যোদ্ধাকে পিছু হটতে বাধ্য করে। তখন জাপানি সৈন্যরা রামরির প্রায় দশ মাইল জুড়ে বিস্তৃত ঘন ম্যানগ্রোভ বনভূমির জলাশয়ের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু জাপানি সৈন্যরা জানতো না তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে সেখানে।
ম্যানগ্রোভ বনভূমির চারপাশ জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ছোট-বড় জলাশয় ছিল। যেখানে বাস করত ভয়ংকর সরীসৃপ প্রাণী কুমির। শোনা যায়, এই কুমিরগুলোর দৈর্ঘ্য ২৩ ফুটের বেশি ছিল। কোনো কোনো কুমিরের ওজন এক টনের বেশি, যা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে হত্যা করার জন্য যথেষ্ট।
তাই সৈন্যরা যখন রামরির গভীর ম্যানগ্রোভের জলাভূমির সীমানায় আশ্রয় নেয়, তখন দৈত্যাকার টিকটিকি জাপানি সৈন্যদের উপর আক্রমণ করে। কিছু জাপানি সেনারা কুমিরের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সেই দ্বীপ ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করে। তবে ততক্ষণে অনেকেই কুমিরের খাবারে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, মাত্র ২০ জন সৈন্যকে ব্রিটিশ বাহিনী পুনরুদ্ধার করেতে সক্ষম হয়। যারা বেঁচে ফিরেছেন তারা শুনিয়েছেন কয়েক ডজন কুমিরের একত্রে আক্রমণ করার ভয়ংকর গল্প। রাতে জন্তু-জানোয়ারের চিৎকার, গুলির শব্দ এবং কুমিরের আক্রমণের আতঙ্কে কাটত গোটাদিন।
রামরির ম্যানগ্রোভের গণহত্যার গল্পটি সে সময় অনেক পত্রিকায় উঠে এসেছিল। এমনকি কুমিরের আক্রমণে সর্বাধিক সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনাটি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নেয়। যদিও এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক মত বিরোধ রয়েছে। এরপর থেকে এই দ্বীপ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করতে শুরু করে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কুমিরের সংখ্যা এখন কমছে।
সূত্র: অ্যাটলাস অবসকিউরা