সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন

যে গ্রামটিকে স্পর্শ করতে পারে না সরকারি আইন, চলে নিজস্ব অর্থনীতিতে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩

আমরা সবাই রাজা….। হ্যাঁ, এই গ্রামটিতে গেলে আপনার এই গানটিই প্রথমে মনে আসবে। এই গ্রামে সবাই রাজা। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কোনও আইন এই গ্রামটিকে স্পর্শ করতে পারে না। এসবের বাইরে একটি আলাদা অর্থনীতি, আলাদা আইনশৃঙ্খলা এবং আলাদা সমাজনীতি তৈরি করে ফেলেছে গ্রামটি। যা রীতিমতো তাক লাগানোর বিষয়।

উপরের এই কথাগুলো বলা হলো ভারতের মহারাষ্ট্রের গাডচিরিলি জেলার মেন্ডা লেখা গ্রামটি নিয়ে।

মহারাষ্ট্রের এই গ্রামটি দেশের অন্য প্রান্তের মতো কেন্দ্রীয় আইন মেনে চলে না। এদের সব দণ্ডমুন্ডের কর্তা এখানকার গ্রাম সভা। গ্রামের প্রত্যেক বাসিন্দা মহারাষ্ট্র গ্রাম দান আইনের মাধ্যমে নিজেদের সব সম্পত্তি গ্রাম সভাকে দান করে দিয়েছেন। মেন্ডা লেখা গ্রামে মোট ১০৪টি পরিবার আছে। মোট জনসংখ্যা ৪৮০ জন। মূলত গোন্ড উপজাতির মানুষের বাস এই গ্রামে।

এই উপজাতিটি বিচ্ছিন্ন জমির মালিকানায় বিশ্বাসই করে না। তাদের মতে, জমির ব্যক্তিগত মালিকানা থাকলে তা বহিরাগতরা সহজে কিনে ফেলতে পারবে। ফলে আদিবাসী অধ্যূষিত গ্রামে বহিরাগতরা ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।

গ্রাম দান আইন অনুযায়ী এই গ্রামের অর্থনীতি এখন নিয়ন্ত্রিত হয় গ্রাম সভার মাধ্যমে। গ্রামের সম্পদ জমা হয় গ্রামসভার হাতে। তারাই গ্রামবাসীদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেন। মেন্ডা লেখা গ্রামে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাও কার্যত অচল। এই গ্রাম থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও প্রতিনিধি যান না। সবটাই হয় গ্রাম সভার মাধ্যমে।

প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ গ্রামটি আর্থিক দিক থেকেও স্বচ্ছ্বল। অরণ্যের অধিকার আইন অনুযায়ী আদিবাসী অধ্যূষিত গ্রামটি নিকটবর্তী জঙ্গলের সম্পদ সংগ্রহ করতে পারে।

গ্রামটির আশেপাশে প্রায় ৩০০ একর জমি জুড়ে রয়েছে বাঁশ বাগান। বছরে প্রায় এক কোটি টাকার বাঁশ বিক্রি হয়। যার স্বত্ত্ব পায় গ্রাম সভা অর্থাৎ পরোক্ষভাবে গ্রামবাসীরা। বাঁশ বিক্রির টাকা গ্রামবাসীদের মধ্যেই বিলিয়ে দেয় গ্রামসভা। স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বাঁশের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরির। গ্রামবাসীরা নিজেদের রোজগারের ১০ শতাংশ গ্রামসভায় দান করেন, যা পরবর্তীকালে সমস্যার সময় তাদেরই ঋণ হিসেবে দেওয়া হয় বিনা সুদে।

আর্থিক স্বচ্ছ্বলতার পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিক থেকেও স্বতন্ত্র এই গ্রামটি। এই গ্রামের বেশ কিছু নিজস্ব আইন আছে। তবে ফৌজদারি মামলায় তারা হস্তক্ষেপ করে না। গোটা গ্রামের সম্পত্তি এক জায়গায় থাকার ফলে গ্রামটি একটি পরিবারের মতো। ফলে সামাজিক অশান্তিও তেমন নেই বললেই চলে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com